‘ভিডিও ভূয়া, গণপিটুনিতে মারা গেছে রাজন’
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ’আপনি কি জানেন এখন ডিজিটাল বাংলাদেশে এ ধরনের ভূয়া ভিডিও তৈরি করা সম্ভব?’- স্বাক্ষীকে প্রশ্ন করলেন আইনজীবী। স্বাক্ষী নিশ্চুপ থাকায় আইনজীবী আবার বললেন, ‘রাজনের ভিডিওচিত্রও ভূয়া। তাকে কেউ এভাবে পিটায় নি। চুরির দায়ে গণপিটুনিতে সে মারা গেছে।’
এবার মুখ খুললেন স্বাক্ষী। তিনি বললেন, ‘আমরা না হয় অতসব বুঝি না, কিন্তু সারাদেশের মানুষ এই ভিডিও দেখেছে। কেউ তো ভূয়া বলেনি।’
রবিবার শিশু রাজন হত্যা মামলায় স্বাক্ষ্য প্রদান করেন রাজনের চাচা আল-আমিন। স্বাক্ষ্য প্রদান শেষে তাকে জেরা করেন আসামী পক্ষের আইনজীবী। আদালত থেকে বেরিয়ে আইনজীবীর সাথে তার কথোপকথোনের অংশটি এভাবে বর্ণণা করেন আল আমিন।
আল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসামী পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন, চুরির দায়ে গণপিটুনিতে মারা গেছে রাজন। আর তাকে নির্যাতনের যে ভিডিওটি বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছে তা ভূয়া।’
রবিবার সিলেট মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধার আদালতে ২য় দিনের মতো চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার স্বাক্ষ্য গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ২য় দিনে স্বাক্ষ্য প্রদান করেন নিহত রাজনের মা লুবনা বেগম, চাচা আল আমিন, প্রতিবেশী মাসুক আহমদ ও জিয়াউল হক। ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী নামে আরেক প্রতিবেশীর স্বাক্ষ্য গ্রহণের কথা থাকলেও সময় স্বল্পতার কারণে আজ তার স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি।
এই মামলায় আসামী পক্ষের আইনজীবীর দায়িত্বে রয়েছেন এডভোকেট আব্দুল খালিক। যদিও রাজন হত্যার পর এক বিক্ষোভ সমাবেশে সিলেট জেলা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ঘোষণা দিয়েছিলেন, সিলেটের কোনো আইনজীবী রাজনের ’খুনি’দের পক্ষে লড়বেন না।
সাক্ষ্য গ্রহণের শুরুতেই রাজনের মা লুবনা আক্তারের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। পরে রাজন হত্যার ঘটনাস্থলের ব্যবসায়ী মাসুক মিয়ার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। তিনি আসামিদের পক্ষে কথা বলা শুরু করেন। এক পর্যায়ে বাদী পক্ষের আইনজীবীরা তাকে বৈরি ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে রাজনের বাবার নিযুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট শওকত চৌধুরী জানান, ব্যবসায়ী মাসুক ১৬১ ধারায় পুলিশের কাছে এক রকম সাক্ষি দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ আদালতে এসে পুরো ভিন্ন সাক্ষি দিয়েছেন। তাই আমরা আদালতের কাছে বলেছি তাকে বৈরি ঘোষণা করতে।
স্বাক্ষ্য গ্রহণকালে আদালত চত্বরে উপস্থিত ছিলেন রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কামরুল ইসলামে ফিরিয়ে না আনায় আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। তাকে ফিরিয়ে আনা না গেলে ন্যায় বিচার সম্ভব হবে না।
রবিবার স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে পিপি এডভোকেট মফুর আলী জানান, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত।
এর আগে গত ১ অক্টোবর মামলার বাদী বরখাস্তকৃত পুলিশ উপ-পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম ও রাজনের পিতা আজিজুর রহমান স্বাক্ষ্য প্রদান করেন। সৌদি পলাতক কামরুল ইসলামসহ ১৩ জনকে আসামি করে গত ১৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠন করা হয়। এদের মধ্যে ১০ জন আটক রয়েছেন।
গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমরগাঁও বাসস্ট্যান্ডের পাশে চুরির অপবাদে শিশু সামিউল আলম রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নির্যাতনকালে ঘাতকরা ভিডিওচিত্র ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। যে ভিডিও দেখে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।