বিয়ের দাবি নিয়ে প্রেমিকের বাড়িতে ১১ দিন

images67সুরমা টাইমস ডেস্কঃ মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বহড়াবাড়ি গ্রামে বিয়ের দাবিতে ১১ দিন ধরে প্রেমিক মনির হোসেনের (২০) বাড়িতে অবস্থান করছেন নবম শ্রেণির এক ছাত্রী। এদিকে ওই স্কুলছাত্রীকে দেখেই প্রেমিক ও পরিবারের লোকজন সটকে পড়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মেয়ের অভিভাবকেরা বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করলেও মনিরসহ পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। মনিরের সঙ্গে বিয়ে না হলে আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন ওই স্কুলছাত্রী। প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান করায় মেয়েটির খাবার ব্যবস্থাসহ দেখভাল করছেন প্রতিবেশীরা।
ওই গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে মনির গাজীপুরের একটি পোশাক তৈরি কারখানায় কাজ করেন। আর পার্শ্ববর্তী তালুকনগর গ্রামের ওই মেয়েটি স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল বিভাগের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশীর শাড়ি কাপড় পরে ওই স্কুলছাত্রী মনিরের বাড়ির চৌচালা টিনের ঘরের বারান্দার চকিতে (কাঠের খাট জাতীয়) বসে আছেন। সাংবাদিক এসেছে শুনে এগিয়ে আসেন প্রতিবেশীরা। মনির ও তার পরিবারের কেউ বাড়িতে নেই। স্কুলছাত্রী ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঘটনার আদ্যোপান্ত নিয়ে কথা হয়।
এই প্রতিনিধিকে ওই স্কুলছাত্রী জানান, এক ভাই পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি ছোট। তিন বছর আগে তাদের বাবা মারা যাওয়ায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হলো ভাই। বোনদের বিয়ে হওয়ায় সংসারে এখন মা-ভাই ও ওই স্কুলছাত্রী ছাড়া কেউ নেউ।
তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে ওই ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে চার বছর আগে মনিরের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। বছর খানেক আগে বিয়ের আশ্বাসে মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়েন মনির।
এক বছর আগে মনির এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে গাজীপুরের একটি পোশাক তৈরির কারখানায় কাজ নেন। মোবাইল ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে ছুটিতে এসে মেয়েটির বাড়িতে গিয়েও শারীরিক মেলামেশা করতেন মনির।
গত রোজার ঈদের পর (তিন মাস আগে) মেয়েটিকে নিয়ে গাজীপুরের একটি পোশাক তৈরি কারখানায় হেলপার পদে কাজ দেন মনির। বিয়ে না করে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সেখানে বাসা নেন তারা।
সেখানে থাকার পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর মনিরের কথামতো বিয়ের দাবিতে বাড়িতে এসে উঠেন ওই স্কুলছাত্রী। এ পর্যন্ত মনির সঙ্গে তার দেখাও কথা হয়নি। বরং বাড়ির লোকজনও সটকে পড়েছেন। প্রতিবেশীরা কাপড় ও খাবার দিচ্ছেন।
মনিরের সঙ্গে বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত ওই বাড়িতেই অবস্থান করবেন বলে তিনি জানান। অন্যথায় আতœহত্যা করা ছাড়া অন্য কোন পথ নেই বলে হুমকি দেন ওই স্কুলছাত্রী।
প্রতিবেশী আনোয়ার হক ও মইনাল হক জানান, বিয়ের দাবিতে মেয়েটি বাড়িতে এসে উঠেছে। তা দেখে মনিরের বাড়ির লোকজন পালিয়েছে। মেয়েটির যদি কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে তাহলে দায়ী কে হবে?
এজন্য তাকে খাবার ও পরার কাপড় দেয়া হচ্ছে এবং চোখে চোখেও রাখা হচ্ছে। বিষয়টি দ্রুত সুষ্ঠু ও সঠিক সুরাহা চান তারা।
জানতে চাইলে মেয়েটির ভগ্নিপতি জানান, বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে। তারা সঠিক ব্যবস্থা করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
স্থানীয় কলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড মেম্বার নুরুল ইসলাম জানান, উভয় পরিবারের লোকজন নিয়ে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করলেও মনিরের পরিবারের কোনো সাড়া মেলেনি। তারা মেয়েটিকে বাড়ি রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এ ঘটনার সমাধান হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ ব্যাপারে শিবালয় সার্কেল এএসপি হারুণ-অর রশিদ জানান, মনিরের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হচ্ছে। মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।