ভেজাল পণ্যে সয়লাভ সিলেট : নির্বিকার বিএসটিআই

Sylhetসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ ভেজাল পণ্যে ছেয়ে গেছে সিলেটের বাজার । সিলেট বিভাগীয় মান নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (বিএসটিআই) অফিস যেন সাইনবোর্ড সর্বস্ব। মাসোয়ারা সেন্টারে পরিনত হয়েছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। তাদের ভাষায় ‘‘বিএসটিআই সাইনর্বোড মার্কা বক’’ লোটে-পুটে খাচ্ছে অফিস প্রধান রেজাউল হক’’।
সুত্র জানায় , ফ্যাক্টরী পরিদর্শন সিএম লাইসেন্স প্রদান , নমুনা সংগ্রহ করা , সার্বেলিয়েন্স (কারখানা) পন্য যাচাই করা, মেয়াদউত্তীর্ন কি না তা যাচাই করা মুলত বিএসটিআই এর কাজ । আর এ সব কাজ করতে গিয়ে আইন প্রয়োগে শিথিলতা এবং আইনের ফাঁক ফোকরকে পুজিঁ করে বিএসটিআই এর কিছু অসাধু কর্মকর্তারা অবৈধ ফায়দা হাসিলে ব্যাস্ত এমন অভিযোগ একাধিক ভূক্তভোগীর।
পবিত্র রমজান মাসেও সিলেটে ভেজাল রোধ করনে কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারছে না বাংলাদেশ মান নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে (বিএসটিআই)। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ , নামে মাত্র দু একটি লোক দেখানো অভিযান দিয়েই চলে বিএসটিআই আঞ্চলিক অফিসের কার্যক্রম। একাধিক সুত্র জানায় , বিএসটিআই এর অভিযান মানে রেইট ভেড়ে যাওয়া। নকল-ভেজাল আর অনিরাপদ খাদ্যপণ্যের অক্টোপাসে বিপন্ন হয়ে পড়েছে সিলেটবাসীর জীবন। এ নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। একশ্রেণীর ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের মনেবৃত্তি আর আইনপ্রয়োগে শিথিলতার সুযোগে ভেজাল বাণিজ্য এক রকম অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। শিশু খাদ্য থেকে শুরু করে ফল-মূল, শাক-সবজি, মাছ-মাংস, দুধ, মিষ্টি, প্যাকেটজাত খাদ্য, পানীয়, ইফিতারি, এমনকি ঈদের অপরিহার্য অনুষঙ্গ লাচ্ছা সেমাইসহ প্রায় সব ধরনের খাবারে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়। খাদ্যে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যাদি ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথেফেন, কাপড়ের রং, কীটনাশক, যেমন -এন্ড্রিন, ডিডিটি, হেপ্টাক্লোর ; কৃত্রিম ক্রমবৃদ্ধি নিয়ামক। ফলে কৃত্রিম উপায়ে পাকাতে ব্যাপকভাবে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, কপার সালফেট, কার্বনের ধোঁয়া, পটাশের লিকুইড সলিউশন, কৃত্রিম ক্রমবৃদ্ধি নিয়ামকসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক এবং তাজা ও সতেজ রাখতে ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে । আম, কলা, খেজুর, পেঁপে, আনারস, মালটা, আপেল, আঙ্গুর এবং অন্যান্য ফলে ব্যবহৃত হচ্ছে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, কীটনাশক, ইথেফেন, ফরমালিন, কৃত্রিম ক্রমবৃদ্ধি নিয়ামক। মাছে ফরমালিন, শাক-সবজিতে কীটনাশক ও ফরমালিন, শুঁটকিতে ডিডিটি ব্যবহার করা হচ্ছে। টমেটোতে ব্যবহৃত হচ্ছে ফরমালিন। মিষ্টিতে কাপড়ের রং, আলকাতরা এবং কৃত্রিম মিষ্টিদায়ক প্রয়োগ করা হয়। এমনকি মুড়ি ও চিড়াতেও রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদিত প্যাকেটজাত খাদ্য যেমন ফলের রস, স্ন্যাকফুড, জ্যাম-জেলি, আচার-চাটনিতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রং ও প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয় এবং সেমাই ও নুডুলসে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। ভেজাল মেশানো নেই এমন ভোগ্যপণ্য পাওয়া এখন ভার। এসব বিষাক্ত খাবার খেয়ে বাড়ছে মারাত্মক জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি। ম্যাজিষ্টেট নিয়োগের জটিলতার কারনে ও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। ফলে চলমান দিনগুলোতে ভেজাল পণ্য বিক্রয় বন্ধে বিএসটিআই এর কোনো ভুমিকা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এতে করে আর বেপরোয়া হয়ে উঠছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ভেজাল পণ্যে ছেয়ে গেছে সিলেটের বাজার। এতে লাভবান হচ্ছে বিএসটিআই অফিসে কর্মরতরা।
