মধ্যম আয়ের দেশ বনাম সাতাশটি লাশ
পহেলা জুলাই বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্টের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে এ ধাপে উন্নীত হতে আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হয়েছে স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময়। নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশে ও বাংলাদেশীদের জন্য অনবদ্য অর্জন এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নতির পরিচায়ক। মূলত মাথাপিছু জাতীয় আয়ের ওপর ভিত্তি করে দেশগুলোর এই অবস্থান নির্ধারণ করা হয়। জাতীয়ভাবে বার্ষিক মাথাপিছু আয় ১০৪৬ ডলার অতিক্রম করলেই সে দেশ নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়। যদিও বাংলাদেশ ২০১২-১৩ অর্থবছরেই ঐ সীমা অতিক্রম করে এবং তখন মাথাপিছু আয় ১০৫৪ ডলারে পৌঁছে। বিশ্বব্যাংক তখন সে খবর না দিয়ে আমাদেরকে এ সুখবর দিলো দুই বছর পর। অবশ্য এটাই নিয়ম। নিয়মানুযায়ী উন্নতির ধারা তিন বছর স্থায়ী থাকতে হবে। আমরা তাতেও সমর্থ হয়েছি এবং এলডিসি তথা স্বল্পোন্নত দেশ কিংবা গরীব দেশের অপবাদ থেকে মুক্তি পেয়ে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। বিশ্বব্যাংক মোট চারটি স্তরে দেশগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করে থাকে। সে নিয়ামানুযায়ী জাতীয় মাথাপিছু আয় ১০৪৫ পর্যন্ত থাকলে নিম্ন আয়ের দেশ, ১০৪৬-৪১২৫ ডলার জাতীয় মাথাপিছু আয় পর্যন্ত নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ, ৪১২৬-১২৭৩৬ ডলার জাতীয় মাথাপিছু আয় পর্যন্ত উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং জাতীয় মাথাপিছু আয় ১২৭৩৬ ডলারের বেশি হলে উচ্চ আয়ের দেশ বলা হয়। আমাদের দেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের সীমারেখায় অবস্থান করলেও আমাদের উন্নয়নের গতি অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় অধিক বেগবান। সর্বশেষ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমাদের দেশের জাতীয় মাথাপিছু আয় ১৩১৪ ডলারে পৌঁছেছে। সুতরাং নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের সীমা অতিক্রম করে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের সীমায় পদার্পণ করতে আমাদেরকে বর্তমান জাতীয় মাথাপিছু আয়কে বর্তমানের চেয়ে আরও ৩.১৪ গুণ বাড়াতে হবে। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে নিম্ন আয়ের দেশ ৩১টি, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ ৫১টি, উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ৫৩টি এবং উচ্চ আয়ের দেশ ৮০টি। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৫ বছরের মাথায় আমরা যে সীমা অতিক্রম করেছি তার পরবর্তী সীমায় প্রবেশ করা মাত্র ৪-৫ বছরের সম্ভব নয় কেননা এখানে কোন শর্টকাট রাস্তা নাই। বরং ধারাবাহিক অর্জনকে ধরে রেখে আগামী এক দশকের মধ্যে আমরা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের তালিকাভুক্ত হতে পারি। এক্ষেত্রে আমাদেরকে রফতানি বাণিজ্য বাড়াতে হবে, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং রেমিটেন্স বাড়াতে হবে। নি¤œ আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া বাংলাদেশের জন্য যেমন গৌরবের তেমনি বাংলাদেশী হিসেবে এদেশের সকল নাগরিকের জন্যও মর্যাদার বটে। স্বাভাবিকভাবেই যেখানে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় সেখানে শঙ্কাও তৈরি হয়। বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকাভুক্ত হওয়ার পরেই এদেশের অর্থনীতির জন্য প্রতিটি দিন চ্যালেঞ্জের। এখন আমাদের অপেক্ষা শুধু উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ায়। তবে এ অবস্থান আমাদেরকেই তৈরি করে নিতে হবে।
