নেত্রীর সঙ্গে মতবিরোধই কাল হলো আশরাফের!
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অব্যাহতি সংক্রান্ত কাগজপত্র। এরপর আর কোনো খবর হলো না।
অবশেষে বিকেল ৪টা ২০ মিনিট। সচিবালয়ে খুব আগ্রহ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞাকে ঘিরে ধরেন গণমাধ্যম কর্মীরা- সৈয়দ আশরাফের বিষয়ে জানতে। তবে সবাইকে হতাশ করে তিনি বললেন, ‘কিছু হয়নি, হলে আপনারা জানবেন।’
শোনা যাচ্ছে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়ে একটি প্রক্রিয়া চলছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কীসের প্রক্রিয়া? আমি তো কিছুই জানি না। আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করার মতো কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’
এরপরও গণমাধ্যম কর্মীদের সন্দেহ যদি প্রজ্ঞাপন হয়ে যায়! তাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের জটলা। অবশেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মঈন উদ্দিন সচিবালয় ত্যাগ করার সময় জানালেন, আজ আর কিছু হবে না।
এর আগে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকের বৈঠকেও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২’ প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রকল্পটি তদারকি করার জন্য আরো অ্যাকটিভ মন্ত্রী দরকার। উনি (সৈয়দ আশরাফ) প্রায় বৈঠকেই অনুপস্থিত থাকেন, তাকে দিয়ে মন্ত্রণালয়ের কাজ পুরোপুরি হচ্ছে না। এ কারণে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া যেতে পারে।’
যদিও কাকে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু জানাননি বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়। তবে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বাংলামেইলকে জানিয়েছেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পরিবর্তে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে।
এদিকে কিশোরগঞ্জে নিজ বাসভবনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যাহতির খবর সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গুজবে কান না দেয়াই ভালো।’ তাকে অব্যাহতির বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। এমনকি তিনি মন্ত্রীর প্রটোকল নিয়েই সেখানে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়।
অবশ্য জানা গেছে, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাই চূড়ান্ত। তাই প্রধানমন্ত্রী আপাতত চাচ্ছেন না আশরাফের অব্যাহতি। তবে তিনি যদি নিজ থেকে সরে যান তাহলে কোনো বাধা দেয়া হবে না। এর আগেও কিন্তু সৈয়দ আশরাফ মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন।
যে কারণে সরানো হতে পারে সৈয়দ আশরাফকে
বিগত পাঁচ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। অথচ ওই নির্বাচন না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের একটি অংশ এই নির্বাচন দেয়ার পক্ষে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিল। সঙ্গে ছিলেন তৎকালীন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম সহিদ খান। তখন থেকেই দলের ওই অংশটি সৈয়দ আশরাফের বিপক্ষে চলে যায়।
আবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে নগ্নভাবে ভোট কেটে দলীয় প্রার্থীকে জয়লাভ করোনোর বিপক্ষে ছিলেন সৈয়দ আশরাফ। এখানেও তিনি দলের অপছন্দের তালিকায় পড়েন। এরপর থেকে অনেকটা অন্তরালেই চলে যান।
আরো জানা যায়, গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার রদবদল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৈয়দ আশরাফের মতবিরোধ দেখা দেয়। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সৈয়দ আশরাফ অনুরোধও করেন তাকে স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে।
সর্বশেষ এর প্রতিফলন ঘটে আজ মঙ্গলবার একনেকের বৈঠকে। ওই বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগের ৬ হাজার ৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু সেখানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম উপস্থিত না থাকায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয় জটিলতা। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর ক্ষুব্ধ হন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনি (সৈয়দ আশরাফ) যেহেতু মিটিং-টিটিংয়ে আসেন না, সেহেতু ওনাকে সরিয়ে দিলে ভালো হয়।’ এরপর তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে এ জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেন।
এদিকে দুপুরে আশরাফের অব্যাহতির সঙ্গে সঙ্গেই আরো খবর ছড়িয়ে পড়ছিল- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। নতুন মুখ হিসেবে আসছেন সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
মায়ার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো- দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দুর্নীতি মামলায় সাজপ্রাপ্ত মায়াকে খালাস করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করে নতুন করে আপিল শুনানির আদেশ দিয়েছেন চেম্বার জজ। এরপরও কীভাবে মায়া মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং সংসদ সদস্য থাকেন- বিষয়টি নিয়ে আদালতে চ্যালেঞ্জও করা হয়েছে। তাই সরকার চাইছে কোর্টের নির্দেশের আগেই মায়াকে সরিয়ে দিতে। এমনটাই জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে।
এছাড়া ব্রাজিল থেকে নিম্নমানের গম আমদানি নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বেকায়দায় পড়েছেন। তাকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে সরিয়ে দেয়ার চাপ রয়েছে। কিন্তু আপাতত অব্যাহতি পাচ্ছেন না তিনি।