শিকারীদের অভয়রান্যে পরিণত হয়েছে রাতারগুল : বিষ ঢেলে মাছলুট
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেটের জলারণ্য রাতারগুলে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার রাতে দুর্বৃত্তরা রাতারগুল জলারবনের ভেতর দিয়ে প্রবাহমান খইয়ার খালে বিষ প্রয়োগে মাছসহ নানা ধরনের জলজ প্রাণী হত্যা করে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীরা। তবে এ ব্যাপারে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে পরিবেশকর্মীরা মাছ শিকারের সাথে বনবিভাগের কর্মকর্তারাও সম্পৃক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। এর আগে ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের মুখে খইয়ার খালের ইজারা বাতিল করে বন বিভাগ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে বিষ ঢেলে মাছ শিকারের খবর পেয়ে রবিবার সকালে আমি রাতারগুল এলাকায় যাই। সেখানে গিয়ে দেখি মাছের গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বিষ প্রয়োগের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, সাপ ব্যাঙ, কাঁকড়া আধমরা হয়ে ভেসে পানিতে ভেসে ওঠেছে।
কিম বলেন, আমি রাতারগুলে গিয়ে দেখতে পাই প্রায় তিন শতাধিক মানুষ ‘পোলো উৎসব’-এর মত দল বেঁধে মাছ সংগ্রহ করছে। গ্রামবাসীরা স্থানে স্থানে অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করে বিভিন্ন প্রকার সরঞ্জাম ব্যাবহার করে দিনব্যাপী মাছ সংগ্রহের ‘হরিলূটে’ অংশ নেয় । আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকেও সারাদিন মাছ সংগ্রহ করতে খইয়ার খালে মানুষের ঢল নামে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তুলনামুলক বড় মাছগুলো দুর্বৃত্তরা রাতেই সংগ্রহ করে নিয়েছে। এখন ছোট মাছগুলো মরে ভেসে উঠছে। সে সব মাছ সংগ্রহ করতে গ্রামবাসীদের অনেকে জড়ো হয়েছেন।
রাতারগুল এলাকার বাসিন্দা সোনা মিয়া বলেন, শনিবার রাতে কে বা কারা রাতরগুলের ভেতরে খইয়ার খালের বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করে নিয়ে যায়। রবিবার সকালে আমরা বিষয়টি আমাদের চোখে পড়ে আমরা বনবিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করি। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।
তিনি বলেন, বিষ প্রয়োগে মাছসহ নানা ধরণের প্রাণি মারা গেছে। এগুলো পচে রাতারগুল বনের ভেতরে এখন দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে অবস্থিত রাতারগুল বাংলাদেশের সমৃদ্ধ জলার বন (সোয়াম্প ফরেস্ট)। যা ১৯৭৩ সালে সংরক্ষিত ঘোষণা করে বন বিভাগ । নদী ও হাওরবেষ্ঠিত ৫০৪ দশমিক ৫০ একর আয়তনের এ এলাকায় ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, বিশ্রামাগারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ সমাপ্ত করে বন বিভাগ। বন বিভাগের ওয়েব সাইটে বলা আছে, ‘রাতারগুল দেশের দৃষ্টিনন্দন জলাভূমির বন। এ বনাঞ্চল মাছের আবাসস্থলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ ।
এ ব্যাপারে সিলেট বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশ’র সমন্বয়ক আশরাফুল কবির বলেন, রাতারগুল এখন আর বণ্যপ্রাণীর অভয়রাণ্য নেই। এটি এখন শিকারীদের অভয়রান্যে পরিণত হয়েছে। লুটপাটের একটি ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাতারগুল।
বাপা’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, রাতারগুল জলারবনের প্রাণ বৈচিত্র্য যে ধ্বংসের শেষ সীমায় পৌঁছেছে তা সরকারের দায়িত্বশীল কোন ব্যাক্তিকে বোঝানো যাচ্ছে না। রাতারগুলকে সুরক্ষায় অভিলম্বে ‘সোয়াম্প ফরেস্ট’ আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এই বনের বৈশিষ্ঠ অক্ষুন রাখতে হলে মাছসহ জলজ প্রাণী হত্যা বন্ধ করতে হবে।