ধ্বংসাত্মক প্রকল্প হাতে নিচ্ছে ভারত, মরুভূমি হবে বাংলাদেশ

India Conspiracy againt Bangladeshসুরমা টাইমস ডেস্কঃ ভারত সরকার সে দেশের ৩০ নদ-নদীর আন্তঃসংযোগ ঘটানোর এক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আগামী ৭ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ভারত এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রকল্প শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের জন্যও ধ্বংসাত্মক। ভারত এ প্রকল্পের মাধ্যমে সে দেশের যে এলাকায় উদ্বৃত্ত পানি আছে সেখান থেকে পানি সঙ্কট ও মরুময় এলাকায় পানি সরবরাহ করবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অভিন্ন ৫২টি নদ-নদী রয়েছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র নদ ও গঙ্গা (পদ্মা) থেকে পানি প্রত্যাহার করবে তারা। পরিবেশবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, এর ফলে বাংলাদেশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, পলি প্রবাহে ব্যাঘাত, মাছের ক্ষতি, বন ডুবে যাওয়া সর্বোপরি নদ-নদীগুলোর পনি প্রবাহ কমে যাবে। এছাড়া, ভারতে এই প্রকল্পের আওতায় যে জলাধার (রিজার্ভার) নির্মাণ করা হবে তাতে সেখানকার বিস্তীর্ণ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে। এতে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবে। কৃষক তার জামি হারাবে। উৎপাদন কমে যাবে।
তাই ভারতের পরিবেশবিদসহ বিশেষজ্ঞরা এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। পশ্চিমবাংলা, কেরালাসহ কয়েকটি রাজ্য এতে আপত্তি জানিয়েছে। তবুও মোদী সরকার শুধু ব্যবসায়ীদের দিকে তাকিয়ে এ প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আন্তঃনদী সংযোগ সম্পর্কে জেআরসি’র সদস্য মীর সাজ্জাদ হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভারত যাতে করে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে সে সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।’ তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকা সফরের সময় বলেছেন তারা বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে না।
মীর সাজ্জাদ জানান, এ প্রকল্প ভারত বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশর ক্ষতির লিস্ট হবে অনেক লম্বা। যেমন, নৌ-চলাচল, কৃষি, মৎস্য, পরিবেশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমস্যা হবে।
তিনি বলেন, ‘এক নদী থেকে অন্য নদীতে পানি সরিয়ে নিলে সেই নদীতে পানি এমনিতেই কমে যাবে। ফলে পানি না থাকলে যেসব সমস্যা হয় তার সবই হবে। ভারত কোন কোন নদী থেকে কীভাবে পানি নেবে তা জানা যায়নি।’
এই পানি বিশেষজ্ঞ জানান, আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশের টাকার অংকে কী পরিমাণ ক্ষতি হবে তা তার জানা নেই।
আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর আমলে নেয়া হয়। এরপর মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় এলে প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে যায়। অর্থাৎ আর এগোয় নি। কিন্ত গত বছর বিজেপি নেতৃত্বাধীন নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় এলে প্রকল্পটি আবার নতুন জীবন পায়। সরকার এখন এ প্রকল্পটি আগামী ৭ থেকে ১০ বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে চায়।
জানা গেছে, এই প্রকল্পের আওতায় রিজার্ভার (জলাধার), ড্যামসহ (বাধ) ১৪ হাজার কিলোমিটার খাল খনন করা হবে। এর ফলে ভারতের যেসব অঞ্চলে বন্যা ও খড়া হয় তা হ্রাস পাবে এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
আন্তঃসংযোগের ৩০টির মধ্যে ১৬টি হবে পেনিসুলার অঞ্চলে এবং ১৪টি হবে হিমালয় অঞ্চলে। এর মাধ্যমে ১৭০ ঘনমিটার (কিউবিক মিটার) পানি প্রত্যাহার করা হবে। জানা গেছে, এধরনের আরো প্রকল্প ভারতের পাইপলাইনে রয়েছে।
