হাতির পিঠে পিঁপড়া : মোঃ শামীম মিয়া
অনেক দিন আগের কথা। আমদির পাড়া নামে কোন এক রাজ্যের এক রাজার ছিলো বিরাট বড় একটা বন । সেই বনে বাস করতো কয়েক হাজার প্রজাতির জীবজন্তু । যেমন বাঘ, হরিণ, হাতি, বানর, শিয়াল, বন কুকুর, বন ভেড়া, বন হাঁস , পাখি সহ বাস করতো কয়েক হাজার প্রজাতির পিঁপড়া, পোকামকড় তো আছেই। বনে যেসব জীবজন্তু বাস করে তাদের একটা করে শত্রুও আছে যেমন ঃ হরিণের শত্রু বাঘ, বনহাঁসের শত্রু শিয়াল, পোকামাকরের শত্রু পাখি, ফলমূলের শত্রু বানর পাখি, কলা গাছের শত্রু হাতি, সহ আরো অনেক জীবজন্তু। বনে যারা বাস করে তাদের আহার মেটানোর জন্য অনেক অন্যায় অবিচার করতে হয়, বা এই বনের জীবজন্তুরা করে থাকে। খুন থেকে ছিন্তাই এই বনের নিত্য দিনের ঘটনা।
এই বনের মালিক । অথাৎ এই দেশের রাজা প্রতিদিন প্রজা থেকে শুরু করে জীবজন্তুর খোজ খবর নিতো। সহজেই রাজা জীবন্তুর সমস্যার সমাধান করে দিতো আর যদি সমাধান করতে না পারতো তাহলে প্রজা জীবন্তুদের শান্তনা দিয়ে মন্টা ভরিয়ে দিতো। সবাই খুশি থাকবে এইটাই রাজার চাওয়া।
সেদিন রাজা ও রানী রাজ্যের মন্ত্রি ও গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে মিটিং করছে, এমন সময় একটা পাখি উড়ে আসে রাজ দরবারে। এসে প্রথমে পাখি রাজাকে সালাম দেয় তারপর বলে হুজুর বেদবী মাফ করবেন ? হুজুর আমাকে বাঁচান হুজুর, হুজুর হাতির হাত থেকে আমার কলিজার টুকরো সন্তানদের বাঁচান হুজুর। রাজা রানী সহসবাই অবাক হয়ে বললো, পাখি তুমি কী বলতে চাও আমরা তোমার কথা কীছুই বুঝিনী, তুমি থাকো গাছে, হাতি থাকে ঘাসে, পরিস্কার করে বলো তো কী সমস্যা তোমার ? পাখি কাঁদতে কাঁদতে বললো, হুজুর হাতি আজ গাছের পাতা খেতেই আমার বাসা খেয়ে ফেলেছে। বাসাতে আমার চারটা ছানা ছিলো, তারা প্রাণে বেঁচে গেলোও হাতি ওদের ছাড়ছেনা বলছে আজ নাকী ওদের মেরে ফেলবে। আমি হাতিকে অনেক অনুরোধ করলাম, কিন্তু হাতি আমার কোন অনুরোধ মানছে না। রাজা পাখিকে শান্তনা দিয়ে বললো, তুমি শুধু হাতিটির উপড় নজর রাখো, হাতি যেন অন্য দিকে হাড়িয়ে না যায়। রানী বললো, আচ্ছা পাখি, তুমি কী হাতির কোন ক্ষতি করেছো ? পাখি বললো,না রানী আমি হাতির কোনো ক্ষতি করিনী। তাছাড়া কোথায় আমি আর কোথায় হাতি। আমি হাতির কী ক্ষতি করতে পারি ? রানী পাখিকে বললো, তুমি বনে ফিরে যাও আমরা এর দ্রুত বিচার করবো। এই কথা শুনে পাখি রাজ দরবার থেকে চলে যায়। কিছুক্ষন পর রাজ দরবারে আসে বাঘ। রাজা সহ সবাই বাঘকে দেখে ভয় পায়। বাঘ রাজাকে সালাম দিলো, তারপর বললো, হুজুর আমি নালিশ নিয়ে এসেছি। রাজার এক মন্ত্রি বললো, বাঘ তুমি কী নালিশ করতে এসেছো, তা তুমি র্নিভয়ে বলতে পারো। বাঘ বললো, হুজুর আমার নালিশ হাতি সমন্ধে। রাজা বললো, হাতি তোমার কী ক্ষতি