বড়লেখায় সম্ভ্রম হারানো নারীর ইজ্জতের মূল্য ২৭ হাজার টাকা!
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌর শহরের সুরমা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্স-রে করাতে গিয়ে সম্ভ্রম হারিয়েছেন স্বামী পরিত্যক্তা এক নারী। অতি গোপনে এক ইউপি সদস্য সমাজপতিদের নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে বিষয়টির সালিশ-মীমাংসা করেন। সম্ভ্রম হারানো নারীর ইজ্জতের মূল্য ২৭ হাজার টাকা। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। ঘটনাটি ঘটে গত ১৮ আগস্ট শহরের সুরমা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
এক সময় বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালেও পরবর্তীতে সমাজপতিদের তীব্র কঠোরতার কারণে আর আগ বাড়েনিন ওই নারী। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নারীর সম্ভ্রম হারানো আর সালিশ-মীমাংসার ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নারীর সম্ভ্রমের দাম টাকায় পরিশোধ করে সালিশ-মীমাংসায় সমাজপতিরা ঘটনাটি নিষ্পত্তি করেন। চিকিৎসা নিতে গিয়ে নারীর সম্ভ্রম হারানোর ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি করেছে।
ভুক্তভোগী, স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ একাধিক সূত্র জানায়, শুরু থেকেই বিভিন্ন অনিয়মের জন্ম দিয়ে আসছেন এই সেন্টারের পরিচালক (লাইসেন্সকৃত মূল পরিচালক আক্তার হোসেন চৌধুরী) ওলি আহমদ চৌধুরী। কোনো ধরণের নিয়ম-নীতির তোয়াক্তা না করেই ডায়াগনস্টিক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তরুণীদের লোভ দেখিয়ে এই সেন্টারে চাকরি দিয়ে তাদের অনেকের শ্লীলতাহানি ঘটানো হয়েছে। তবে লোকলজ্জার ভয়ে অনেকেই স্পর্শকাতর এসব বিষয়ে থানায় অভিযোগ কিংবা কাউকেই জানাননি।
অনেকেই সেন্টার পরিচালক ওলি আহমদ চৌধুরীর নানা অপকর্মের শিকার হয়ে চাকরি ছেড়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষায় গলাকাটা ফি নিয়ে দেদারছে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে সি.এস. (জেলা সিভিল সার্জন) থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্পিডমানির মাধ্যমে ম্যানেজ করে। ইতোপূর্বে একাধিকবার এই সেন্টারের নিয়মবহির্ভুত পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালানোর অভিযোগে জনৈক রফিক উদ্দিন নামের এক ভুক্তভোগী সিভিল সার্জন বরাবরে অভিযোগ দিলেও কোনো ফল পাননি।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, সরকারি বিধি না মেনে প্যাথলজি এসিস্ট্যান্ট, ল্যাব টেকনিশিয়ান, রেডিওলজিস্ট, ইসিজি.র চিকিৎসকবিহীন উপজেলার সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নিয়ে প্রতারণা করে আসছে। ভুক্তভোগীরা এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, গত ১৮ আগস্ট দুপুরে জেনারেল ও প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা: আব্দুল মান্নান এর কাছে কোমরের ব্যথাজনিত কারণে দ্বারস্থ হন উপজেলার বিওসি কেছরীগুল (উত্তর ডিমাই) গ্রামের বাসিন্দা খয়রুন বেগম (৩৫)। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এলএস স্পাইন (লাম্বো মেকরাল স্পাইন) পরীক্ষার জন্য সুরমা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান ওই নারী।
তিনি ল্যাবরেটরীতে গেলে ল্যাব টেকনিশয়ান হিসেবে কর্মরত গৌছ উদ্দিন (১৮) তাকে বলে এ ধরণের পরীক্ষার পূর্বে যৌন মিলন করে নিতে হয় বলে ফুসলিয়ে তার সম্ভ্রম লুট করে। ২১ আগস্ট সুরমা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে এক্স-রে রিপোর্ট দেখাতে গিয়ে তিনি ঘটনাটি জানিয়ে বলেন এতো কঠিন পরীক্ষা তাকে কেনো দিলেন। চিকিৎসক ওই নারীর অভিযোগ শুনে সেন্টারের পরিচালক ওলি আহমদ চৌধুরীকে অবহিত করেন এবং মহিলাকে পুলিশের কাছে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন।
পরদিন ওই মহিলা বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে এসআই কামাল হোসেন বিষয়টি তদন্ত করেন। মামলা না করতে চাপ প্রয়োগ করে সম্ভ্রমহানির বিষয়টি অত্যন্ত গোপন রেখে এলাকার ইউপি সদস্য সৈয়দ লুৎফুর রহমান সালিশ বৈঠক করে ঘটনাটি মীমাংসা করে দেন এবং সম্ভ্রম হারানো নারীকে তার সম্ভ্রমের দাম বাবদ লক্ষাধিক টাকা আদায় করলেও ওই নারীকে দু‘দফায় ২৭ হাজার টাকা দেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলো জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে বড়লেখা থানার এসআই কামাল হোসেন বিষয়টি সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হননি। অভিযোগের ব্যাপারে সুরমা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অঘোষিত পরিচালক ওলি আহমদ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার না করলেও আমাদের নিজম্ব মহিলা টেকনিশিয়ান না থাকায় দায়িত্বরত গৌছ ওই মহিলার কাপড় নিজ হাতে খুলে ফেলেছিল। অভিযোগ জানার পর তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দিয়েছি।
বিষয়টি সম্পর্কে ৬নং বড়লেখা ইউপি’র ৮নং ওয়ার্ড সদস্য সৈয়দ লুৎফুর রহমান বলেন, ঘটনাটি যেহেতু মীমাংসা হয়ে গেছে তাই এ বিষয়ে আর জানার দরকার কি? এ বিষয়ে বড়লেখা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মনিরুজ্জামান জানান, এ বিষয়ে লিখিত কিছু তিনি পাননি। মৌখিকভাবে শুনে এসআই কামালকে দিয়ে প্রাথমিকভাবে খোঁজখবর নিয়েছেন।