দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন: সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার দাবি
গতকাল সকাল ১০টায় দেশের বিভিন্ন জেলায় চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকবৃন্দ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। তারা দৃঢ় প্রত্যয়ে তাদের যুক্তি তুলে ধরেন। কর্মসূচীতে অংশ নেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালেয়র শিক্ষক ড. মিল্টন বিশ্বাস বলেন, “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এর বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ নবম জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার থাকাকালীন ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছরে উন্নীত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে এই বিষয়টি গুরুত্বেও সাথে উপস্থাপিত হয় এবং অনেক সংসদ সদস্য চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার পক্ষে মতামত দেন।”
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (একই বছর ২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ২১তম) বৈঠকে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার সুপারিশ করেছিলেন। পরবর্তীতে নবম জাতীয় সংসদেও শেষ দিকে মহাজোট সরকারের চমক হিসেবে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক নির্দেশনার বিষয়ে পত্রিকায় খবর বের হয়। এমনকি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ-এর অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে চাকরিতে প্রবেশের মেয়াদ ২(দুই) বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেন দেশের সুশীল সমাজও। বর্তমান সরকারের আমলে গত ৮ই জুন, ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছিল।
এই প্রস্তাবের পক্ষে বিভিন্ন জেলা-প্রশাসকগণ সমর্থন দিয়েছিলেন। উক্ত প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তারিখে ২০১১ অধ্যাদেশ মোতাবেক সরকারি কর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়েছে। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বয়সসীমা ৩০ বছর রয়েছে। চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তাছাড়া একজন প্রার্থী ৩০ বৎসর বয়সে চাকরির জন্য আবেদন করলে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে অনেক সময় ২ বৎসরের বেশি সময় চলে যায়, সেক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার দাবি ওঠা স্বাভাবিক।
তিনি আরো বলেন, সর্বোশেষ বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ ২০১৫-১৬ বাজেট অধীবেশনে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির উপর গুরুত দিয়ে ৩৪/৩৫ করা যায় কিনা সে বিষয় প্রধান মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করেন। ১৭ জুন (২০১৫) জাতীয় সংসদে উত্থাপিত এক প্রশ্নের জবাবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। তিনি বলেছেন, সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই। উপরন্তু তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সাধারণ কোটা বৃদ্ধির কোনো পরিকল্পনা নেই। কোটা পদ্ধতি যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। প্রতিমন্ত্রীর এই অভিমতটি ‘জাতীয় যুব নীতি-২০১৫’ এর বিপরীত এবং সাংঘর্ষিক। কারণ সেখানে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সের বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিককে ‘যুব’ বলে গণ্য করা হয়েছে। উপরন্তু যুব উন্নয়নে অগ্রাধিকারভিত্তিতে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং উন্নত তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভালো কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র প্রস্তুতের কথা বলা হয়েছে। কর্মসংস্থান ও স্ব-উদ্যোগের নীতিমালায় ৩৫ বছর পর্যন্ত একজনকে স্বীকৃতি দিলে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণেচ্ছুকরা কি দোষ করেছে? এ পরিপ্রেক্ষিতে দাবি জানানো যেতে পারে যে, জাতীয় যুব নীতি’র সঙ্গে সরকারি চাকরিবিধির সমন্বয় থাকা দরকার।
উল্লেখ্য, গত কয়েক’বছর সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্লাটফর্ম থেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করার দাবি জানানো হচ্ছে। এমনকি কোটা পদ্ধতি পুনর্বিন্যাসের জন্য আবেদন করেছে। চলতি বছর(২০১৫) তরুণ সমাজের এসব দাবির পক্ষে হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট পিটিশনও দাখিল হয়েছে। (রিট পিটিশন নম্বর- ১০৩৯) ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠি লিখেছে; রাজপথে মানববন্ধন করেছে এবং সংবাদপত্রে কলাম লিখে আবেদন-নিবেদন জানিয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
