দুই বছরেও উদ্ধার হয়নি অপহৃত শিশু জয়ী
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ জয়ী কি আর ফিরে আসবে না? মা মা বলে একের পর এক দুষ্টামী করবে না। কি দোষে ওরা কেড়ে নিলো আমার বুকের ধন কে? আপনারা কি লেখনির মাধ্যমে ফিরিয়ে দিতে পারেননা আমার ফুটফুটে জয়ীকে। অফিস থেকে আসার পর এখন আর আমার জয়ীকে খোঁজে পাইনা। সে কি আর নতুন নতুন খেলনার বায়না করবে না আমার কাছে? এভাবেই সাংবাদিকদের দেখে মেয়ের ছবি বুকে নিয়ে পাগলের মতো বিলাপ করছিলেন সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী ওসমানীনগর উপজেলার ইলাশপুর গ্রামের শিক্ষক সন্তোশ দেব এর স্ত্রী শর্বাণী দেব তুলী।
গত ২১ জুলাই নিরবে পার হয়ে গেল জয়ী অপহরনের দুই বৎসর। গত দুই বছর ধরে অপহরণের স্বীকার হয়ে নিখোঁজ রয়েছে তাঁর এক মাত্র চার বছর বয়সী শিশু স্নিগ্ধা দেব জয়ী। সরেজমিনে ইলাশপুর গ্রামের শিক্ষক সন্তোশ দেবের বাড়িতে গেলেও দেখা যায় এক হৃদয়বিধারক দৃশ্য। সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে পাগলের মতো প্রলাপ করেন মা শর্বানী। বিছানায় অসুস্ত হয়ে পড়ে থাকা দাদা-দাদী শয্যাসায়ী হয়েও হাউমাউ করে কান্নাকাটি করতে থাকেন। তাদের একটাই প্রশ্ন মৃত্যুর আগে কি আদরের নাতনী জয়ীকে একটি বার কোলে নিয়ে শান্তিতে মরতে পারব! আপনারা কি আমাদের জয়ীকে ফিরিয়ে দিতে পারেন না। পরিবারে থাকা অনান্য সদস্যরাও দিশেহারা হয়ে আছেন। তাদের একটাই দাবি জয়ী কি ফিরে আসবে না? আমাদের পরিবারে কি চির দিনের জন্য অশান্তি চলে এসেছে।
জানা যায়, ২০১৩ সালের ২১ জুলাই সিলেট নগরীর ভাঙ্গাটিকর নবীন ৩৪/৩নং বিজন বিহারী দামের বাসা থেকে নিখোঁজ হয় সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার ইলাশ পুর গ্রামের শিক্ষক সন্তোষ কুমার দেব ও সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী শর্বানী দেব তুলি এক মাত্র কন্যা সন্তান স্নিগ্ধা দেব জয়ী। নিখোঁজের পর সিলেট কোতোয়ালী মডেল থানায় জিডি করনে জয়ী’র পিতা সন্তোস দেব। জিডির সূত্র ধরে তদন্তে নামে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। পুলিশের পরার্মশে অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তিদের আসামী করে মামলাও করেন জয়ী’র শোকাহত পিতা। মামলাটির তদন্তের দ্বায়িত্ব পান লামাবাজার ফাড়ির ইনর্চাজ এসআই সিরাজুল ইসলাম। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত বছরের ২৪ আগষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজির বাজার এলাকার মাছ বিক্রেতা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজলোর সোলেমানপুর গ্রামের আমির উদ্দিনের পুত্র রবিউলকে আটক করেন। তার স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে পুলিশ আটক করে শেখঘাট ভাঙ্গাটকির এলাকার বিনোদ বিহারী দামের ছেলে শঙ্কর দামকে।
