শেষ মুহূর্তে উদ্বোধন তালিকা থেকে বাদ পড়েছে কাজির বাজার সেতু
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ শেষ মুহূর্তে এসে বাদ পড়েছে সিলেটের সুরমা নদীর ওপর নির্মিত কাজির বাজার সেতুর উদ্বোধন। ২০ আগস্ট বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সেতু উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছিল। তবে এ কর্মসূচীর মধ্যে গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার সড়কে কুশিয়ারা নদীর ওপর নির্মিত চন্দরপুর-সুনামপুর সেতু ও সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর ওপর নির্মিত সুরমা সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু দু’টোর উদ্বোধন করার কথা। প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর উদ্বোধনের সময়ে কোনো প্রভাব পড়বে কি না এখনও তা নিশ্চিত হতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
সরকার দলীয় সূত্র জানায়, সিলেটে বাস্তবায়নাধীন সরকারের এই বৃহৎ প্রকল্পটির উদ্বোধন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করা নিয়ে এক ধরণের অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল। নীরবের চেয়ে সরবে উদ্বোধনই চেয়েছিলেন সিলেটবাসী। চার লেন বিশিষ্ট এই সেতু নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ঐকান্তিক ইচ্ছেও তাই। এজন্যেই শেষ মুহূর্তে এসে ভিডিও কনফারেন্সে উদ্বোধন থেকে বাদ পড়েছে কাজির বাজার সেতুর নাম। এলাকার নামে পরিচয় উপস্থাপন হলেও এখনও সেতুটির আনুষ্ঠানিক নাম ঘোষণা হয়নি। নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন দাবি রয়েছে।
সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী চন্দন কুমার বসাক বুধবার সকাল ১০ টায় জানান, কাজিরবাজার সেতুসহ তিনটির উদ্বোধনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি এসেছিল। শেষ মুহূর্তে এসে কাজির বাজার সেতুর নাম বাদ পড়েছে। বাকি দুই সেতুর উদ্বোধন নির্ধারিত সময়েই হবে। তবে কী কারণে কাজির বাজার সেতুর নাম উদ্বোধন থেকে বাদ পড়েছে, তা তাঁর জানা নেই বলে জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আকস্মিক দিল্লি সফর করলেও উদ্বোধনের দিনক্ষণ এখন পর্যন্ত আগেরটাই রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, চন্দরপুর সেতু ও সুরমা সেতুর উদ্বোধন সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, আইন-বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর থাকার কথা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ২০০৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সিলেট নগরীর শেখঘাট এলাকায় সুরমা নদীর ওপর কাজির বাজার সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৬ সালের ফেব্র“য়ারিতে নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৮ মাসে (২০০৭-০৮ অর্থবছরে) তা সম্পন্নের কথা থাকলেও সময় লেগেছে ১০ বছর। সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্যে স্টিল আর্চসহ (খুঁটি) বোরড পাইল ফাউন্ডেশনের ওপর প্রি-স্ট্রেসড কংক্রিট গার্ডার সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সেতুর দৈর্ঘ ৩৬৬ মিটার প্রস্ত ১৯ মিটার। তত্ত¡াবাবধায়ক সরকারের সময় কাজ বন্ধ রাখা হয়। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার মতায় আসার পর প্রকল্প সংশোধন করে। ২০১২ সালে পুনরায় সেতুর কাজ শুরু হয়। স্টিলের আর্চ ছাড়াই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৮৯ কোটি টাকা। ঢাকার মেসার্স কামাল অ্যাসোসিয়েটস প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নকশা সংশোধন ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কাজিরবাজার সেতুতে ১০০ ফুট করে চারটি স্টিলের আর্চ নির্মাণের কথা ছিল। এ কাজের অংশ হিসেবে সেতুর পাইলিংয়ে অতিরিক্ত প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু বিপুল এ অর্থ ব্যয়ের পরও আর্চ সংযুক্ত হয়নি।
এ ব্যাপারে সওজের কর্মকর্তারা জানান, ডিজাইন অনুযায়ী ৭০০ টনের আর্চ লাগানোর কথা। কিন্তু এখন ৯০০ টন ওজনের আর্চ লাগাতে হবে। সেতুর ওজন বেড়ে যাবে বলে তা লাগানো হয়নি।
এদিকে, ২০০০ সালে চন্দরপুর-সুনামপুর সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে সুনামগঞ্জ শহরের মলিকপুর এলাকায় ‘সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এর প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয় ২৩ কোটি টাকা। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার পর নতুনভাবে ৪০২ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুর ব্যয় ধরা হয় ৬৭ কোটি টাকা।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিলেট ও সুনামগঞ্জের ৩ সেতু সহ দেশের ছয়টি জেলার মূল সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যেমে প্রধানমন্ত্রী এসব সেতুর উদ্বোধন করবেন বলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।