১৫ বছরেও আপন ঠিকানা খুঁজে পায়নি দিরাই পৌরসভা

Derai-pouroshova2দিরাই প্রতিনিধিঃ ১৫ বছরেও আপন ঠিকানা খুঁজে পায়নি দিরাই পৌরসভা। ১৯৯৯ সালে পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর কাজ শুরু হয় একটি ভাড়া করা ভবনে। ভবনটি ছিল একটি কমিউনিটি সেন্টার । এখনো সেই ভাড়া করা ভবনেই চলছে পৌরসভার কার্যক্রম। এ নিয়ে কথা হয় গত পৌর নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী ম্্ঈন উদ্দিন চৌধুরীর (মাসুক) সাথে। তিনি বলেন, ১৫ বছর আমরা কমিউনিটি সেন্টারেই আছি। চোখে পড়ার মতো কোনো উন্নতি যে হয়নি ভাড়া করা কার্যালয়ই তার বড় প্রমান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা, যেখানে বাঁশের সাঁকো ছিল এখনও সেখানে সেই বাঁশের সাঁকোই আছে, মডেল পৌর সভা দূরের কথা, গত সাড়ে ৩ বছরে পৌর মেয়র আজিজুর রহমান চোখে পড়ার মতো কোনো কাজ দেখাতে পারেন নি। বরং কিছু কিছু জায়গায় যেখানে কাঁচা সড়ক ছিল সেখানে বাঁশের সাঁকো দিয়ে মানুষ চলাচল করছে। মঈন উদ্দিন চৌধুরীর এসব বক্তব্য উদ্দেশ্যমূলক উল্লেখ করে পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র বিশ্বজিৎ রায় বলেন, পৌর এলাকার কোথাও এখন আর বাঁশের সাঁকো নেই, উনার ভাইয়ের নামে অসম্পূর্ন (নাছির উদ্দিন চৌধুরীর) সড়কটিও করে দিয়েছেন, পৌর মেয়র আজিজুর রহমান, চোখে রঙ্গিন চশমা পড়ে মোটর সাইকেলে ঘুরে বেড়ানোর কারনে এটিও হয়তো তার নজরে আসছে না। বিশ্বজিৎ রায় দারি করেন তাদের মেয়র (সাবেক মেয়র আহমদ মিয়া) দীর্ঘ ৯ বছরে যা করতে পারেন নি, পৌর মেয়র আজিজুর রহমান মাত্র সোয়া ৩ বছরে তার চেয়েও অনেক বেশী কাজ করেছেন, এই সময়ের মধ্যে আড়াই কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্থবায়ন করা হয়েছে, আরও সাড়ে ৩ কোটি টাকার কাজ চলমান আছে। পৌর কার্যালয় করার মত উপযুক্ত জায়গা না পাওয়ায় নিজস্ব ভবন করা যায়নি দাবি কওে তিনি বলেন, পৌর ভবনের জন্য পৃথক দুটি জায়গা চিহ্নিত করে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালের আগস্টে ৬.৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে দিরাই পৌরসভা গঠিত হয। পৌর এলাকার ভিতরে গ্রামই বেশি। অধিকাংশ গ্রামে এখনো পাকা রাস্তাঘাট হয়নি। পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পৌর প্রশাসকের আমলে স্টিট লাইটের উদ্বোধন করার পর বছর দু’এক সড়ক বাতি জ্বললেও সাবেক পৌর মেয়র হাজী আহমদ মিয়া দায়িত্বভার নেবার পর তা নিবে যায় যা বর্তমান পৌর মেয়র দায়িত্ব নিয়েই নিজের ব্যক্তিগত তহবিলের অর্থায়নে সচল করেন । বিদ্যুতের আলো পৌছেছে অধিকাংশ পাড়া মহল্লায়। ১৯৯৯ সালে পৌরসভার কার্যক্রম শুরুর পর উপজেলা পরিষদের পাশে পৌর কার্যালয়ের জন্য একটি ভবন ভাড়া নেয়া হয়। দোতলা এ ভবনটি ছিল একটি কমিউনিটি সেন্টার। পৌর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে দ্বিতীয়তলা। প্রথম আড়াই বছর প্রতিষ্ঠানটি চলে পৌর প্রশাসক দিয়ে। প্রশাসক দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা।
পৌরসভার ১৫ বছরের কার্যক্রমের মূল্যায়ন করতে গিয়ে ৯নং ওয়ার্ডের আনোয়ারপুর নয়া হাটির প্রবীণ ব্যক্তি সোনাফর আলী বলেন, আওরের(হাওরের) মানুষ আমরার তনি ভালা আছে। ফউর সভায় (পৌরসভায়) থাকি কারেন্ট নাই,ফানি নাই, হাইঞ্জা অইলেই ঘর তনি বারইতে ডর খরে। ইতারে পৌরসভা খয়নি। একই গ্রামের কৃষক আজিম উদ্দিন বলেন, এখন বর্ষায় বাড়িতে যাওয়া-আসা করতে হলে সাঁকো লাগে। উপজেলা রোডের ব্যবসায়ি মকসদ মিয়া পৌর কার্যালয়ের সামনের ভাঙ্গাচুরা পাকা সড়ক দেখিয়ে বলেন, শহরের অধিকাংশ রাস্থাঘাটের অবস্থা প্রায়ই এ রকম, নতুন রাস্তা কমই হয়েছে, শুধু সময় সময় জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে।
পৌর শহরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই এখানে-সেখানে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের দখলে থাকে সড়কের দুই পাশ। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকে এখানে-সেখানে। নেই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও। শহরের কলেজ রোডের বাসিন্দা আবুল কাশেম চৌধুরী বলেন, পৌরসভা নিয়ে মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল ১৫ বছরেও সেই প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব মিলছে না।