পাঁচ সন্তানসহ আইএসের কবল থেকে পালিয়েছেন সুখী বেগম
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ আইএসের হাত থেকে রক্ষা পেতে ও বাঁচতে করুণ আকুতি জানিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক সুখী বেগম। সিরিয়ার জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে (ইসলামিক স্টেট) কথিত জিহাদের নামে যোগ দিয়েছিলেন এই নারী। তবে ওই নারী্এখন পাঁচ সন্তানসহ আইএসের কবল থেকে পালিয়েছেন। সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরতে চান। সন্তানদের মধ্যে তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। রবিবার যুক্তরাজ্যের সানডে টাইমস পত্রিকা এ খবর জানায়।
খবরে বলা হয়েছে, সুখী বেগম দীর্ঘ ১০ মাস আইএস নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর আল-বাব-এ বসবাস করছিলেন। তাঁর দাবি, আইএস প্রকৃত অর্থে কোনো ইসলামি সংগঠন নয়।
সুখী বেগম পরিবার নিয়ে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে বসবাস করতেন। তাঁর তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। পরিবারটির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে অবগত রয়েছে জানিয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তুরস্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। মোবাইলে ধারণ করা একটি ভিডিওচিত্রের বরাত দিয়ে সানডে টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, সুখী বেগম ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মির’ (এফএসএ) সদস্যের কাছে আকুতি জানাচ্ছেন, যাতে তাঁকে যুক্তরাজ্যে ফেরার বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়। এফএসএ সিরিয়ার আসাদ সরকার বিরোধী একটি বিদ্রোহী দল। তারা আইএসের মতাদর্শেরও বিরোধী।
সুখী বেগম দাবি করেন, তাঁর স্বামী মুফতা আলদ্বীন গত বছরের শুরুর দিকে আইএসে যোগ দেন। এর চার মাস পর স্বামীকে ফিরিয়ে আনতে তিনি সন্তানদের নিয়ে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় যান। গত দশ মাস স্বামীর সঙ্গে আল-বাব শহরে বসবাসের সময় তিনি বিদেশি যোদ্ধাদের সন্তানদের ইংরেজি শেখাতেন।
সম্প্রতি আল বাব শহরটি মার্কিন জোটের বিমান হামলার শিকার হলে তিনি চূড়ান্তভাবে আইএস ছেড়ে আসতে মনস্থির করেন। আইএস ত্যাগের বিষয়ে স্বামীকে রাজি করাতে না পেরে তিনি এমন একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যিনি আইএস থেকে সুখী বেগমকে পালাতে সাহায্য করেন। একদিন তাঁর স্বামী নিকটবর্তী আলেপ্পো শহরে যুদ্ধ করতে গেলে তিনি সন্তানদের নিয়ে এলাকা ছাড়েন।
সুখী বেগম বলেন, একদিন ভোর পাঁচটায় সন্তানদের বোরকা পরিয়ে তিনি বাসা থেকে বের হন। বোরকা পরিহিত আরও দুই নারীসহ তাঁদের ওই লোক ট্যাক্সিতে করে তুরস্ক সীমান্তবর্তী আজাজ শহরে পৌঁছে দেন। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তুরস্কে প্রবেশ করতে সেখানে এফএসএ সদস্যদের সাহায্য কামনা করেন সুখী বেগম।
তবে সুখী বেগমের ওই ভিডিওটি কবে ধারণ করা হয় সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। আবার সুখী বেগম সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তুরস্কে পৌঁছেছেন কিনা তা নিয়েও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। সানডে টাইমের ওই খবরে দাবি করা হয়েছে, সীমান্তে কড়া নিরাপত্তার কারণে দীর্ঘ ১৭ দিন চেষ্টা করেও এফএসএ সদস্যরা সুখী বেগমকে তুরস্কে পৌঁছে দিতে পারেনি।
অন্যদিকে আইএস বিরোধী তুরস্ক ভিত্তিক সংগঠন ‘আই অন দি হোমল্যান্ড’ এর এক কর্মী আহমেদ আব্দুল কাদের টেলিগ্রাফের কাছে দাবি করেছেন, তিনি নিজে সুখী বেগম ও তাঁর সন্তানদের সিরিয়া থেকে তুরস্কে আসতে সাহায্য করেছেন। সুখী বেগম তুরস্ককে নিজেকে নিরাপদ বোধ করছেন না। কারণ, আইসিসের গুপ্তচররা তাদের খুঁজে বের করে ফেলতে পারেন। এ জন্য তাঁরা দ্রুত যুক্তরাজ্যে ফিরতে চান।
যুক্তরাজ্যের সাত শতাধিক নাগরিক সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দিয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে কমপক্ষে ৭৫ জন নারী রয়েছেন বলে যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করে। সিরিয়ায় পাড়ি দেওয়া যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতও রয়েছেন। পোর্টসমাউথের পাঁচ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ আইএসের পক্ষে লড়াই করতে গিয়ে ইতিমধ্যে সিরিয়ায় নিহত হয়েছেন বলে জানা যায়।