এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা পলাশের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী : আজও বিচারের আশায় মা-বাবা
রন্জন সিংহ সিলেট থেকেঃ ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীন কোন্দলে নিহত মেধাবী ছাত্র উদয়েন্দু সিংহ পলাশের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী পেরিয়ে গেল ১২ জুলাই রোববার। ২০১০ সালের এই দিনে টিলাগড়ে নৃশংসভাবে খুন হন পলাশ। পলাশ এমসি কলেজের গণিত ৩য় বর্ষের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের
ভান্ডারীগাঁও গ্রামের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মুক্তিযোদ্ধা বীরেশ্বর সিংহ এবং স্কুল শিক্ষিকা মা ঊষা রানী দেবীর একমাত্র পুত্র পলাশ। আজো পুত্র হত্যার বিচারের আশায় পথ চেয়ে আছেন মুক্তিযোদ্ধা পিতা ও স্কুল শিক্ষিকা মা। পলাশের এক মাত্র ছোট বোন অনামিকা সিনহা ভাইকে হারিয়ে আজো নির্বোধ। ভাইয়ের কথা মনে হলেই মুর্চ্ছা যায় অনামিকা। সে তার ভাই হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্রুত নিশ্চিত করতে অনুরোধ জানিয়েছে। পলাশ নিহত হওয়ার পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত মামলার রায় ঘোষিত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তার পিতামাতা। তারা সন্তান হত্যার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের ফাঁসি দাবী করেছেন। মামলার মন্থর গতিতে বিস্মিত এবং হতবাক পলাশের বৃদ্ধ পিতা ধীরেশ্বর সিংহ।
গতকাল এ উপলক্ষে তার ভান্ডারীগাঁস্থ গ্রামের বাড়িতে পারিবারীকভাবে সন্ধ্যায় পলাশের শ্মশানে মঙ্গল প্রদ্বীপ প্রজ্বলন করা হয় এবং মন্দিরের সামনে পলাশের স্মরণে সমবেত প্রার্থনা ও ধমস্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। নিহত উদয় সিংহ পলাশ সিলেট এমসি কলেজের গণিত তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মেধাবী ছাত্র উদয় সিংহ পলাশ ২০০২ সনে আদমপুরের তেঁতইগাঁও রশিদ উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে (বিজ্ঞান বিভাগে) জিপিএ ৩.৮৮ লাভ করে উত্তীর্ণ হয়। পরে কমলগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হিসেবে ২০০৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সিলেট এমসি কলেজে ভর্তি হয়। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে পলাশ বড় ছিল। বোন অনামিকা সিনহা সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ করে বর্তমানে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। বাবা বীরেশ্বর সিংহ ওরফে কঙ্ক সিংহ সেনা বাহিনী থেকে অবসর গ্রহন করে বাড়ির কৃষি কাজ কর্ম দেখাশুনা করেন। নিহত পলাশের মা ঊষা রানী দেবী জানান, তার ইচ্ছে ছিল ছেলেটি ভবিষ্যতে ভাল একটি কলেজে শিক্ষকতা করবে। মায়ের দাবী সে কোন রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল না। বাবার ইচ্ছে ছিল
ছেলেটি ভবিষ্যতে বিসিএস দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে ভাল পদে চাকুরী করবে। মা জানান, পলাশ শেষ বারের মত বাড়িতে এসে ২০১০ সালের ৫ জুলাই সোমবার আবার সিলেট চলে যায়। মা উষা রানী দেবী আহাজারি করে বলেন, ছাত্র রাজনীতির নামে এভাবে আর কোন মায়ের বুক যেন খালি না হয়। মা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করেন। এলাকাবাসী জানান, নিহত পলাশ ছিল পরপোকারী। দরিদ্র ছেলে মেয়েদের বই, খাতা এমনকি কাপড়-ছোপড় ও অনেক সময় সে কিনে দিত। বাবা বিলাপ করে বলেন, প্রান দেওয়ার নাম কি রাজনীতি, হায়রে রাজনীতি। রাজনীতিতে না জড়ানোর জন্য
ছেলেকে উপদেশ দিতেন নিয়মিত। বাবার সে উপদেশ মাথায় রেখেই চলাফেরা করত পলাশ। কিন্তু ছেলের একটি গুন ছিল সে কাউকে মুখ খোলে না করতে পারত না। আর এ না করার কারণে ২০১০ সালের ১২ জুলাই সোমবার নির্মমভাবে তাকে প্রাণ দিতে হলো। মা ঊষা রানী দেবী বলেন, ছেলেটি কোন রোগে মারা যায়নি। তাকে মরতে হল নির্মম নোংরা রাজনীতির শিকার হয়ে। এদিকে পলাশের বাবা মুক্তিযোদ্ধা বীরেশ্বর সিংহ জানান, আমরা পরিবারের সবাই প্রসাদভোজী। কয়েকদিন পূর্বে সনাতন ধর্মীয় বিধান মতে তিথিনুযায়ী পলাশের বাৎসরিক শ্রাদ্ধ সম্পন্ন হয়েছে। ওইদিন আত্মীয়-স্বজনসহ শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়িত করা হয় এবং দরিদ্রদের মধ্যে অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। ২০১১ সালে ভারতের গয়াকাশি বৃন্দাবন গিয়ে নিহত পলাশের অস্থি (মাথার খুলি) ধর্মীয় বিধানমতে পিন্ডদান করা হয়েছে। পলাশের বাবা আক্ষেপ করে আরো বলেন, আমার বড় ছেলে পলাশের বড় ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করে বড় হয়ে কলেজে শিক্ষকতা করবে। কিন্তু বিধি বাম তার আশা পূর্ণ হলো না। ছাত্র রাজনীতি করে আমার ছেলে প্রাণ দিতে হলো। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। পলাশের বিচার নিয়ে আমি সন্দিহান। জানিনা পলাশের সুষ্ঠু পাবে কিনা। ২০১০ সালের ১২ জুলাই সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাস এলাকায় ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীন কোন্দলের জের ধরে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে প্রাণ দিতে হলো আমার ছেলে পলাশকে। এই খুনের ঘটনায় জড়িতরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে এখন প্রকাশ্যে রাজপথে মিছিল মিটিং করেন। দলের আর্দশ প্রচারের ফিরিওয়ালা সাজেন কিন্তু মুক্তিযোদ্ধ বীরেশ্বর সিংহ দেশ স্বাধীণ করে ছেলে হত্যার বিচারের আশায় অপেক্ষায় আছেন।