হিমালয় অঞ্চলের অধীনে যেসব রিজার্ভার, ড্যাম এবং খাল খনন করা হবে এবং তার মাধ্যমে গঙ্গা ও যমুনা থেকে যে অতিরিক্ত পানি পাওয়া যাবে তা ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য রাজস্থান ও গুজরাটে নিয়ে যাওয়া হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র নদ গঙ্গা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। গঙ্গা নদীর পানি প্রবাহ পরিবর্তন করে সড়িয়ে নেয়া ১৯৯৬ সালের বাংলাদেশ-ভারত পানি চুক্তি লংঘন। কারণ, ওই চুক্তিতে গঙ্গার ফারাক্কা ব্যারেজের উজান (উপরে) থেকে পানি সড়িয়ে নেয়ার সুযোগ নেই। কিন্ত এর মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত।
ভারত সরকার আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের পরিপূর্ণ রিপোর্টর জন্য ১০০ কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে। যা বিজেপির নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে অঙ্গীকার ছিল।
আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প সম্পর্কের ভারতের মেধা পাটকার যিনি একজন সমাজকর্মী এবং বাধবিরোধী নর্দমা বাঁচাও আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বলেছেন, প্রকল্পটি বাস্তবসম্মত নয়। এতে ব্যাপক সামাজিক, পরিবেশ এবং অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ভারত সরকার বলেছে এ প্রকল্প বন্যা নিয়ন্ত্রণে কাজ কররে। এ সম্পর্কে পাটকার বলেন, মাত্র ৫ ভাগের এক ভাগ পানি প্রবাহ সড়িয়ে নেয়া হবে গঙ্গা থেকে। তাহলে কীভাবে এটা বন্যা প্রতিরোধ করবে। এখানে কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা থেকে পানি নিয়ে যাওয়া হবে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে। কিন্ত ব্রহ্মপুত্র থেকে ৬৫ শতাংশ মিঠা পানি আসে বাংলাদেশে। তাই এখানকার পানি প্রত্যাহাররের ফলে পানি প্রবাহ কমে যাবে। আর পানি কমে গেলেই সাগর থেকে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করবে বাংলাদেশে। বর্তমানে সাতক্ষীরা পর্যন্ত লবণাক্ত পানি প্রবেশ করছে। আর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত লবলাক্ত পানি প্রবেশ করবে। এই লবণাক্ততার ফলে ফসল হবে না। জলজ প্রাণীসহ মাছ কমে যাবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের পুরো জীববৈচিত্রের উপর বিরুপ প্রভাব পড়বে।’
এক তিস্তার পানি কমেই উত্তারঞ্চলের ফসলের যে দশা হয়েছে, তাতে এ প্রকল্পের ফলে বাংলাদেশ মরুময় হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় যে রিজার্ভার তৈরি করা হবে তাতে ভারতেরও ক্ষতি হবে। সেখানেও জীববৈচিত্র হুমকির সম্মুখীন হবে। খোদ ভারতের পরিবেশবিদরাও একথা বলেছেন। পানি প্রত্যাহার করে যে ফসল উৎপাদনের যুক্তি দেখানো হচ্ছে। সেটা কিন্তু বিকল্প উপায়েও সম্ভব।’
এই প্রকল্পে ৫ লাখ ৪০ হাজার কোটি রুপি খরচ হবে জানিয়ে ড. তারেক বলেন, ‘এর মেইন পারপাস হলো ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়া। কারণ মোদী সরকার ব্যবসায়ীদের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। প্রকল্পটি হলে তারা এর থেকে অনেক টাকা আয় করতে পারবে।’
তার মতে, ইতিমধ্যে সিকিম, পশ্চিমবাংলা, আসাম ও কেরালা রাজ্য আন্তঃনদী সংযোগের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। শুধু আপত্তি জানায়নি তামিলনাড়ু রাজ্য।
বাংলাদেশ পক্ষ থেকে সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রকল্পটির বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এ সম্পর্কে ড. তারেক বলেন, ‘ওটা নোট ভারবাল কোনো প্রতিবাদ নয়।’ আর এ প্রকল্প করা মানে আন্তর্জাতিক আইন লংঘন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তথ্যসূত্র, বাংলাপ্রেস