পন্যের গুনগত মান, বিশুদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করণ এবং জনসাধারণের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০০০ সালে ৩৬০ আউলিয়ার পূর্ণভূমি সিলেট জেলায় বিএসটিআই আঞ্জলিক অফিসের অনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে সিলেট জেলার জাফলং রোডে বিসিকি শিল্প নগরী খাদিম নগরে মনোরম পরিবেশে নিজস্ব ভবণে বিএসটিআইর সেবা প্রদান করা হয়। বিএসটিআই দেশে উৱপাদিত এবং আমদানীকৃত যাবতীয় শিল্পপণ্য, খাদ্যপণ্য ও রাসায়নিক দ্রব্যের মান প্রণয়ন, নিয়ন্ত্রণ, মানের নিশ্চয়তা বিধানসহ সারাদেশে ওজন ও পরিমাপের মেট্রিক পদ্ধতি প্রচলন ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করে থাকে। ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কাউন্সিল বিএসটিআই’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক বডি। বিএসটিআই মূলত ০৬টি উইং এর মাধ্যমে সেধা প্রদান করে থাকে। নিম্নে উইং গুলোর বর্ণনা েেদায়া হলো: ১। মান উইং ২। পদার্থ পরীক্ষণ উইং ৩। রসায়ন পরীক্ষণ উইং ৪। েেমট্রালজী উইং ৫। সার্টিফিকেশেন মার্কস (সিএম) উইং ৬। প্রশাসন উইং। বিএসটিআই’র সিলেট বিভাগীয় অফিসের সহকারী পরিচালক (সিএম) , মান নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (বিএসটিআই) ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সরকার । ইচ্ছে থাকলেও যে কোনো সময় মাঠে পর্যবেক্ষন করার ক্ষমতা নেই তাদের। অভিযানে নামার আগে জেলা প্রশাসকের মাসিক সভায় তাদের পর্যবেক্ষণের অনুমোদন নিতে হয়। তখন জেলা প্রসাশক একটি নিদিষ্ট দিন নির্ধারন করে ম্যাজিস্টেট নিয়োগের মাধ্যমে তাদের পর্যবেক্ষন করার সুযোগ দেয়। তাছাড়া লোকবল ও যন্ত্রপাতির সংকটতো আছেই। এখানে উপপরিচালক ২ জন থাকার কথা থাকলেও আছে ১ জন, সহকারী পরিচালক আছে ৩ জন, ইন্সপেক্টর ৪ জন থাকার কথা থাকলেও আছে ৩ জন , ফিল্ড অফিসার ৪ জন থাকার কথা থাকলেও আছে ৩ জন।
সংশ্লিষ্ঠ একাধিক সুত্র জানায়, কোনো সময় মান নিয়ন্ত্রন অধিদফতর মাঠে কার্যক্রম পরিচালনার দরকার মনে করলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেটের কাছে আবেদন করার সুযোগ থাকলেও পারিবারিক ব্যাস্থতায় দিন কাটান কর্মরতরা । সিলেট বিভাগে মান নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর শহরতলীর খাদিম নগর বিসিক শিল্প নগরী এলাকায় অবস্থিত। দীর্ঘ দিন থেকে বিভাগের একমাত্র মাননিয়ন্ত্রন অধিদফতর হলেও জনবল সংকট প্রযোজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব এখন পর্য দুর করা সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে নানান সমস্যা। মান নিয়ন্ত্রন অফিস সূত্রে জানা যায়, বিএসটিআই এর আওতাভ’ক্ত ১৫৫টি পণ্যের মধ্যে মাত্র ১২টি পণ্য পরীক্ষা করার যন্ত্রপাতি ছাড়া বাকী পণ্যগুলো পরীক্ষা করার কোনো যন্ত্রপাতি নেই তাদের। । এদিকে লাচ্ছা সেমাই, মরিচের গুড়া, হলুদের গুড়া, আটা, ময়দা,চা-পাতা, ভূষি কেক ছাড়া বাকী পণ্য গুলো পরীক্ষা করার কোণো যন্ত্রপাতি নেই মান নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাছে। বাকী গুলো চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পর্যবেক্ষন করার সম্ভব হচ্ছে না তাদের পক্ষ থেকে।
এ ব্যাপারে মান নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সিলেট আঞ্চলিক অফিসের উপ-পরিচালক (মেট) মো : রেজাউল হক জানান, মাসুয়ারার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন , সবধরনের পণ্যে মান পর্যবেক্ষন করতে আমরা সব সময় সচেষ্ট। বিভাগের একমাত্র অফিস এটি, লোকবল ও যন্ত্রপাতি সঙ্কটে কারনে পর্যবেক্ষন করতে আমাদের পক্ষে একটু কষ্ট হয়। তাছাড়া যে কোনো সময় ইচ্ছা করলে পর্যবেক্ষন করার ক্ষমতা আমাদের নেই। জেলা প্রসাশকের কাছ থেকে তার অনুমোদন আনতে হয়।
এ ব্যাপারে মান নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সিলেট আঞ্চলিক অফিসের সহকারী পরিচালক (সি এম) এস.এম. আবু সাইদ জানান, প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন স্থানে অভিযান পরিচালিত হয়। মাসুয়ারার বিষয়টি আমার জানা নেই।