প্রজন্ম গড়ে উঠুক নৈতিক শিক্ষায়

Raju Ahmedযদিও আলোচিত মুভি বজরঙ্গি ভাইজান এখনো সহজলভ্য হয়নি তবুও যারা আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এ মুভিটি দেখার সুযোগ পেয়েছে তাদের প্রায় সবাই এ মুভিটিকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় ভাসিয়েছে । পাকিস্তানের ছয় বছর বয়সী বোবা মেয়ে সায়রা কিংবা বজরঙ্গী ভাইজানের মুন্নির অভিনয় দেখে চোখের অশ্রু সংবরণ করতে পেরেছে এমন লোকের সংখ্যা বোধহয় খুব বেশি নয় । শত্রুদেশের একটি মেয়েকে বজরঙ্গি ভাইজান যেভাবে আঁকড়ে রেখেছেন তার প্রশংসা কোন উপমা দ্বারাই প্রকাশ করা সম্ভব নয় যদিও অভিনয়ে সব কিছুই সম্ভব । তবুও দালালের চক্রান্তে মুন্নি যখন পতিতালয়ে বিক্রি হচ্ছিল তখন সে দৃশ্য দেখে বজরঙ্গি ভাইজানের চোখ দিয়ে যেমন অশ্রুর বৃহদাকৃতির ফোঁটা গড়িয়েছে তার চেয়ে কম কিছু ঝড়েনি দর্শকদের চোখ থেকে । মুন্নিদের চরিত্রগুলোই তো সমাজের সবচেয়ে জীবন্ত চিত্র হিসেবে পরিচিত । শিশু অভিনেত্রী মুন্নির জন্য যারা বুক ভাসিয়েছি তারা আমাদের চারপাশের অসহায় ছোট্ট-ছোট্ট মেয়েগুলোকে সহায়তার মানসিকতায় কতটুকু এগিয়ে এসেছি ? সিনেমার মুন্নিরা বাস্তবে সুরক্ষিত থাকলেও আমাদের দেশের হাজার হাজার মুন্নির বয়সী মেয়েরা প্রতিদিন রক্তাক্ত হচ্ছে গৃহ-কর্তীর নির্য্যাতনে আবার কোথাও কিছু কুলাঙ্গারের মনোস্কামনা পূরণের পণ্য হয়ে ? পৃথিবীর মানুষে রুপী অমানুষদের আঘাত সয়ে সবাই যে বেঁচে থাকতে পারছে তেমনটাও নয় । সমাজের সেই হাজারো মুন্নির জন্য আমরা নিভৃতে কাঁদি তো ? তাদের জন্য একটু হলেও ভাবি তো ??
একটু পিছনে ফিরে তাকাচ্ছি । গত বৃহস্পতিবার কলেজ ক্যাম্পাসে হন্যে হয়ে ঘুরছিলাম কিছু নিম পাতা সংগ্রহের জন্য । নিম গাছের খোঁজ পেলেও গাছ থেকে সেগুলো ছেঁড়ার লোক পাচ্ছিলাম না । অনেক খোঁজাখুজির পর তিনটা বাচ্চা ছেলে পেলাম । ওদের পরণে ময়লাযুক্ত ছেঁড়া প্যান্ট, বোতামহীন জামা, চুলগুলোর অবস্থা দেখলে যে কেউ বলে দিবে অনেক কাল হল ওগুলো তৈল-চিরুণীর ছোঁয়া পায়নি । কতইবা বয়স হবে ওদের ? বড়টার বছর আটেক আর ছোট দুইটার পাঁচের বেশি নয় । আমার উদ্দেশ্য বলতেই ওদের মুখে হাসি ফুটে উঠল । আমার কাজের বিনিময় হিসেবে ৬০ টাকা দাবী করে বসল । আমার সাথে যে বন্ধুরা ছিল তাদের একজন ধমক দিয়ে বলল দশ টাকায় করবি ! ওরা একটু মিনমিনে ভাব করে বলল বিশ টাকা দিয়েন । আমি তাতে রাজি হয়ে গেলাম তবে শুধু