কে হচ্ছেন সিলেট জেলা পরিষদের প্রশাসক: শফিক না মাসুক?

Shofik and mashukসুরমা টাইমস ডেস্কঃ গত ৯ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক আবদুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে শূণ্য হয় সিলেট জেলা পরিষদের প্রশাসকের পদটি। তাঁর মৃত্যুর চার-পাঁচদিন পর থেকেই জেলা পরিষদের প্রশাসক পদটি ভাগিয়ে নিতে লবিং শুরু করেন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক লোকমান আহমদের নাম জেলা পরিষদের প্রশাসক পদের জন্য আলোচিত হচ্ছে।
তবে এঁদের প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁর সিদ্ধান্ত সকলেই মেনে নেবেন বলেও জানিয়েছেন প্রশাসক পদ প্রত্যাশীরা।

তবে চূড়ান্ত আলোচনায় সর্বাগ্রে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। এরপর আছে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদের নাম। এ দুজনের একজনই জেলা পরিষদের প্রশাসক পদটি পেতে যাচ্ছেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। প্রশাসক পদ পাওয়ার দৌঁড়ে থাকা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি শ্রদ্ধা আর আনুগত্য দেখিয়ে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ) আসন থেকে পুনরায় সাংসদ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও প্রতিদ্বন্ধিতা থেকে সরে দাঁড়ান। তারও আগে, গত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা ইলিয়াস আলীকে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন শফিক। মানুষের ব্যাপক ভালোবাসাতেই নির্বাচিত হন তিনি। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের প্রধান কান্ডারি হচ্ছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। দল কিংবা নেত্রীর প্রতি তার আনুগত্য প্রশ্নাতীত। এছাড়া মাঠ পর্যায় পর্যন্ত সক্রিয় একজন নেতা তিনি। এসব কারণে তিনিই প্রশাসকের পদটি পেতে যাচ্ছেন বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। এদিকে জেলা পরিষদের প্রশাসকের দৌঁড়ে থাকা মাসুক উদ্দিন আহমদ একজন মুক্তিযোদ্ধা। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবেও তার রয়েছে ক্লিন ইমেজ। তিনি জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে সিলেট-৫ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। তার আসন থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন। এ ব্যাপারে মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হচ্ছে প্রায় ৫০ বছরের। ছাত্রলীগ দিয়ে শুরু করে বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। কোনো কিছুর আশা না করেই কাজ করে যাচ্ছি। আমার নেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে যোগ্য মনে করেন, তবে আমি অবশ্যই সাগ্রহে তা পালন করতে প্রস্তুত আছি।’ এদিকে সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। তবে এ সাক্ষাতে জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন শফিক চৌধুরী। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ রক্ষায় ‘চ্যাম্পিয়ন অব আর্থ’ পুরস্কার পাওয়ায় তাঁকে অভিনন্দন জানাতে এবং তিনি জাতিসংঘের সাধারণ সভায় যোগ দিতে যাচ্ছেন, এজন্য তাকে শুভকামনা জানাতেই তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে জেলা পরিষদের প্রশাসকের ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ সম্পূর্ণ সরকারের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে বিশ্বস্ত, যোগ্য ও অভিজ্ঞ মনে করবেন, তাকেই দায়িত্ব দেবেন। এক্ষেত্রে আমাকে যদি দায়িত্ব দেয়া হয়, তবে আমি অবশ্যই সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসের মর্যাদা রাখার চেষ্টা করবো।’ এদিকে জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের পছন্দ অনুযায়ীই, বিশেষ করে নির্বাচনী এলাকা হিসেবে অর্থমন্ত্রীর পছন্দই এক্ষেত্রে প্রাধান্য পেতে পারে।