এই অর্জনে দেশের ১৬ কোটি মানুষের অবদান রয়েছে। আমাদের কাক্সিক্ষত অর্জিত এ সুনামকে স্থায়ী করে সামনে ধারাবাহিক করার এখন উপযুক্ত সময়। এজন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করে দেশকে দুর্বার গতিতে সামনে এগিয়ে নিতে হলে সবাইকে সমানভাবে আন্তরিক হতে হবে। সব কিছুর ঊর্ধ্বে দেশের স্বার্থ ও সুনামকে স্থান দিতে হবে। দলীয় কিংবা রাজনৈতিক হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে যেন কোন অপশক্তি জাতীয় অর্জনের গতিপথে বাধার সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নাই। কাজেই রাজনৈতিক সংঘাত ভুলে সবাইকে দেশপ্রেমিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ছাড়া জাতীয় উন্নতির আশা করা প্রায় অসম্ভব। কাজেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে সবার সমান অধিকার ও চর্চার ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে হবে। ক্ষমতার বৈষম্য, আয় বৈষম্য, ধন বৈষম্য কিংবা সুযোগের বৈষম্য রেখে টেকসই উন্নয়ন অর্জিত হবে না। বিশ্বব্যাংক রিপোর্টে যদিও আমরা নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশের নাগরিক কিন্তু জাতিসংঘ থেকে এ স্বীকৃতি পেতে শুধু অর্থনৈতিক উন্নতিতে নয় বরং সামাজিকভাবে অগ্রগতি দেখাতে হবে। টাকা বা ডলারের হিসেবেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হবে না বরং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ক্ষেত্রেও অগ্রগতি দেখাতে হবে। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস করতে হবে এবং সুপেয় পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে অগ্রগতি ছাড়া জাতীয় আয় বাড়ানো প্রায় অসম্ভব। কৃষিক্ষেত্র অগ্রগতির জন্য দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমি চাষের মাধ্যমে উৎপাদকের আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং এ জন্য প্রয়োজন কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক বিনিয়োগ ও প্রসার। অথচ গত সাত বছর ধরে কৃষি ক্ষেত্রে বাজেটের বরাদ্দ অংক ক্রমাগত সংকোচন হচ্ছে। যে জন্য কৃষিতে প্রবৃদ্ধির হার ইতোমধ্যেই স্থবির হয়ে গেছে। পোশাক শিল্পকে বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফ ব্লাড তথা চালিকা শক্তি বলা হয়। অথচ বিভিন্ন সময়ে কাজের পরিবেশের নিম্ন মান, অপর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় শ্রমিক অসন্তোষ কিংবা দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের কারণে পোশাক শিল্প অস্থির হয়ে ওঠে। পোশাক শিল্পকে রাষ্ট্রের উন্নতির স্বার্থে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর কোন বিকল্প নাই। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য রফতানির ক্ষেত্রে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে এবং রফতানিযোগ্য মান ও সংখ্যা বৃদ্ধি করা সময়ের দাবি। চামড়া, চা, মৎস্য, ওষুধ, টিনজাত দ্রব্য, সিমেন্ট, গরুর গোশত ও দুধ, মুরগির গোশত, চাল এবং শাক-সবজি রফতানির ক্ষেত্রে ব্যাপক গুরুত্ব দিতে হবে। দেশে শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার জন্য দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্ট করতে হবে এবং তাদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ব্যতীত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিটেন্সের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বর্তমানে দেশের প্রায় ৮০ লাখ দক্ষ, অর্ধদক্ষ কিংবা অদক্ষ শ্রমিক বৈধভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত। এছাড়াও অবৈধভাবে আরও প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। দেশের অর্থনীতিতে তাদের পাঠানো রেমিটেন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২০১৪ সালে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ্যাৎ বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে, ২০১৪ সালে বিশ্বব্যাপী মোট ৫৮৩ কোটি বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স সংঘটিত হয়। এই রেমিটেন্সের প্রায় অর্ধেক আবার বিশ্বের ১০টি দেশ সংগ্রহ করে। সেই দশটি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। কিন্তু বিদেশী রেমিটেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে অথচ আমরা যে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারছি। যে সকল বাংলাদেশী শ্রমিক বিদেশে শ্রম বিক্রি করে তাদের অধিকাংশ অদক্ষ কিংবা অর্ধদক্ষ। যে কারণে শ্রমের মজুরি হিসেবে এদেশীয় শ্রমিকরা অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের চেয়ে অনেক কম অর্থ মজুরি পাচ্ছে। আমরা যদি আমাদের শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে বিদেশ পাঠাতে পারি তবে রেমিটেন্সের অংক অনেক গুণ বেড়ে যাবে। অন্যদিকে বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য বিশ্বের বৃহৎ শ্রমবাজার সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশের শ্রমবাজার বন্ধ। সরকার যদি আলোচনার মাধ্যমে বন্ধ শ্রমবাজার পুনরায় বাংলাদেশীদের জন্য উন্মুক্ত করতে পারে তবে বিদেশ থেকে আগত রেমিটেন্সের পরিমাণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব। শ্রমিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হুন্ডি বা অবৈধ পন্থায় দেশে টাকা পাঠানোর কারণে রাজস্ব আয় থেকে রাষ্ট্র বঞ্চিত হচ্ছে এবং এর কারণে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। কাজেই এ ব্যাপারে প্রবাসী শ্রমিকদেরকে সচেতন করে তুলতে হবে। সম্প্রতি এক রিপোর্টে দেখা গেছে, সুইস ব্যাংকসহ টাকা জমানোসহ বিভিন্ন দেশে টাকা পাচারে বাংলাদেশীদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এক্ষেত্রে প্রধানত দু’টো কারণ হতে পারে। প্রথমত: বাংলাদেশে পুঁজি বিনিয়োগে তারা ভরসা পাচ্ছে না। কেননা চলতি বছরের জানুয়ারির ৫ তারিখ থেকে তিন মাসের অধিকাকাল সময় রাজনৈতিকভাবে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কেটেছে তা ভয়াবহ এবং সে ধারা থেকে দেশবাসী এখনো পূর্ণ বের হতে পারেনি। সুতরাং ব্যবসা মনস্ক ধনাঢ্যরা পুঁজি হারানোর ভয়ে কিংবা দেশের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কাবোধ করে বিনিয়োগের আগ্রহ না দেখিয়ে বিদেশী টাকা সঞ্চয় করছে। দ্বিতীয়তঃ কালো টাকা অর্র্থ্যাৎ অসৎ পথে অর্জিত টাকা খুব দ্রুত দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। অতীতের ক্ষমতাশীলদের যেমন এ প্রবণতা ছিল বর্তমান ক্ষমতাশালীদের অনেকেই এ প্রবণতা থেকে বের হতে পারেনি। সুতরাং দেশের উল্লেখযোগ্য অংকের টাকা দেশেরে উন্নয়ন ও অগ্রগতির সহায়ক না হয়ে অবৈধ পথে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এদেশের কৃষকের সন্তানরা যখন বিদেশে শ্রম বিক্রি করে ঘাম ঝরিয়ে হাজার টাকা দেশের উন্নয়নের জন্য দেশে পাঠাচ্ছে ঠিক তখনই এদেশের ধনাঢ্যদের একাংশ এদেশ থেকে বৈধ-অবৈধভাবে অর্জিত টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। সুতরাং দেশপ্রেমিকতার মানসিকতায় ধনাঢ্যদের চেয়ে কৃষক এবং কৃষকের সন্তান অনেক এগিয়ে। পোশাক শিল্পে আমাদের দেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। বিশ্বের অনেক দেশকে টপকে পোশাক রফতানিতে আমরা কখনে দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়। অথচ সম্প্রতি ঈদের পোশাক বাজার ভারতীয় পোশাক দখল করে নিয়েছে। মাত্র কয়েকদিনের ঈদ বাজারকে কেন্দ্র করে ভারতীয় পোশাক আমাদের দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা আয় করে নিয়ে যাবে। অথচ একটু আন্তরিক হলে দেশের টাকা দেশেই রাখতে পারতাম।