বললাম-তোমাদের ৩ জনকে নগদ টাকা দেবনা । তোমরা হোটেল থেকে ৩০ টাকার মধ্যে যা খেতে চাও তাই খাওয়াবো । আমার প্রস্তাবে ওরা কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না । অবশেষে আরেক বন্ধু যখন বলল-টাকা দিয়ে কি করবি তা না বললে টাকা দেব না তখন আঁধো কাঁদো কাঁদো স্বরে তিন জনেই বলল ঘাম খাবো । বয়স মাত্র ৫-৮ অথচ এ বয়সেই মাদকের হাতেখড়ি । বয়স যত বাড়বে ওদের মাদকের প্রতি আসক্তিও নিশ্চয়ই ততো বাড়বে । আজ ওরা মাদক খাচ্ছে কিন্তু নিকট ভবিষ্যতে এমন দিন আসবে যেদিন মাদক ওদেরকে খেয়ে ফেলবে । নেশার টাকা জোগাড় করতে না পেরে ওরাই একদিন সমাজবদ্ধ মানুষের নিরাপত্তার চরম হুমকি হবে । সু-শৃঙ্খল সমাজকে ধ্বংস করে দিতে ওরাই অগ্রনায়ক হবে ।
আমরা মানুষের কাতারে আছি কিনা তার হিসাব মেলাতে হিমশিম খাই যখন শুনি-ক্লাস টুয়ের শিশু ধর্ষিতা । ধর্ষণ কিংবা মানুষের জৈবিক চাহিদা সম্পর্কে যার কোন জ্ঞান নাই, যার সারা দিন কাটে কার্টুন চ্যানেল, গোপাল ভাঁড়, সিএন, ডরিমন দেখে কিংবা কম্পিউটারে গেম খেলে সেই শিশুটি যখন ধর্ষিতা হয় তখন নিজেকে আর মানুষ ভাবতে পারি না । আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা হয় যখন শুনি, শিশুটিকে ধর্ষণ করেছে তার কোন শিক্ষক কিংবা রক্তসম্পর্কীয় কেউ !! যখন কিছু লিখি বা বলি তখন সবার শুরুতেই বলি, একটা পরিবর্তন চাই !! কিন্তু পরিবর্তন চাই বলে বলে যদি মুখে ফেনা তুলে ফেলি তাতেই বা কি হবে যতক্ষন সমস্যার মূল খুঁজে বের করতে না পারবো । গতানুগতিক শিক্ষার চেয়ে আজ আমাদের বেশি দরকার নৈতিক শিক্ষা । আমরা যা শিখছি তারা বৃহদাংশ অর্জন করছি সংস্কৃতি থেকে । আমাদের অনুসরণীয় সংস্কৃতিই যখন আমাদের শুধু যৌবনের সুড়সুড়ি শিক্ষা দিচ্ছে তখন তার বাস্তব প্রয়োগ না হয়ে উপায় আছে ? শিশুকে সঠিক শিক্ষা প্রদানের জন্য পরিবার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান । সমাজে আজ যারা ধর্ষক এবং যারা ধর্ষিতা হচ্ছে তারা পরিবারের বাইরের কেউ নয় । সুতরাং পরিবার থেকেই যদি শিশু নৈতিক শিক্ষায় বেড়ে ওঠে তবে তার দ্বারা অপরাধ কর্মে জড়ানোর সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে । ছিন্নমূল শিশুদের পূণর্বাসনে রাষ্ট্রকে আরও যত্নবান হতে হবে । সমস্যার মূলে যদি সমাধান করা যায় তবে সেটা সর্বাধিক ফলদায়ক হবে ।

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
facebook.com/raju69mathbaria/