সহায়তা পেল না ট্রাকচালক বকুলের পরিবার : শ্রমিক লীগ নেতার পরিবার পেল ১০ লাখ টাকা

Bakul-Devnathইয়াহইয়া মারুফঃ চলামান অবরোধ, হরতাল আর নাশকতায় সিলেটে নিহতের সংখ্যা দুই। একজন বকুল দেবনাথ। পেট্রলবোমা হামলায় নিহত হন। অপরজন শ্রমিক লীগ নেতা শাহজাহান। তিনি নাশকতাকারীদের ধাওয়া খেয়ে ট্রাক তার সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠে পড়ে। দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি। এ দুই পরিবারের মধ্যে সরকারি অর্থ সহায়তা মেলেছে শ্রমিক লীগ নেতার পরিবারের। ট্রাকচালক বকুলের পরিবার পায়নি সহায়তা।
বকুল দেবনাথ নিজ পরিবার ও চাচা মনোরঞ্জন দেবনাথের পরিবারের একমাত্র ভরসা ছিলেন। পেশাগত কাজে বের হয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটে হরতাল-অবরোধের বলি হন। রাতের আধাঁরে বকুলের চলন্ত ট্রাকে নিক্ষেপ করা হয় পেট্রলবোমা। দগ্ধহন বকুল দেবনাথ। প্রথমে নিয়ে আসা হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসায় বকুলে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায়। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয় ঢাকা মেডিকেলে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বকুল।
Bakulপরিবার সুত্রে জানাযায়, বকুলের এই অস্বাভাবিক মৃত্যুতে পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। বকুলের অকাল প্রয়ানে পরিবারের থাকা। অন্য সদস্যদের জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। হাতাশা আর শোক বেদনায় বিভোর বকুলের আদরের ৫ বছরের শিশুসন্তান নিলয় দেবনাথ। প্রায় সাত মাস ধরে অন্তঃসত্তা স্ত্রী নিলিমা দেবনাথ(৩০), বড় ভাই সামান্য কাচামাল ব্যবসায়ী রন্টু দেবনাথ(৩৯), পরম আদরের জেটাকে হারিয়ে রন্টুর তিন মেয়ে, স্ত্রী ও চাচা মনোরঞ্জনের পরিবার। তার এই অপমৃত্যুকে সহজে মেনে নিতে পারছেন না তারা। রাজনীতি নামক এক র্ববর হিংস্রতা কেড়ে নিল দুই পরিবারের সুখ ও স্ত্রী নিলিমার গর্ভে সন্তানের দুনিয়াতে এসে বাবার মুখ দেখা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী। নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় সকল পরিবার আর্থিক সহযোগিতা পেলেও। বকুলের পরিবারে ভাগ্যে ঝুটেনি সেই সহযোগিতা। সিলেট জেলা প্রশাসকের দেওয়া মাত্র পঁচিশ হাজার টাকা বকুলে আর্থিক সহযোগিতা!
পরিবার জানায়, ট্রাক চালিয়ে বকুলের পরিবারে চলে। বকুলের বড় ভাই রন্টু কাঁচামালের ব্যবসা করেন। এক ছেলের জনক বকুল স্ত্রী নিলিমা দেবনাথ অন্তঃসত্তা । বাড়ি তাদের গোয়ালাবাজারের শশারকান্দি গ্রামে। এক আত্মীয়র ট্রাক চালাতেন বকুল। আগুনে ট্রাকের ক্ষতির চেয়ে বকুলের ক্ষতিতে মুষড়ে পড়েছে পরিবার। একমাত্র উপার্জনকারী বকুল নিহত হওয়ার পর থেকেই পরিবারে নেমে আসছে অভাব-অনটন। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে জীবন-যাপর। মানুষের সহযোগিতার উপর নির্ভরশীল বকুলের পরিবার। বড় ভাই রন্টু দেবনাথ যদিও কাচামালে ব্যবসা করতেন। কিন্তু বকুলের মৃত্যুর পর থেকেই এপর্যন্ত একদিনও ব্যবসায় যেতে পারেননি। কারণ নিজ স্ত্রী ক্যন্সাারে আক্রান্ত। বকুলে স্ত্রী অন্তঃসত্তা। এদের চিকিৎসা ও ভাতিজা নিলয়সহ নিজ মেয়েদের পড়া-লেখার দেখাশুনা করেই সময় যাচ্ছে বড় ভাই রন্টুর। চিকিৎসা আর ছেলে-মেয়েদের পড়া-লেখা চলছে মানুষের সহযোগিতা ও ঋণে। বকুল গাড়ি মেরামতের জন্য চাচা মনোরঞ্জনের কাছ থেকে নিয়েছিলেন এক লক্ষ টাকা। আত্বীয়ের ট্রাক চালাতেন বলে মাসে মাসে পেট্রলের