দুর্ভোগের অপর নাম শহীদটিলা- বড়দেশ –কাজিরবাজার সড়ক
ইমাম হাসনাত সাজু, বিয়ানীবাজারঃ “আমরার ই রাস্তা ইকটা আর ঠিক অইতো নায়। রাস্তার মাঝখান বড় বড় গাত দেখলে মনে অয় একেকটা যেন কুড়।” কথাগুলো বেশ ক্ষোভের সাথেই বললেন, মুড়িয়া ইউনিয়নের বড়দেশ গ্রামের হাসান আহমেদ। দীর্ঘদিন সংস্কার কাজ না হওয়ায় রাস্তাটি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। বেশ কয়েক বছর থেকে সংস্কার কাজের অভাবে আর সংস্কারের টাকা দিয়ে ঠিকঠাক মতো কাজ না করিয়ে নিজের আখের গোছাতে কোন মতে কাজ সারিয়ে বিদায় হন ঠিকাদার। রাস্তার দু’দিকের গার্ড ওয়াল কিংবা রাস্তার আশপাশের বাড়ি থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না করেই প্রায় চার বছর আগেই মেরামত কাজ সেরেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজের কয়েক মাসের মাথায় নিচু স্থানগুলোতে পানি জমে ছোট ছোট গর্ত সৃষ্টি হলে পরবর্তীতে এ গর্ত গুলো একেকটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়। বর্তমানে রাস্তা দিয়ে ওই এলাকায় মানুষ ঝুঁকি চলাচল করছেন। বর্তমানে এ রাস্তার অবস্থা দেখলে মনেই হবে না যে এটি একটি পাকা রাস্তা ছিল। পৌর শহরের প্রায় এক কিলোমিটার এবং মুড়িয়া ইউপি’র প্রায় ২ কিলো মিটার মোট ৩ কিলোমিটার রাস্তাটির বর্তমান অবস্তা এতটাই নাজুক যেন অনেকটা কাঁচা রাস্তাকেই হার মানাবে। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় গর্ত থাকায় পানি জমে গিয়ে এ সকল গর্তে গাড়ির চাকা পড়ে সম্পূর্ণ রাস্তাটি একটি পূর্ণাঙ্গ কাঁদা রাস্তায় পরিনত হয়েছে।
দু’টি বিদ্যালয় ও দু’টি মাদ্রাসার প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী চরম দূর্ভোগের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে। রাস্তার উপরের গর্তে জমানো কাঁদা গাড়ির চাকার পিষ্টে ঐ সকল শিক্ষার্থীসহ ব্যবসায়ী, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরণের কাপড়ে কাঁদা মাখানোর ঘটনা নতুন কোন বিষয় নয়। একটি রাস্তার জন্য ঘুঙ্গাদিয়া, বড়দেশ, মালিগ্রাম, পশ্চিম ঘুঙ্গাদিয়া, ঘুঙ্গাদিয়া (নয়াগাও), খাসা গ্রামের পূর্ব অংশের জনগণের দূর্ভোগ এখন চরমে। ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী, শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৫ হাজারেরও অধিক মানুষ বিভিন্নভাবে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য এ রাস্তাটি ব্যবহার করে থাকেন।
রাস্তা নষ্ট হওয়ার পর থেকেই গত তিন বছর ধরে কয়েক দফা এলাকাবাসী ও ড্রাইভার সমিতি চাঁদা তুলে রাস্তা মেরামত করেন। কিন্তু তাদের এ উদ্যোগ সঠিক পরিকল্পনা আর ড্রেনেজ সু-ব্যবস্থা না থাকায় তাদের এ কাজ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এতো গেলো জনদূর্ভোগের কথা।
রাস্তাটি যান চলাচলের অনুপযোগী হওয়ার ফলে যান চলাচল অনেকটা কমে যায়। স্থানীয় অটোরিক্সা ও রিকশা চালকরা জীবিকার তাগিদে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে কোন মতে গাড়ী চালাচ্ছেন। ড্রাইভার ও চালক সমিতি দফায় দফায় মিটিং করে রাস্তা খারাপ থাকার কারনে ভাড়া ১০টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫টাকা, কোন কোন সময় ২০টাকা চেয়ে বসেন। আবার অনেকে চালকের এ দাবীকে মেনে নিলেও কোন কোন সময় ঝগড়ায় লিপ্ত হতে দেখা গেছে যাত্রী-ড্রাইভারদের মধ্যে। সন্ধ্যার পর থেকেই ওই এলাকার জনগনকে ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ীর জন্য অপো করতে দেখা যায়। চালকেরা ভাড়া বৃদ্ধির প্রসঙ্গে বলেন, বড়দেশ –কাজিরবাজার রাস্তা দিয়ে গাড়ী চালাতে গেলে দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার গাড়ী নিয়ে মেকানিকের দোকানে যেতে হয়। এতে “খাজনা থেকে বাজনা বেশী হয়।” চালক ও যাত্রীদের অনেকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, পৌর শহরের কিছু অংশ ও মুড়িয়া ইউনিয়নের কিছু অংশ রাস্তাটি আদৌ মেরামতের মুখ দেখতে পারবে কিনা তা প্রশ্নাতীতভাবেই থেকে যাচ্ছে।
মুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের ঘুঙ্গাদিয়া-কাজিরবাজার রাস্তা প্রসঙ্গে বলেন, রাস্তাটির সংস্কার কাজের জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে যথাশীঘ্রই এ রাস্তার কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না।
বিয়ানীবাজার পৌরপ্রশাসক তফজ্জুল হোসেন বলেন, শহীদ টিলা থেকে পৌরসভার প্রায় ১কিলোমিটার রাস্তার কাজ আমরা যথাশীঘ্রই শুরু করব।
বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রকৌশলী রামেন্দ্র চোধুরী হোম বলেন, উপজেলা সদরের রাস্তা মেরামতের কাজ মূলত তিন শ্রেণীতে হয়ে থাকে। এল.জি.আর.ডি, ইউনিয়ন সংযোগ সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তা। রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রথম দুই শ্রেণীর রাস্তা মেরামত করতেই হিমশিম খেতে হয় আমাদের। তার উপর বড়দেশ –কাজিরবাজার রাস্তাটি গ্রামীণ রাস্তা শ্রেণীভূক্ত হওয়াতে অপর্যাপ্ত বরাদ্দের ফলে সংস্কার কাজ ঠিকমতো করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তবে বর্তমানে ওই রাস্তার বেহাল অবস্থা ও মানুষ চলাচলের সংখ্যা বেশী হওয়ায় জনগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় এনে এ বছর রাস্তাটিকে গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ রাস্তায় তালিকাভূক্ত করা হয়। পরবর্তীতে রাস্তার সংস্কার কাজ হবে।