করেছে ? বাঘ বললো, হুজুর হাতির পায়ের নিচে আমার ছোট্ট ছানাটি পরে ছিলো, অমনী হাতি ইচ্ছা করে আমার ছানাটির দু পা ভেঙ্গে দেয়। ছানা আর উঠে দ্বাড়াতে পারছেনা। হুজুর আমি এর কঠিন বিচার চাই। বাঘ এর কথা শেষ না হতেই হাজির হয় রাজ দরবারে হাজার হাজার জীবজন্তু। সবার ক্ষতি করেছে এই হাতি। সবাই রাজাকে বলছে হুজুর হাতি পাগল হয়েছে, হুজুর হাতিকে বন্দি করুন। রাজা সঙ্গে সঙ্গে ঘোষনা দেন, এই রাজ্যের প্রজা থেকে জীবজন্তু সবাইকে রাজ দরবারে ডাকা হোক। রাজ দরবারে সবাই আসলেও হাতি আসেনা। রাজা ক্ষিপ্ত হয়ে যায় হাতির উপড়, রাজার আদেশ অমান্য করার জন্য। রাজা ঘোষনা দেন যে হাতিটিকে রাজ দরবারে আনতে পারবে তাকে বীরের সম্মাননা দেওয়া হবে। রাজার সম্মাননার কথা ভেবে কয়েক জন শক্তিশালী প্রজা বনে গেলো হাতিকে আনতে। কিন্তু তাদের কে হাতি মেরে ফেলে। রাজা আরো ক্ষিপ্ত হয়, রাজা এবার অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করলো, রাজা বললো, যে হাতিটিকে আমাদের এই বড় পুকুরে ডুবাতে পারবে তাকে আমার এই রাজ্যের অর্ধেক সম্পত্তি দিবো। শিয়াল পন্ডিত বললো, হুজুর তবুও কিছু হবেনা কেন না হাতি নিজেকে সব চাইতে বড় প্রাণী ভাবছে। তাকে পরাজিত করতে পারবো না আমরা। অন্য জীবজন্তু বলছে, হুজুর আমরা কী হাতির ভয়ে বনে থাকতে পারবো না ? নানান জনার নানান ধরনের প্রশ্ন , রাজার মাথা যেন ঘুড়তে থাকে। রাজা ভেবে পাচ্ছেনা কী করবে ? হঠাৎ বাঘের পাশ থেকে ছোট্ট দুটি পিঁপড়া বললো, হুজুর আমরা হাতিকে এই বড় পুকুরে ডুবাতে চাই। আপনী যদি অনুমতি দেন। বাঘ সিংহ এর মতো বড় বড় জীবজন্তু থাকতে সামান্য পিঁপড়ার মুখে এতো বড় কথা । রাজা ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, যত বড় মুখ নয়, তত বড় কথা। এটা কী চিনির দানা পেয়েছো, দশ বারো জনে টেনে নিয়ে যাবে ? পিঁপড়া মুটকী আর খুটকী বললো, হুজুর একবার অনুমতি দিয়ে দেখেন, আমরা পারি কী না। রাজ দরবারে সব জীবজন্তু হাঁসচ্ছে আর বলছে পাগলে কী না বলে। পিঁপড়া মুটকী বললো, হেসে নেও যদি হুজুর অনুমতি দেয় সবাইকে গুয়ে পোকা বানিয়ে ছাড়বো। রানী রাজাকে বললো, একবার অনুমতি দাও হয়তো পারবে। রাজা রানীর মুখে পিঁপড়া মুটকী আর খুটকীর এমন সুপারিশ শুনে হাঁসছে আর বলছে রানী তুমিও কী পাগল হয়েছো পিঁপড়াদের কথা শুনে ? রানী বললো, পাগলের সাথে সাথ কী একবার না পারিলে দেখো শতবার। রাজা আর কথা না বাড়িয়ে বললো, ঠিক আছে পিঁপড়া মুটকী আর খুটকী আমি তোমাদের অনুমতি দিলাম। তবে তোমাদের পঙ্গুত্বের দ্বায়িত্ব আমার নেই। পিঁপড়া দুই বন্ধু বললো, ঠিক আছে হুজুর আমরা এবার চললাম হাতির খোজে।
