বিচারহীনতায় শিশু নির্যাতন-হত্যা বাড়ছে : সুলতানা কামাল
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতির’ কারণে দেশে শিশু নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড বাড়ছে মন্তব্য করে এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। এসব নির্যাতন-অপরাধ দেখে ‘চুপ করে থাকার সংস্কৃতি’ থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে শিশু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ‘চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ আয়োজিত’ এক সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
আইন ও সালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, “সামাজিক প্রতিরোধ একটি শক্তি, প্রতিরোধের ইচ্ছা জাগ্রত করতে হবে। কেন আমরা ভাবছি না এটি প্রতিরোধের দায় আমারও.. চুপ করে থাকার এই সংস্কৃতি বদলাতে হবে।
“আমরা মুখে অনেক কিছুই বলছি, কিন্তু যে যেখানে আছে কাজ করছে না।”
“তিনজন যখন একটি শিশুকে মারে তখন বাকি পাঁচজন কেন চুপ করে থাকে?,” ক্ষোভের সঙ্গে প্রশ্ন করেন তিনি।
সম্প্রতি সিলেটে শিশু রাজন ও খুলনায় রাকিবকে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে সুলতানা কামাল বলেন, “এসব ঘটনা অপ্রতিরোধ্যভাবে ঘটছে। এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এগুলো আমাদের বারবার সংকেত দিচ্ছে সমাজে মানবিক অবক্ষয়ের কী অবস্থা।”
এই নির্মমতা, নৃশংসতা গায়ে কাঁটা দেওয়ার মত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যারা এগুলো ঘটাচ্ছে তাদের কোন রকম জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হচ্ছে না।”
রাজনের ঘটনায় পুলিশ উদাসীন ছিল বলেও অভিযোগ করেন সুলতানা কামাল। “অপরাধ করে কীভাবে দেশ ছেড়ে পালায়? রাষ্ট্র কী ব্যবস্থা, কী ভূমিকা রাখছে?,” প্রশ্ন করেন তিনি।
গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অভিযোগ তুলে শিশু সামিউল ইসলাম রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করে কয়েকজন। ওই নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করে তারা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিলে সারা দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সিলেটের জালালাবাদ থানার এক পরিদর্শক ও দুই এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
রাজন হত্যার পর মাস না পেরোতেই গত সোমবার রাতে খুলনা নগরীর টুটপাড়ায় একটি গ্যারেজে মলদ্বার দিয়ে হাওয়া ঢুকিয়ে হত্যা করা হয় মো.রাকিব নামে ১২ বছর বয়সী আরেক শিশুকে।
পরদিন বরগুনার তালতলী উপজেলায় মাছ চুরির অভিযোগে রবিউল আউয়াল নামে ১০ বছরের এক শিশুকে শাবল দিয়ে আঘাত করে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে সেভ দ্য চিলড্রেনের আবাসিক প্রতিনিধি মাইকেল ম্যাকগ্রাথ, হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আব্দুছ সহিদ মাহমুদ, টিডিএইচ নেদারল্যান্ডস’র কান্ট্রি ডিরেক্টর মাহমুদুল কবির, ওয়ার্ল্ড ভিশনের উইলফ্রেড সিকো কোলা, প্ল্যানের এস এম রশিদ বক্তব্য রাখেন।
আব্দুছ সহিদ মাহমুদ বলেন, গত জানুয়ারি থেকে জুলাই-এই সাত মাসে দেশে ১৯১ শিশু খুন এবং ২৮০ শিশু ধর্ষিত হয়েছে। শুধু জুলাই মাসেই খুন হয়েছে ৩৭ শিশু, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫০টি।
“এই চিত্র অত্যন্ত উদ্বেগের। সরকার এটি প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎ চিত্র আরও ভয়াবহ হবে।”
শুধু গণমাধ্যমে খবর হলেই শিশু নির্যাতনের বিষয়ে সরকার নড়াচড়া করে বলেও অভিযোগ করে তিনি বলেন, “কিছুদিন পর ধামাচাপা পড়ে। সেটি যেন না হয়।”
সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাইকেল ম্যাকগ্রাথও শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বাংলাদেশে কেন এসব ঘটছে? দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারের সংস্কৃতি রয়েছে এ দেশে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
“সরকার শিশুদের জন্য যে নীতিগুলো গ্রহণ করেছে তার আলোকেই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।”
সংবিধানে শিশু সুরক্ষার বিষয়টি শুধু কথায় নয়, কাজে পরিণত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “রাষ্ট্র যদি তার করণীয় না করে তবে আমরা শত চেষ্টাতেও এসব অন্যায় ঠেকাতে পারব না।”
গণমাধ্যমে নির্যাতনের সংবাদ পরিবেশনে শিশুদের উপর যাতে বিরূপ প্রভাব না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখার অনুরোধ জানিয়ে মাহমুদুল কবির বলেন, “পুরো জাতির লজ্জিত হওয়া উচিৎ যে, এ দেশে এমন ঘটনাগুলো ঘটছে।”