সিলেটে ট্রাফিক পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি
ফখরুল ইসলাম : সিলেটে ট্রাফিক পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ গাড়ি চালকগণ। ভারীযান থেকে শুরু করে ব্যাটারী চালিত রিক্সা চালকরাও রেহাই পাচ্ছে না অসাধু ট্রাফিক পুলিশের হাত থেকে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক পুঁলিশের প্রকাশ্যে চাদাঁবাজি এখন নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে বলে জানান ভোক্তভোগিরা । অভিযোগে প্রকাশ ,কাগজ দেখার নাম করে রিক্যুইজিশনের ভয় দেখিয়ে চাদাঁবাজি করেন ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবলরা । সুত্র জানায় ,কতিপয় অসাধু ট্রাফিক র্সাজেন্ট ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবলদের চাঁদাবাজিতে উৎসাহিত করেন। একাধিক প্রাইভেট গাড়ির মালিক ও ড্রাইভারদের অভিযোগ, নগর ট্রাফিকের পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম নগরীর সব পরিবহনের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে , দক্ষিন সুরমার হুমায়ূন রশীদ চত্বর ট্রাফিক পুলিশের চাদাঁবাজির মূল কেন্দ্র । এই চাদাঁবাজির শীর্ষে রয়েছেন সার্জেন্ট মামুন,নুরুল,হুসেন আলী,নাইম প্রমুখ। শুধু তাই নয় ,সার্জেন্টদের সাথে পালা দিয়ে সমান তালে চাদাঁবাজিতে জড়িয়ে পড়েছে কতিপয় অসাধু ট্রাফিক হাবিলদারসহ কনস্টেবলরা। এই সার্জেন্ট ও হাবিলদাররা দক্ষিন সুরমার হুমায়ূন রশীদ চত্বর , মালনীছড়া চা বাগান, সুবহানিঘাট পয়েন্ট , সাইফুর রহমান চত্বর ,পারাইরচর , আম্বরখানা , চৌহাট্টা পয়েন্ট , টিলাগড় ,রিকাবীবাজার ,হাউজিং স্ট্রেট ,তেমুখী বাইপাস,বন্দর পয়েন্ট সহ অন্তত ২০টি পয়েন্টে কর্তব্যরত অবস্থায় একাধিক যানবাহন থেকে অবৈধ ফায়দা আদায় করতে ‘রেকারম্যান’দের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। গতকাল সরজমিন ঘুরে দেখা যায় সার্জেন্ট নিখিলের নেতৃত্বে আম্বরখানায় ট্রাক থেকে শুরু করে অটোরিকশা পর্যন্ত আটক করে রিক্যুইজেশন এবং মামলার ভয় দেখিয়ে চালক ও মালিকদের কাছ থেকে অবৈধ ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন । একইভাবে পুরো নগরীতে প্রতিদিন শত শত গাড়ির কাছ থেকে অবৈধ ফায়দা হাসিল করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সার্জেন্ট নিখিল আম্বরখানা পয়েন্টে থাকলেই ডিউটির চিন্তা না করে ফায়দা লুটতে ব্যাস্ত থাকেন । গ্রাম গঞ্জ থেকে আসা সিএনজি ,লেগুনা, ট্রাক গাড়ির ড্রাইভারদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা থেকে ১০০০টাকা আদায়ে করেন। গোয়াইনঘাটের সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক সেলিম আহমদ জানান, ট্রাফিক পুলিঁশের চাঁদাবাজিতে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। তাদের কথামত উৎকোচ না দিলে কারণে অকারণে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। ট্রাক চালক রহিম উদ্দিন জানান, ট্রাফিক পুলিশের চাদাঁবাজী ইদানিং বৃদ্ধি পেয়েছে । সারা দিন শহরের বাহিরে ট্রাক রেখে সন্ধার পর নগরীতে প্রবেশের সাথে সাথে ট্রাফিক পুলিশকে প্রতিটি পয়েন্টে পয়েন্টে উৎকোচ দিতে হয়। নতুবা খালি গাড়ি হলে ‘রিকুইজিশন’ আর মালবাহী হলে ‘অভার লোড’ বলে মামলার ভয় দেখিয়ে উৎকোচ দিতে বাধ্য করা হয়। অভিযোগে জানা গেছে , ট্রাফিকের অঘোষিত ‘ক্যাশিয়ার’ এর দায়িত্ব পালন করছেন র্যাকার বিল্লাল। তিনি নগরীর প্রতিটি অবৈধ লেগুনা স্ট্যান্ড,এ্যম্বোলেন্স স্ট্যান্ড,কার ও লাইটেস স্ট্যান্ড, সিএনজি স্ট্যান্ড ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড ছাড়াও রিকশা গ্যারেজ থেকে মাসোয়ারা আদায় করছেন। এছাড়া র্যাকার বিল্লাল আম্বরখানা থেকে সিএনজি অটোরিক্সা আটক করে পুলিশ ল্যাইন ঢুকানোর ভয় দেখিয়ে মিরের ময়দানের পাশে নিয়ে উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেয়। বিশেষ করে হুমায়ূন রশীদ চত্বর ও আম্বরখানা পয়েন্ট হচ্ছে অবৈধ ফায়দা হাসিলের মূল কেন্দ্র বিন্দু । সমপ্রতি ট্রাফিকের রেকার বানিজ্য জমজমাট হয়ে উঠেছে। যে কোন গাড়ি আটকের পর গাড়ির চালক দিয়ে গাড়িটি চালিয়ে পুলিশ লাইনে নেওয়া হলেও গাড়ি ছাড়ার সময় অবৈধভাবে রেকার বিল নেয়া হয়। আর এসব রেকার বিল সরকারী কোষাগারেও জমা হয়না এমনটা দাবী চালকদের। এছাড়া প্রাইভেট কার বা মাইক্রো রিকুইজেশনের উপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এরপরেও প্রতিদিনই রিকুইজেশন করা হচ্ছে প্রাইভেট গাড়ি। নগরীতে অসংখ্য রিক্সা একই নাম্বার প্লেইটে একাধিক রিক্সা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে কোন অভিযান হয়নি। তেমনি ভাবে ইজিবাইক নামক যানবাহনও চলছে রয়েছে একাধিক পে¬ইটে। সংশি¬ষ্ট সুত্র জানিয়েছে, রিক্সা ও ইজি বাইক মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায় করেন ট্রাফিক পুলিশের কতিপয় সার্জেন্ট ও ট্রাফিক ইন্সপেক্টর।
এদিকে বিভিন্ন অপরাধে রেকার দিয়ে টেনে যানবাহন লাইনে ঢুকানো হয়। তবে যত বড় অপরাধ থাকুক ৪/৫ হাজার টাকা দিলে সে ১৩৭ ধারায় মামলা দিয়ে গাড়ি বের করে দেয়া হয়- এমন অভিযোগ রয়েছে নগর ট্রাফিকের পরিদর্শক শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা ঢুকছে তার পকেটে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি ( ট্রাফিক) নিকোলিন চাকমা বলেন, টাকা পয়সার লেনদেনের অভিযোগ সম্পর্কে দৃষ্টিপাত করলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। ইজিবাইক ও রিক্সা বানিজ্য প্রসঙ্গে নিকোলিন চাকমা বলেন, অবৈধ ইজিবাইক প্রতিদিনই লাইনে ঢুকানো হচ্ছে।