সিলেটে এবার ‘পাওনা টাকা চাওয়ায়’ শিশুকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ

Akmol Hussainসুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেটে আবারো নির্যাতনের পর শিশু হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে নিহতের বাবা ও পুলিশ সদস্যদের বক্তব্যে ভিন্নতা পাওয়া গছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা এখলাছ মিয়া বাদী হয়ে দুইজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জনকে আসামি করে গত ২১ আগস্ট জালালাবাদ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে, এ ঘটনায় তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বেনু চন্দ্র দেব জানান, ময়না তদন্ত করা হয়েছে, সপ্তাহ খানেকের ভেতরে রিপোর্ট আসবে, এর আগে কিছু বলা যাবেনা। মামলাটির স্পর্শকাতর হওয়ায় আসল রহস্য উদঘানের জন্য তদন্ত চলছে বলে তিনি জানান। জানা যায়, ১১ বছরের শিশু আকমল হোসেন শহরতলীর ঘোপালে ফুড মার্ক ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে কাজ করতো। তার বাবা বাবা এখলাছ মিয়া দিনমজুেরর কাজ করতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি দোয়ারাবাজার উপজেলার পাহাড়পুর (পূর্ব রাজনপুর) গ্রামে। বাবাকে সহযোগিতা করতে আকমল দু‘বছর আগেই পড়া-লেখা ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য। শুরু থেকেই ১৩শ’ টাকা বেতনে সে ওই বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে কাজ করতো। একই ফ্যাক্টরীতে কাজ করতো তাই ভাই আফজল হোসেন। সে গেল ঈদের পর থেকে আর কাজে আসে নাই। আফজলে ১৫দিনের বেতন বকেয়া ছিল ফ্যাক্টরীতে। গত ১৫ আগস্ট ফ্যাক্টরির মালিক মো. ওহাব আলী ও মিস্ত্রি আব্দুর রহমানের কাছে আকমলের বাবা এখলাছ মিয়া আফজলের বকেয়া বেতনের টাকা চাইতে গেলে কথাকাটাকাটি হয়। এর পর থেকে ওহাব আলী ও আব্দুর রহমান শিশু আকমলকে নির্যাতন করে আসছিল।
শিশু আকমলের বাবা এখলাছ মিয়া জানান, গত ২০ আগস্ট বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ওহাব আলী ও আব্দুর রহমান ফ্যাক্টরির শৌচাগারে নিয়ে আকমলকে দেয়ালের সাথে সেট করে ব্যাপক মারধর করে। ইটের টুকরা দিয়ে তার মাথা তেঁতলে দেয়। এতে আকমলের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত তাকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায় তারা। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে মর্গের হিমাগারে রেখে দেয়।
এদিকে ওইদিন রাত সোয়া ৮টার দিকে ছেলের খবর পেয়ে নিহত আকমলের বাবা ওসমানী হাসপাতালে ছুটে গিয়ে আকমলের মাথা তেঁতলানো, মুখমন্ডলের ডান পাশ ফোলা এবং কান ও নাক দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে- দেখতে পান।
গতকাল শনিবার এই প্রতিবেদকের কাছে এভাবেই ছেলেকে নির্যাতন করে হত্যার বর্ননা দেন শিশু আকমল হোসেনের বাবা দিনমজুর এখলাছ মিয়া।
তিনি বলেন, ওই ফ্যাক্টরীতে আমার ২য় ছেলে আফজল হোসেনও কাজ করত। গেল ঈদের পর সে আর যায়নি। আকমল একাই যায় কাজে। তবে সেখানে আফজলের ১৫দিনের বেতন বাকি ছিল। ঘটনার দিন বিকাল সাড়ে ৩টায় আমার ছেলে মাথা ফেটেঁছে বলে ফ্যাক্টরীর শ্রমিক কামরুল হোসেন খবর দেয়।
ছাতক থাকায় তিনি শ্যলককে ছেলের খোজখবর নেওয়ার কথা বলেন। সে ফ্যাক্টরীতে গিয়ে মোবাইল ফোনে বলে ফ্যাক্টরীতে যাওয়ার জন্য। ফ্যাক্টরীতে গিয়ে দেখি তাকে ৩০-৩৫ জন লোক ঘিরে রেখেছে। আমি ছেলের খোঁজ করলেই এক শ্রমিক বলে, আপনার ছেলে আছে ওসমানী মেডিকেলে। ওই ফ্যাক্টরীর শ্রমিক কামরুল ইসলামকে (১২) জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, আমি গোসল করতে গিয়ে আকমলের চিৎকার শুনে গিয়ে দেখি সে প্রশ্রাব খানার দেয়ালের নিচে পড়ে আছে। সাথে সাথে আমিও চিৎকার করলে মিস্ত্রি আব্দুর রহমান এসে তাকে মেডিকেল নিয়ে যায়।
