রায়ের অপেক্ষায় সেই মজিদের পরিবার, আতঙ্ক
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় আলোচিত ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ইতোমধ্যে দুই দফা পিছিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক মকবুল আহসান। রায় পেছানোর কারণে আসামিপক্ষ এলাকায় বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এতে নিহত মজিদের পরিবার ও গ্রামবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে চাপা আতঙ্ক।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আলোচিত সেই মজিদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ছিল গত সোমবার। কিন্তু ওই দিনও রায় ঘোষণা না করে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর নতুন তারিখ ঘোষাণা করেছেন বিচারক। এ তথ্য জানিয়েছেন সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট কিশোর কুমার কর।
তিনি জানান, গত ২৭ অগাস্ট ওই মামলার রায় ঘোষণার কথা ছিলো। কিন্তু ওইদিন রায় পিছিয়ে দিয়েছিলেন আদালত। তবে আদালত আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর রায়ের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন বলে জানান ওই আইনজীবী।
এদিকে, রায় পেছানোর কারণে আসামিপক্ষ খুশি। এছাড়াও এলাকায় তারা বিচারাধীন ওই মামলা নিয়ে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে বলেও জানা গেছে। এতে এলাকার মানুষ ও নিহত মজিদের পরিবারের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক। আসামিরা বিভিন্ন মাধ্যমে নিহত মজিদের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে নিহত মজিদের মামা ও মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রব জানান, আসামিরা এলাকায় বিভিন্নভাবে মজিদের পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে। এছাড়াও তারা আদালতে বিচারাধীন মামলা নিয়ে তারা প্রকাশ্যে বিভিন্ন মন্তব্য করে যাচ্ছে। এতে করে এলাকাবাসী ও নিহত মজিদের পরিবার রয়েছেন আতঙ্কে।
প্রসঙ্গত, কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার গোপীনগর গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে নয়াবাজারের তরুণ ব্যবসায়ী আবদুল মজিদকে ২০১২ সালের ২৯ আগস্ট বাড়িতে থেকে ডেকে নিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের নিন্দার ঝড় উঠে পতনউষার ইউনিয়নসহ কমলগঞ্জ উপজেলায়। তার অপরাধ ছিল প্রতিবেশি আজাদুর রহমানের মেয়ে আমেনা আক্তার জুইয়ের সঙ্গে প্রেম।
তাদের প্রেম আসামি আজাদুর রহমান মেনে নিতে না পারায় ২৯ আগস্ট রাতে মেয়ের দুই ভাই আসামি রুবেল মিয়া (২৪) ও আসামি জুয়েল মিয়া (২৩) রাতে আবদুল মজিদকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে প্রেমিকার বাড়ি নিয়ে যায়। রাতে খাওয়ানোর পর মজিদের হাত পা বেঁধে কান কেটে, কানে শিক ঢুকিয়ে চোখ দু’টি তুলে ফেলে এবং পুরুষাঙ্গ কেটে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে নৃশংসভাবে খুন করার পর লাশ মজিদের বাড়ির পেছনের ডোবায় ফেলে রাখে। পরে অনেক খোঁজাখুজির পরদিন পুলিশ ডোবা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে।
এরপর ওই বছর ১ সেপ্টেম্বর নিহত মজিদের বাবা আব্দুর রহমান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে পুলিশ প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করলেও এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে পুলিশ মামলার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করে। পরে আসামিরা অনেকেই জামিনে বের হয়ে আসেন।
আসামিরা হলেন- রুবেল, জুয়েল, আজাদ, মুহিদ, মাসুক, আফরুজ, সাহিন, আজমান, ডলি, আলমা ও প্রেমিকা জুই।
পুলিশ ব্যাপক তদন্ত করে ২০১৩ সালের ৮ আগস্ট ১১ জনকে অভিযুক্ত করে মামলার চূড়ান্ত চার্জশিট আদালতে দাখিল করে। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের মাধ্যমে ১৪ আগস্ট চার্জশিটটি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত মৌলভীবাজারে জমা করা হয়।
ওই চার্জশিটে ওঠে আসে মজিদ হত্যার নমুনা। প্রধান আসামি রুবেল মিয়া ও জুয়েল আহমদ ব্যবসায়ী মজিদকে ঘটনার দিন রাতে বাড়ি থেকে ডেকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা যায় ৩নং আসামি আজাদুর রহমান মজিদকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আসামি মুহিত মিয়া, আজমান মিয়া, মাসুক মিয়া, আফরোজ মিয়া, শাহীন মিয়া, জুয়েলের মা ডলি বেগম, রুবেলের মা আলমা বেগম ও কলেজ ছাত্রী আমিনা আক্তার জুঁই আলামত নষ্ট ও হত্যার ঘটনায় সহায়তা করেছে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রব জানান, মজিদ হত্যার সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হয়েছে। আদালত বিচার শেষে করেছে। এখন শুধু রায় ঘোষণার পালা। আমরা সেই রায়ের অপেক্ষায় আছি। আশা করছি আসামিরা কোনোভাবেই রক্ষা পাবে না।