পিঁপড়া দুইজন পথেই ঠিক করলো, কিভাবে হাতিকে দমন করবে ? প্রায় দুই ঘন্টা পর হাতির খোজ পায় পিঁপড়া দুটি। হাতি কলা গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিচ্ছে,এমন সময় তারা দুজন পিঁপড়া হাতির পিঠে উঠে পরে। খুটকী পিঠে আর মুটকী লেজে কামড় দেয় হাতির। হাতি লাফাতে থাকে আর বলে কে গো তোমরা আমার পিঠে লেজে কাপড় দিয়েছো ? পিঁপড়া দুটি বলে আমরা ছোট্ট দুটি পিঁপড়া মুটকী আর খুটকী। হাতি বলে তোমরা আমার পিঠে লেজে কেন কামড় দিয়েছো ? আমি তো তোমাদের কোন ক্ষতি করিনী ? পিঁপড়া দুটি উত্তর না দিয়ে আরো জোরে পিঠে লেজে কামড় দেয় । হাতি কামড়ের জ্বালায় ছুটতে থাকে ফাঁকা মাঠের দিকে। ভুলেই হাতি আসে রাজ্যের গেটে। হাতিকে দেখে সবাই চিৎকার দিচ্ছে পাগল হাতি এসেছে রাজ দরবারে। সবার মুখে এমন কথা শুনে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে লাফাতে থাকে হাতি। অবশেষে লেজ থেকে পরে যায় মুটকী পিঠে আরো জোরে কামড় দেয় পিঁপড়া খুটকী। হাতি মনে মনে বলে দ্বারা পিঁপড়া আজ তোকে আমি মজা দেখাবো, তোকে পানিতে ডুবে মারবো। এই বলে হাতি রাজার বাড়ির সামনে বড় পুকুটাতে ঝাঁপ দিলো । এবং ডুবতে থাকে। রাজ দরবারের থাকা সব জীবজন্তু বললো, হুজুর ঐ দেখেন হাতিকে পিঁপড়া পানিতে ডুবাচ্ছে। হাতি ডুব দেওয়া বন্ধ করে মনে মনে বলে আমার মান সম্মান শেষ। সবাই ভাবছে পিঁপড়া আমাকে ডুবাচ্ছে। হাতি খুব লজ্জা পায়। আর মনে মনে বলে আমাকে আজ এই ছোট্ট পিঁপড়া শিক্ষা দিলো। আমি যা করেছি তা অন্যায় করেছি, পারে যাই রাজার কাছে ক্ষমা চাই। এই বলে পারে উঠে দ্বারালো হাতি, হাতি রাজা সহ সবার কাছে ক্ষমা চায়। আর বলে হুজুর এই ভুল আর কোনদিন হবেনা। আমি নিজেকে আর বড় কখনো মনে করবো না। হুজুর আমার একটু ভুলের কারনে অনেক অপমান হতে হলো । এই ছোট্ট পিপড়া দুটি আমাকে ভালো হওয়ার পথ দেখিয়েছে, আমি পিঁপড়া দুটিকে ধন্যবাদ জানাই। রাজার এক মন্ত্রি বললো, সব জীবজন্তুর উদ্দেশ্য করে রাজা হাতিকে ক্ষমা করেছে, তোমরা কী হাতিকে ক্ষমা করে দিয়েছো ? সব জীবজন্তু বললো, হ্যা আমরা ক্ষমা করেছি।
রাজা রানী কে ধন্যবাদ জানায় এবং পিঁপড়া দুটিকে সম্মাননা ও বীরত্বের জন্য সনদ উপহার দেয়। রাজা যে ঘোষনা দিয়ে ছিলো, যে হাতিকে পুকুরে ডুবাতে পারবে তাকে রাজ্যের অর্ধেক সম্পত্তি দিবো, তা দিতে চাইলে তা পিঁপড়া খুটকী আর মুটকী নেয় না রাজাকেই দিয়ে দেয়। রাজা রানী সহ সবাই খুশি হয়।
রাজা সত্যি তার ভুল বুঝতে পারে, ছোট্ট বলে কাউকে অবহেলা র্ঘৃনা করতে নাই। ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া উচিৎ কুবুদ্ধি না দিয়ে। তাছাড়া মানুষসহ শিশু পশুপাখি সবাই আলোর দিশারী। সবাই দ্বারিয়ে পিঁপড়াদের সম্মান জানায়। খুশি হয়ে হাসি মাখা মুখে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যায় পিঁপড়া দুটি মুটকী আর খুটকীসহ সবাই। সমাপ্ত।