স্থানীয় সরকারের অধীন ৬০ ভাগ সড়কই ভাঙাচোরা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সারাদেশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন সড়কের দশা খুবই করুণ। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে পিচ উঠে সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের দুই পাশ ভেঙে দেবে যাচ্ছে।
এর মধ্যে দিয়েই চলাফেরা করছে গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষ। ভাঙাচোরা এসব রাস্তায় চলাফেরায় দুর্ঘটনাও কম ঘটছে না।
সম্প্রতি এলজিইডির এক প্রতিবেদনে এ চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলজিইডির ৯০ হাজার কিলোমিটার সড়কের ৬০ শতাংশের জরুরি সংস্কার প্রয়োজন।
অভিযোগ রয়েছে, এলজিইডির এ সড়ক সংস্কারে সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা ব্যস্ত নতুন সড়ক নির্মাণে। এজন্য সড়ক সংস্কার খাতে দেওয়া হচ্ছে যৎসামান্য বরাদ্দ।
নতুন সড়ক নির্মাণে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। অবশ্য অর্থমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছিলেন, নতুন সড়ক নির্মাণের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ করা হবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতিমধ্যে সড়ক সংস্কারের একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। নীতিমালায় সড়ক সংস্কারে রাজস্ব বরাদ্দের পাশাপাশি প্রতিটি প্রকল্পের শুরুতে সংস্কারের নামে একটি বরাদ্দ রাখা হবে। এ বরাদ্দ দিয়ে সংস্কার কাজ হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে এলজিইডির (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) আওতায় পাকা সড়ক রয়েছে ৯০ হাজার ৪৪৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে উপজেলা সড়ক ২৯ হাজার ৭৩৫ কিলোমিটার, ইউনিয়ন সড়ক ২২ হাজার ১৮ কিলোমিটার, গ্রাম সড়ক ক শ্রেণীর ৩০ হাজার ৯৫০ কিলোমিটার এবং খ শ্রেণীর ৭ হাজার ৭৪৬ কিলোমিটার।
এই সড়কগুলোর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার কিলোমিটারের অবস্থা বেহাল। যার মধ্যে গ্রাম সড়কই বেশি। এ সড়কগুলো সংস্কারে বার বার এলজিইডি থেকে মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দেওয়া হলেও কাজে আসছে না। বিগত ৬ বছরে সড়ক সংস্কারে যৎসামান্য বরাদ্দ থাকায় উল্লেখযোগ্য কোনো সড়ক সংস্কার হয়নি।
২০০৯-১০ সালে এ সড়ক সংস্কারে বরাদ্দ দেওয়া হয় মাত্র ৫০৮ কোটি টাকা, ২০১০-১১ অর্থবছরে দেওয়া হয় ৬০০ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে দেওয়া হয়েছে ৬২৫ কোটি টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেওয়া হয় ৭০০ কোটি টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৮০০ কোটি টাকা, গেল ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৯০০ ৭৫ কোটি টাকা। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ২৫ কোটি টাকা।
দেখা গেছে, সরকারের এ বরাদ্দের অর্থের উল্লেখযোগ্য অংশই চলে যায় রাস্তার দু’পাশে মাটি ভরাট এবং ছোট ছোট খানাখন্দ ভরাটে। এ টাকা দিয়েও উল্লেখযোগ্য কোনো সংস্কার হয়নি। ফলে রাস্তাগুলো বেহাল দশাই থেকে যাচ্ছে।
পাশাপাশি এক শ্রেণীর লোক এসব রাস্তার ওপর অবৈধ দখল কায়েম ও অপব্যবহার করে মানুষের চলাচল বিঘ্নিত করছে।
উন্নয়মূলক কর্মকাণ্ডে বিগত ৫ বছরের জন্য এমপিদের নামে ১৫ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই সময়ে এমপিরা বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে এ টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু কেউ এ অর্থ সড়ক সংস্কারের কাজে ব্যবহার করেননি। তারা ব্যস্ত ছিলেন গ্রামের কাঁচা সড়ক পাকা করার কাজে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে ১২ হাজার কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পাকা হলেও এক কিলোমিটার বিদ্যমান সড়কও সংস্কার হয়নি। প্রতিবেদনের এলজিইডির মোট সড়কের ৬০ শতাংশ সড়কই সংস্কার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এ সড়কের মধ্যে বেশিরভাগ রয়েছে দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের সড়ক। প্রতিবেদনের কয়েকটি জেলার সড়কের বিবরণও তুলে ধরা হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের সড়কের মধ্যে যশোর জেলার সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল। যশোরের আড়াই হাজার কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে তার প্রায় অর্ধেকই খুব খারাপ।
বরিশাল জেলার সাড়ে আট হাজার সড়কের মধ্যে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এগুলোর বেশিরভাগ গ্রামের সড়ক। কিছু উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক রয়েছে।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ৫টি সড়ক, দাকোপ উপজেলার কয়েকটি সড়কসহ খোটাখালি জিসি বাজার থেকে বানিশান্তা পর্যন্ত সড়ক জরুরি সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। রংপুরের প্রায় ৩০০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের অভাবে চলাচলে মানুষের ব্যাপক কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।
ভোলা ও পিরোজপুরের এলজিইডির বেশিরভাগ রাস্তার অবস্থা খারাপ। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় রাস্তাগুলো সংস্কার করা যাচ্ছে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সিলেটে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের তিনটি সড়কের দুটি সড়কেরই নাজুক অবস্থা। এছাড়া জকিগঞ্জ-আটগ্রাম সড়ক, জকিগঞ্জ-শেওলা সড়কসহ প্রায় ১০০টি সড়ক সংস্কার জরুরি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলজিইডির আওতায় যেসব সড়ক নির্মাণ হচ্ছে তা একেবারেই নিম্নমানের। কমিশন ভাগাভাগি করে যা অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে একেবারেই দায়সারাভাবে বেশির ভাগ রাস্তা তৈরি হওয়ায় অল্পদিনের মধ্যেই তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এসব দেখাশোনার দায়িত্ব যাদের ওপর তাদের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, কোনো প্রকল্পের অধীনে সড়ক সংস্কার হয় না। সরকারের রাজস্ব বাজেটের অর্থ থেকেই সড়ক সংস্কারের কাজ করতে হয়। বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় কম থাকায় বড় ধরনের কোনো সংস্কার করা যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থায় সরকারের উচিত মহাসড়কের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের সড়ক সংস্কারে জোর দেওয়া। কারণ গ্রামাঞ্চলে সড়কের এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, এটি জরুরি সংস্কার না করলে বেশিরভাগ সড়কই শিগগিরই কাঁচা সড়কে পরিণিত হবে।