রবিউল আদালতে দেয়া তার জবানবন্দিতে জানায়,ঘটনার দিন (২১ জুলাই ২০১৪) শঙ্করের কোলে জয়ীকে দেখে সন্দেহ হলে তিনি পিছু নেন। শঙ্কর শিশু জয়ীকে নিয়ে ওঠেন খেয়া নৌকায়। রবিউলও ওঠেন সে নৌকায়। নৌকাযোগে সুরমা নদী পার হওয়ার পর শঙ্কর শিশুটিকে তুলে দেন নর্থ ইস্ট হাসপাতালের নার্স শেখঘাটের বাসিন্দা অনিতা ভট্টাচার্যের হাতে। তখনই শঙ্করের চোখে পড়ে রবিউল কে। ভয়ে চমকে ওঠে শঙ্কর। এ ঘটনা কাউকে না জানানোর শর্তে ২০০০ টাকা গুঁজে দেন রবিউলের হাতে। পরের দিন শঙ্কর আরও ৫ হাজার টাকা দেন রবিউলকে সতর্ক করেন বিষয়টি যেন কেউ না জানে। পরবর্তীতে জয়ী’র সন্ধানে মাইকিং, পোস্টারিংয়ের দায়ত্বিও নেন রবিউল। আবার সবার অজান্তে সে বার্তা পৌঁছেও দেন শঙ্করের কাছে। শংকরকে আটকের পর পুলিশের কাছে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করলেও আদালত থেকে জামিন পেয়ে যায় শংকর। পরবর্তীতে রবিউল, শংকরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ও কল লিস্টের সূত্র ধরে পুলিশ নিশ্চিত হয় অপহরণের সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে অনিতা ভট্টার্চার্যের। অনেক সন্ধানের পর ২০১৪ সালের ৮ নভেম্বর শ্রীমঙ্গলের সীমান্তবর্তী আমরইল রাবার বাগান এলাকা থেকে পুলিশ আটক করে অনিতাকে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের মাধ্যমে পুলিশি রিমান্ডে নেয়ার পর অনিতার স্বামী কিশোর ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, কোতোয়ালি থানার দুই কর্মকর্তা রিমান্ডে শারীরিক নির্যাতন করেছেন তার স্ত্রী অনিতাকে। অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষনিক দুই পুলিশ অফিসারকে ক্লোজ করেন প্রশাসনের উর্ধ্ধতন কর্মকর্তা।
পরবর্তী অনিতার স্বামীর রিমান্ডের নির্যাতনে অভিযোগটিও উচ্চ আদালতে মিথ্যা প্রমানিত হওয়ার পরও সেই থেকে থেমে,থেমে চলছে শিশু জয়ি উদ্ধার কাজ। পরবর্তীতে মামলাটি এক মাসের মধ্যে জয়ীকে উদ্ধার করার নির্দেশ দিয়ে গত ১৩ এপ্রিল সিআইডিতে প্রেরন করে উচ্চ আদালত। ফলে বর্তমানে মামলাটি সিলেট সিআইডিতে তদন্তাধিন থাকলেও জয়ীকে উদ্ধারের সূরাহা হচ্ছে না। উচ্চ আদালতের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে জয়ী কে কি উদ্ধার করতে পারবেন মামলার বর্তমান তদন্তকারী সিআইডির কর্মকর্তা এমন প্রশ্ন এখন গোটা সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ মানুষের।
ইতিমধ্যে জয়ীকে উদ্ধারের জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসনের উধ্ধর্তন কর্তৃপক্ষ বরাবরে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন তার মা-বাবা। জয়ীর মা-বাবা কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন গ্রেফতারকৃত অনিতা ও শঙ্কর কে যথাযথভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে জয়ীকে উদ্ধার করা সম্ভব। অপহরণের বিষয়টি ধামা-চাপা দেয়ার জন্যই একটি চক্র সংঘবদ্ধভাবে রিমান্ডে নির্যাতন নাটক সাজিঁয়েছে। নির্যাতন নাটকের কৌশলে পাড় পেয়ে যাচ্ছে আমাদের বুকের ধন অপহরণকারীর মুলহোতা অনিতা ও শঙ্কর। অনিতাকে আবারও পুলিশি রিমান্ডে নিয়ে সঠিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আমরা আমাদের শিশু সন্তানের সন্ধান পাব। এ ব্যাপারে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
এ ব্যাপারে সিআইডি সিলেটের পরিদর্শক আব্দুল আহাদ জানান,জয়ী অপহরনরে সাথে অনিতা,শংকরসহ আটককৃত তিন জনের জাবানবন্দী রের্কড আছে। সেই জবানবন্দীর সূত্র থেকে আমরা উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আশাবাদি আটকৃতদের পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করলেও উদ্ধার কাযক্রম আরো এগিয়ে যাবে। এর জন্য আমি জেল হাজাতে থাকা আসামিদের রিমান্ডে আনার জন্য আদালতে আবেদন করেছি।