জীবন ও জীবিকা : পিচের মুখে চায়ের চুমুক (পর্ব-২)
জীবন পাল: মো: সবর আলী । বয়স ৬২ । ১৯৫৩ সালে কমলগঞ্জের সোনাপুর গ্রামে যার জন্ম । জীবন সংগ্রামের যুদ্ধে ৭ বছর বয়সে যিনি পাড়ি জমিয়েছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার ডলুছড়া গ্রামের মুসলিম পাড়ায় । সেই থেকে এটাই যার নিবাসস্থল । ১৯৮৬ সাল থেকে আজ অবধি যার কর্মজীবন বিরতীহীন ভাবে চলছে । কর্মজীবনের শুরুতে তিনি শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন পাহাড় থেকে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন । এরপর সম্পর্কের জের ধরে একটি পাবলিক কোম্পানীর মহালদার তারপর মুহুরী হিসেবে বেতন ভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ করে স্ত্রী সহ ২ ছেলে ও ৫ মেয়েকে নিয়ে সংসার চালিয়ে গেছেন । তারপর গ্যাস ফিল্ড এর মহালদার ও শেভরনের ২২০০-২৩০০ টাকার বেতন ভুক্ত চাকুরী । জীবন সগ্রামে হার না মেনে ৫ মেয়ের মধ্যে ৩ মেয়েকে বিয়ে দিয়ে কিছুটা হালকা অনুভব করেন । যার ফলে ছোট ছেলের সহযোগিতায় ৫ স্টার পাড়ি দিয়ে নুরজাহান মুখ সংলগ পিচের মুখের নিরিবিলি পরিবেশে ভাড়াউড়া বাগান কতৃপক্ষের অনুমতি ক্রমে গড়ে তুলেছেন একটি চায়ের দোকান । যে দোকানটি পিচের মুখে চাচার চায়ের দোকান নামে পরিচিত । এই চায়ের দোকানটির চা এর তুলনা অন্য কোন দোকানের চায়ের সাথে হয়না । যে চায়ে নিজে চুমুক না দিলে বোঝা দায় । নিরিবিলি সবুজ ঘেরা চায়ের বাগানের সমতল স্থানে হওয়ায় যেন চায়ের প্রকৃত স্বাদটা খোঁজে পাওয়া যায় পিচের মুখের চাচার এই চায়ের দোকানের চায়ে ।
সকল শ্রেণীর মানুষের বিচরণ রয়েছে পিচের মুখের এই চায়ের দোকানে । তবে, এক এক শ্রেণীর কাষ্টমারের বিচরন এক এক সময়ে । ভোর ৫ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত এই দোকানের অধিকাংশ কাষ্টমার ঠেলাগাড়ি ড্রাইভার । যারা পাহাড়ী লেবু সংগ্রহ কওে শহরের বাজাওে নিয়ে গিয়ে প্রথম প্রহরে বিক্রি করার কাজে নিয়োজিত । সারাদিন বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে পর্যটকরাও এই চায়ের দোকানে এক চুমুক চা পান করতে ভীড় জমিয়ে থাকে । আর সন্ধ্যা বেলায় থাকে শহরের যুবক থেকে শুরু করে মধ্য বয়সীদের আড্ডা । অন্য কোন উদ্দ্যেশে নয়, সারাদিনের ব্যস্ততার পর নিরিবিলি পরিবেশে চায়ের এই দোকানের চা পান করার সবার মূখ্য উদ্দেশ্য ।
নিন্দুকের বেড়াজালে পড়ে প্রায় ৩ মাস চাচার দোকানের চায়ের চুমুক থেকে বিরতী নিতে হয়েছে এ্ই দোকানের চা প্রেমীরা । প্রতিনিধি প্রায় ১০০০-১২০০ টাকা এই দোকান থেকে আয় করেন দোকানের মালিক মো: সবর আলী । শুধু যে এর উপর নির্ভর করেই ৬২ বছরের মো: সবর আলী পাড়ি দিচ্ছেন তা কিন্তু নয় । বাগান কতৃপক্ষের সহযোগিতায় তিনি ঐ এলাকায় পাহারাদার হিসেবে নিযুক্ত আছেন । ঐ এলাকার দেখভালের স্বার্থে বাগান কতৃপক্ষের সহযোগিতায় তিনি তার সন্তানকে নিয়ে সবাইকে দিয়ে যাচ্ছেন তার অতুলনীয় এই চায়ের স্বাদ । কষ্ট হলেও প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের পদচারনায় নিজের এই ব্যবসা প্রতিষ্টানে জীবনের শেষ মুহূর্তটুকু নিজেকে জড়িয়ে রাখতে চান সরব আলী । সেই সাথে ব্যস্তময় জীবনকে একটু পরিশ্রান্ত করতে তার দোকানে বসে এক কাপ চা পান করার মিনতি জানান ।