আমার মৃত্যুর জন্য ঝালকাঠির এসপি দায়ী!
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ বরিশাল নগরীতে আনোয়ার হোসেন নামে পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। বিষপানের আগে তিনি একটি চিরকুটে লিখেছেন, ‘আমার মৃত্যুর জন্য ঝালকাঠির সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) মজিদ আলী দায়ী থাকবেন।’
মঙ্গলবার বরিশাল নগরীর হাউজিং এলাকার নিজ বাসায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এসআই আনোয়ার হোসেন বর্তমানে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানায় কর্মরত রয়েছেন। এর আগে তিনি ঝালকাঠী সদর থানায় কর্মরত ছিলেন।
এসআই আনোয়ার হোসেনর স্ত্রী মোসা. নাজমা সুলতানা জানান, মঙ্গলবার বিভাগীয় মামলায় ঝালকাঠিতে হাজিরা দিয়ে বরিশাল নগরীর হাউজিং এলাকার নিজ বাসায় আসেন তার স্বামী। বাসায় আসার পরপরই পরিবারের সবার অগোচরে বিষপান করেন তিনি। বিষের যন্ত্রণায় তিনি ছটফট করতে থাকেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় তার পকেটে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। তাতে লেখা রয়েছে ‘আমার মৃত্যুর জন্য ঝালকাঠির সাবেক পুলিশ সুপার মজিদ আলী দায়ী।’ এছাড়া ওই চিরকুটে তার লাশের ময়নাতদন্ত না করারও অনুরোধ জানানো হয়।
স্ত্রী নাজমা সুলতানা আরও জানান, ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের মে পর্যন্ত তার স্বামী ঝালকাঠি সদর থানায় কর্মরত ছিলেন। সেখানে পুলিশ সুপার মজিদ আলী এবং তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিদুল ইসলাম তার স্বামীর সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিদুল ইসলাম তার স্বামীর কাছ থেকে অবৈধপন্থায় অর্থ আদায় করতেন। এছাড়া শহরের পূর্ব চাঁদকাঠী এলাকায় এক নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিদুল। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাবাসী এর প্রতিবার জানায়। তখন ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদকারীদের মামলা দিয়ে হয়রানির নির্দেশ দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার এ অনৈতিক আদেশ মেনে না নেয়ায় এসআই আনোয়ারকে জামায়াতের সমর্থক আখ্যায়িত করে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয় এবং বন্ধ করে রাখা হয় তার বেতন-ভাতা ও রেশন। একইসঙ্গে মহিদুল ইসলাম তার গ্রামের বাড়ি রংপুর রেঞ্জে আনোয়ারকে বদলী করে নিজে সুদানে মিশনে চলে যান। দীর্ঘদিন ধরে বেতন ভাতা বন্ধ থাকায় দুই ছেলে সন্তান নিয়ে আনোয়ার হোসেন অমানবিকভাবে জীবনযাপন করছিলেন বলে জানান নাজমা সুলতান।
অবস্থার পরিবর্তন চেয়ে তিনি ইতোপূর্বে বরিশালে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। কিন্তু কোনোভাবেই এসআই আনোয়ারের বেতন ভাতা চালু হয়নি। মূলত এসব ঘটনায় তিনি হতাশ হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
শেবাচিম হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক মাসুম মোল্যা জানান, এসআই আনোয়ারের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। কিন্তু জ্ঞান ফিরে না আসা পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।’