সরকারের দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তিকে প্রতিক্রিয়া জানাতেও দেখি নি। বাস্তবতা এরকম, যারা আইন তৈরি করেন অর্থাৎ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনা করেন তারা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সংসদ নির্বাচন করতে পারেন, তাদের বয়সের কোনো বাধা নেই অথচ আমাদের তরুণ ছাত্রসমাজকে ত্রিশের পর সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত করে হতাশার অন্ধকারে ফেলে দেওয়া হয়। অন্যান্য দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমার তথ্য-প্রমাণ এবং আমাদের দেশের শিক্ষা জীবনের বাস্তবতা বিবেচনায় আনলে ৩০ থেকে ৩৫-এ বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার যৌক্তিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়। উল্লেখ্য, ৩৫ বছর বয়সী একজন ব্যক্তির মনস্তত্ত্ব এবং অন্যান্য দেশের সরকারি চাকরির বৈশিষ্ট্য স্মরণে রেখেই এই নিবন্ধ লেখা হয়েছে।
উন্নত বিশ্ব তাদের জনগণকে মানবসম্পদে রূপান্তরের ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সীমা রেখা নির্দিষ্ট করে রাখে নি। পার্শ্ববর্তী দেশসহ ওইসব দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আমাদের দেশের তুলনায় অনেক বেশি। কোনো কোনো দেশে অবসরের আগের দিন পর্যন্ত চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে। যেমন- ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০, বিভিন্ন প্রদেশে বয়সসীমা ৩৮ থেকে ৪০ বছর, শ্রীলংকায় ৪৫, ইন্দোনেশিয়া ৩৫, ইতালি ৩৫ বছর কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩৮, ফ্রান্স ৪০, ফিলিপাইন, তুরস্ক ও সুইডেনে যথাক্রমে সর্বনি¤œ ১৮, ১৮ ও ১৬ এবং সর্বোচ্চ অবসরের আগের দিন পর্যন্ত, দক্ষিণ আফ্রিকায় চাকরি প্রার্থীদের বয়স বাংলাদেশের সরকারি চাকরির মত সীমাবদ্ধ নেই। অর্থাৎ চাকরি প্রার্থীদের বয়স ২১ হলে এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে যে কোনো বয়সে আবেদন করতে পারা যায়। রাশিয়া, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য-এর মত দেশে যোগ্যতা থাকলে অবসরের আগের দিনও যে কেউ সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল গভর্নমেন্ট ও স্টেট গভর্নমেন্ট উভয় ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়স কমপক্ষে ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৫৯ বছর। কানাডার ফেডারেল পাবলিক সার্ভিস এর ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে তবে ৬৫ বছরের উর্দ্ধে নয় এবং সিভিল সার্ভিসে সর্বনি¤œ ২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৬০ বছর পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে আবেদন করা যা
ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জনাব কামাল আতাউর রহমান বলেন, আমি একজন শিক্ষক হিসেবে ভাল করেই ছাত্রদের মনের কথা বুঝতে পারি। তারা সীমাবদ্ধ সুযোগের জন্য বেকারত্বের অভিশপ্ত জীবন কাটাচ্ছে। তারা এ থেকে মুক্তি চায়, তারা সুযোগ চায়, পরীক্ষা দিতে চায়। খাতা কলমে ২৩ বছরে ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার নিয়ম আছে। সে হিসেবে চাকরিতে প্রবেশের জন্য একজন ছাত্রর ৭ বছর সময় পাওয়ার কথা তাদের এই ৭টি বছর সময় আপনারা দিয়ে দেন তারা আপনাদের কাছে আর কিছু চাইবে না। তারা চাকরি চাচ্ছে না তারা সুযোগ চাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, আমরা সুযোগ চাই কারন আমাদের একাডেমীক লেখা পড়ার সাথে চাকরির পড়া-লেখার কোন মিল নেই পাশ করার পরে আমাদের আবার চাকারির প্রতিযোগীতার জন্য নিজেদের নতুন করে পড়া লেখা করতে হয় তাই যেটুকু সুযোগ তাতে চাকরির প্রতিযোগীতার বাজারে ঢোকার আগেই আমাদের বয়স শেষ হয়ে যায়। তাছাড়া একটা নিয়োগ প্রক্রিয় শেষ করতে কর্তা ব্যাক্তিরা সময় নেন দুই তিন বছর।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত সরকারী তিতুমীর কলেজের ছাত্রী অনিতা বলেন, ৩০ বছর তো প্রায় আমাদের পাশ করতেই লেগে যায় ২০১২ সালের মাস্টার্স ফাইনালে ফরম পূরন চলছে এ মাসের ২ তারিখ পর্যন্ত এর পর পরীক্ষা, রেজাল্ট, সার্টিফিকেট অর্থাৎ ২০১৬ সালের আগে কোন ভাবেই সম্ভব না। এখানেই লেগে আছে ৪/৫ বছর সেসন জট। বিজ্ঞপ্তি