মেজরটিলায় গৃহবধূকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যার চেষ্টা!
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সিলেটে যৌতুকের কারনে এক গৃহবধুকে বাড়ীর ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত রুজিনাকে গতকাল বুধবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে যান সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক। এসময় এই অমানবিক ও বর্বর নির্যাতনের স্বীকার রুজিনার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন ও ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান তিনি। মামলার খোজখবর নেয়ার জন্য শাহপরাণ থানার ওসির সাথেও মুঠোফোনে যোগাযোগ করে কথা বলেন জেবুন্নেছা হক।
এছাড়া গৃহবধূ রুজিনার উপর নির্মম নির্যাতনের নিন্দা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড সেক্রেটারী রওশন আর মুকুল। অমানবিক নির্যাতনকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, শহরতলীর মেজরটিলা এলাকার গৃহবধূ রুজিনাকে যৌতুকের দাবিতে স্বামী ও শ্বশুড় বাড়ির লোকজন গৃহবধূকে মারধর করে ছাদ থেকে ফেলে দেয়। এতে রুজিনার দুটি হাত ও বা পা ভেঙ্গে গুরুতর আহত হন।
রুজিনার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে নগরীর শাহপরান থানাধীন তেররতন এলাকার আমজাদ আলীর কন্যা রুজিনা আক্তারের সাথে মেজরটিলা এলাকার জাহানপুরের আব্দুর রহমান সাগরের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে রুজিনার সাথে নানা অসদ আচরণ করে আসছে স্বামী আব্দুর রহমান সাগর।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ৫ লাখ টাকা দাবি করলে রুজিনা তার বাবার সামর্থ নেই বলে জানায়। এক পর্যায়ে যৌতুক আনতে অস্বীকার করলে পরিবারের সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এরপর থেকে শুরু হয় তার উপর নির্যাতন। এমনকি নির্যাতনের সময় রুজিনা আক্তারের স্বামী দ্বিতীয় বিয়ের জন্য তার কাছ থেকে স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষরও নিতে চায়। রুজিনা শত নির্যাতন সহ্য করেও স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করে। এমনকি রুজিনাকে প্রায় দেড় বছর থেকে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি।
তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও স্বামী মাদকের টাকা যোগানের জন্য বিক্রি করে দিয়েছিলো। শুধু তাই নয় মাঝে মধ্যে খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য রুজিনা আক্তারের ভাই, বোন পিতা তার স্বামীর বাড়িত গেলেও রুজিনাকে হুমকি দেয়া হত তাদের কাছে নির্যাতনের ঘটনা বললে তাকে তালাক দিয়ে দেবে। তাই ভয়ে তিনি তার পিত্রালয়ের কারো কাছে মুখ খুলেননি। তবে একসময় তা প্রকাশ পায়।
এরপর তাকে পিত্রালয়ে নিয়ে আসা হলে পুনরায় তাকে স্বামীর বাড়ির লোকজন নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষমা চেয়ে তাকে নিয়ে যান। এরপরেও মেয়ের সুখের জন্য কয়েক দফায় সাগরকে ২ লাখ টাকা দেয়া হয়। কয়েকদিন পর আবারো শুরু হয় তার উপর আবার অমানুষিক নির্যাতন। বর্তমানে রুজিনা আক্তারের দেড় বছরের হাফিজা নামের একটি মেয়ে রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাগর একজন মাদকসেবী। যৌতুকের টাকা না দেয়ায় সে ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে এভাবে নিয়মিত নির্যাতিত চালাতো। একপর্যায়ে যৌতুকের টাকা না পেয়ে পরিবারের সবাই মেলে রুজিনাকে গত বুধবার বাসার দ্বিতীয় তলার ছাদ থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে।এ ঘটনায় গৃহবধূ রুজিনার ভাই ছামির আহমদ মাছুম বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় মামলা দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহরাণ থানার ওসি জানান, নির্যাতিতা গৃহবধূ রুজিনা আক্তারের ভাই ছামির আহমদ বাদী হয়ে ৭ জনকে আসামি করে মামলা (নং-১) দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমরা দেখছি। মামলাটি তদন্ত করা করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।