বিল দিতেন। পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার মাসের বিল ছিল ৭৪ হাজার টাকা। বকুলের রেখে যাওয়া ঋণ আর নিহতের পর থেকে পরিবারের ঋণ সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষ্য টাকা। ঋণের চাপ ও দু স্ত্রীর চিকিৎসা, ছেলে-মেয়ের পড়া-লেখা ও পরিবারের খরচের বোঝা মাথায় নিয়ে। বড় রন্টু প্রায় পাগল পাড়া। আশা ছিল প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী। নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্থ অন্যান্র পরিবারের মত তারাও পাবেন সহযোগিতা। কিন্তু সবাই পেলেও বকুল নিহতের দুই অতিবাহিত হওয়ার পরও পরিবারে ভাগ্যে ঝুটেনি সেই সহযোগিতা। গত ১২ ফেব্রুয়ারী মাত্র পঁচিশ হাজার টাকা সিলেট জেলা প্রশাসক কতৃক সহযোগিতা প্রদান করা। এসময় জেলা প্রশাসক বলেন বকুলের সব ধরণের কাজ পত্র তাহার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পাঠানোর। সেই অনুযায়ী পরিবার সব ধরনের কাজ পত্র পাঠালেও। দুই মাস গত হয়ে যাওয়ার পরও মিলছেনা কোন সহযোগিতা। অতচ বকুলের পরে।
সিলেটের দক্ষিন সুরমার বদিকোনায় অবরোধকারীদের পেট্রলবোমায় নিহত উপজেলা শ্রমিকলীগ নেতা শাহজাহানের পরিবার। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দশ লক্ষ্য টাকার আর্থিক পায়। গত ১২ই ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রী নিজ কার্যালয় থেকে শাহজাহানের মা হেনা বেগমের কাছে চেক হস্তান্তর করেন। সেই থেকে সিলেটে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। আর বকুলের পরিবারে নেমেছে হতাশা।
নিহত ট্রাকচালক বকুল দেবনাথের বড় ভাই রন্টু দেবনাথ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা অমানবিক জীবন-যাপন করছি। আমার ভাইয়ের পরে নিহত হওয়া ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা পেয়েছে। আমরা এখনো না পাওয়ায় হতাশায় ভুগছি। অপরদিকে ঋণের চাপ মাথায় নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুড়ছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ আমার ভাইয়ের ৫বছরে ছেলেও অন্তঃসত্ত¡া স্ত্রীর কথা বিবেচনা করে আমাদের সহযোগিতা করার। তবে সিলেট জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, হতাশা হওয়ার কোন কারণ নাই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সহযোগিতা করবেন। নিশ্চয় তারাও সেটা পাবে। বকুলে কাজ পত্র পৌছেগেছে। যে কোন সময় টাকা আনার জন্য পরিবারকে ডাকা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২০শে জানয়ারী সারীঘাট থেকে সিলেটগামী একটি বালুবাহী ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-১৪-৬৭৩৯) বাঘের সড়ক নামক এলাকায় আসলে অবরোধ সমর্থকরা ব্যারিকেড সৃষ্টি করে ট্রাকে আগুন দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এসময় গাড়ীতে থাকা চালক বকুল পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। চলন্ত ট্রাকে পেট্রলবোমা ছুড়ে মারলে ট্রাকে আগুন ধরে যায়। বকুল অগ্নিদগ্ধ ট্রাক থেকে দ্রুত বের হতে গিয়ে বাঁ পায়ের হাড়ও ভেঙে যায়। আগুনে তার মুখ, চোখের একাংশ, কোমরের একাংশ ও হাতও পুড়ে যায়। প্রথমে নিয়ে আসা হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসায় বকুলে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায়। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয় ঢাকা মেডিকেলে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বকুল।