তিনি বলেন মেডিকেলে গিয়ে দেখতে পাই- আকমলের মাথা তেঁতলানো, মুখমন্ডলের ডান পাশ ফুলা এবং কান ও নাক দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে।
নিহত আকমলের বাবা বলেন, সামান্য বকেয়া বেতন চাওয়ার জের ধরে আমার ছেলেকে এভাবে নির্যাতন করে হত্যা করব ভাবতেও পারিনা। গরিব মানুষ, ছেলে হত্যার বিচার চাই।
এদিকে, বহুল আলোচিত শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই ৪২ দিনের মাথায় ওই এলাকায় আরেক শিশু মো. আকমল হোসেনকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে ঘাতকরা।
এ ঘটনায় এখলাছ মিয়া বাদী হয়ে দুইজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জনকে আসামি করে গত ২১ আগস্ট এসএমপির জালালাবাদ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর ১৩।
মামলার আসামিরা হচ্ছে- শহরতলীর টুকেরবাজার ঘোপাল এলাকার লন্ডনী বাড়ি ও ফুড মার্ক ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরির মালিক মো. ওহাব আলী (৫৫) ও গোলাপগঞ্জ থানার ফুলসাঈন গ্রামের মৃত হাসিবের ছেলে বর্তমানে ঘোপাল ফুড মার্ক ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরির মিস্ত্রি আব্দুর রহমান (৪০)। কিন্তু দুদিনেও ওই ফ্যাক্টরির মালিক ও মিস্ত্রিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশ বলছে মামলাটির তদন্ত চলছে।
গত শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ ময়না তদন্ত শেষে আকমল হোসেনের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। একই দিন মাগরিবের পর নামাজের পর জানাজা শেষে তার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত আকমল চার ভাই ও দুই বোন। ভাইদের মধ্যে আকমল তৃতীয়।
মামলা সুত্রে জানা গেছে, জীবিকা নির্বাহের জন্য জালালাবাদ থানা এলাকার ঘোপালস্থ ফুড মার্ক ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে শিশু আকমল হোসেন দুই বছর ধরে ১৩শ’ টাকা বেতনে চাকরি করে আসছিল। ঘটনার ৫/৬ দিন পূর্বে ফ্যাক্টরির মালিক মো. ওহাব আলী ও মিস্ত্রি আব্দুর রহমানের কাছে আকমলের পিতা এখলাছ মিয়া বকেয়া বেতনের টাকা চাইতে গেলে কথাকাটাকাটি হয়। এর পর থেকে ওহাব আলী ও আব্দুর রহমান শিশু আকমলকে নির্যাতন করে আসছিল। গত ২০ আগস্ট বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ওহাব আলী ও আব্দুর রহমান ফ্যাক্টরির শৌচাগারে নিয়ে আকমলকে দেয়ালের সাথে সেট করে ব্যাপক মারধর করে। ইটের টুকরা দিয়ে তার মাথা তেঁতলে দেয়। এতে আকমলের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত তাকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায় তারা। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে মর্গের হিমাগারে রেখে দেয়।
এদিকে ওইদিন রাত সোয়া ৮টার দিকে ছেলের খবর পেয়ে নিহত আকমলের পিতা ওসমানী হাসপাতালে ছুটে গিয়ে আকমলের মাথা তেঁতলানো, মুখমন্ডলের ডান পাশ ফুলা এবং কান ও নাক দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে দেখতে পান। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বেনু চন্দ্র দেব জানান, ময়না তদন্ত করা হয়েছে, সপ্তাহ খানেকের ভেতরে রিপোর্ট আসবে, এর আগে কিছু বলা যাবেনা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলাটির স্পর্শকাতর হওয়ায় আসল রহস্য উদঘানের জন্য তদন্ত চলছে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের তৎপর রয়েছে পুলিশ। তবে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকতার হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলে পরির্দশন করে দেখছি, ছেলেটি দেয়াল চিপায় মারা গেছে।