গত ১০ জুলাই ময়মনসিংহে যাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শামীমের বাসার সামনে শিশু ও মহিলাসহ ২৭ জন পদদলিত হয়ে মারা গেছে এবং আহত হয়েছে আরও অনেক। এমন দুর্ঘটনা বাংলাদেশের জন্য এই প্রথম। ব্যবসায়ী শামীম গত কয়েক বছর ধরেই যাকাতের কাপড় দিয়ে আসছেন। তবে অতীতে কখনোই এমন অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা ঘটেনি। অতীতের ধারাবাহিকতায় এ বছরও ৬৪০ জন মহিলাকে যাকাতের কাপড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত দিনে যাকাতের কাপড় প্রাপ্তির জন্য অমনোনীতদের উপস্থিতির কারণে সৃষ্টি চাপে হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে ভয়াবহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বীকৃতি পাওয়ার মাত্র কয়েক দিনের মাথায় এমন একটি দুর্ঘটনা দেশের উন্নতির প্রতিবন্ধকতার সংবাদ নয় তবে দেশে যে ধন বৈষম্য তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে তা স্পষ্ট হয়েছে। দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে যাকাতের সম্পদ বণ্টনে যেমন ত্রুটি রয়েছে তেমনি রাষ্ট্রীয় যাকাত খাতে যাকাত জমা প্রদানের ব্যাপারেও অনেকে আস্থা রাখে না। মধ্যম আয়ের বাংলাদেশকে তার সঠিক অগ্রগতি ও অর্জন বহাল রাখতে হলে পুঁজি ব্যবস্থার সুষম বণ্টন করে দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে হবে। আয় ও ধন বৈষম্যের অসম দূরত্ব দূর করা সম্ভব না হলে জাতীয় মাথাপিছু আয়ে বৃদ্ধি কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে এবং বিশৃঙ্খলাও বৃদ্ধি পাবে। অথচ মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সাথে সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং উচ্চ আয়ের দেশের সিঁড়ি মাড়াতে হবে।
মানবপাচার বাংলাদেশের জন্য চরম অভিশাপ হিসেবে রূপ নিয়েছে। মানবতা ভাসছে অথৈ সমুদ্রে। জীবন সঙ্কুল জেনেও মানুষ ট্রলারে পাড়ি দিচ্ছে দূর দেশে। যাত্রা পথেই মারা যাচ্ছে খাদ্যের অভাবে। যারা কোনভাবে জীবনে বেঁচে কূল পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছে তাদের অধিকাংশের ঠাঁই হচ্ছে গহীন জঙ্গলের গণকবরে। তবুও মানুষ ছুটেই চলেছে। তবে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দা এবং সরকারের কঠোরতায় মানব পাচার বন্ধ হয়েছে। তবে ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্বে যারা যাত্রা করেছিল তাদের মধ্যে যারা বেঁচে আছে তাদের জীবন এখনও শঙ্কার মধ্যে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাথে তাল মিলিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী অনিশ্চিত সমুদ্রপথে বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে প্রবেশের জন্য ছুটেছিল। কিন্তু এ সকল মানুষ জমি বিক্রি করে কিংবা লোন করে টাকা দিয়ে মৃত্যু কিনেছিল কেন? মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী হয়ত মিয়ানমার সরকার ও স্থানীয় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর অত্যাচারে বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল কিন্তু বাংলাদেশীরা কোন ভয়ে দেশ ছাড়ছিল? নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ে উন্নীত হওয়া দেশের এ কোন চিত্র? সুতরাং সকল বিষয়গুলোকে গভীরভাবে ভাবতে হবে। যেভাবেই বিশ্লেষণ করা হোক না কেন দেশের উন্নতির জন্য এ বিষয়গুলো অবশ্যই প্রতিবন্ধক এবং দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার সহায়ক। কাজেই দেশের নীতি নির্ধারকদের সকল সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করে এর স্থায়ী সামাধান করতে হবে। এজন্য সবার সহযোগিতা একান্তই কাম্য। দল কিংবা ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকে প্রধান্য দিতে হবে। ক্ষমতার মসনদ পাকাপাকি করার লড়াইয়ে দেশ যেন বিপর্যয়ের মুখে না পড়ে সেজন্য সব মহলকে আন্তরিকতা দেখাতে হবে। সবার আগে যদি দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়া সম্ভব হয় তবেই কেবল কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছ আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে সম্মানের আসনে স্থায়ী আসনে রূপদান করা সম্ভব।
[email protected]