সুনামগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় কিশোরীকে গণধর্ষণ : সীমান্তের ওপারে উক্তেজনা
আল-আমিন শাহ,সুনামগঞ্জ থেকে : সুনামগঞ্জ সীমান্তের জিরো লাইনে পাহাড়ি ছড়া থেকে পানি নিতে এসে সোমবার সকালে ভারতীয় এক ১৩ বছরের কিশোরী ৩ লম্পট ও চোরাকারবারী গ্রুপের সদস্য কতৃক গণ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় সীমান্তের এপার ওপার দু’পারেই সাধারণের লোকজনের পক্ষ্য থেকে নিন্দার ঝড় ও আইনগত বিচারের দাবি উঠেছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাট সীমান্তের মেইন পিলার ১১৯৯ এর পুর্বে ভাঙ্গারঘাট কোয়ারীর পার্শ্ববর্তী বুরুঙ্গাছড়া ছড়া গ্রামের পেছনে জিরো লাইনের একটি জঙ্গলে সোমবার সকালে ভারতীয় ঐ কিশোরীকে অপহরণ পুর্বক এ গণধর্ষণের ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে।
সীমান্তের এপারে থাকা একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন বিজিবি-বিএসএফের উপস্থিতিতে কঠোর নিরাপক্তার মধ্য দিয়ে দুপুরের পর ঐ ধর্ষিতা কিশোরীকে মুমুর্ষ অবস্থায় ভারতের ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। পরববর্তীতে বিএসএফের গাড়িতে করে বিকেলেই উন্নত চিকিৎসা ও ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য ভারতের মেঘালয় ষ্টেইটের রাণীঘর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সীমান্তের ওপারে থাকা ভারতীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ ও বেশ কিছুটা উক্তেজনা বিরাজ করছে।
বর্বোরিত এ ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ভারতের শিলং জেলার মেঘালয় ষ্টেইটের বড়ছড়া শুল্ক ষ্টেশনের ওপারের দরিদ্র কয়লা শ্রমিক মুসলিম বস্থির ১৩ বছরের এক কিশোরী সোমবার সকালে ১১ টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে সীমান্তের এপারে জিরো লাইনে থাকা পাহাড়ি ছড়া থেকে পানি নিতে আসলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাট সীমান্তের বুরুঙ্গাছড়া গ্রামের মৃত ইদ্রিসের ছেলে সীমান্তের ইয়াবা ও কয়লা চোরাকারবারী মাদক স¤্রাট হান্নান গ্রুপের সক্রিয় সদস্য একই গ্রামের কাসেমের ছেলে জুলহাস (২৩), বড়ছড়া শুল্ক ষ্টেশনের হাবিজের ছেলে হানিফ (২৫) ও বড়ছড়া শুল্ক ষ্টেশনে বসবাসকারী উপজেলার বাদাঘাটের কামড়াবন্দ গ্রামের মন্তাজের ছেলে শাহীন (২৪) সহ তিন নরপশু সংঘবদ্ধ হয়ে ঐ ভারতীয় কিশোরীকে জোরপুর্বক অপহরণ করে বুরুঙ্গাছড়া গ্রামের পেছনে জিরো লাইনের পাহাড়ের নিচের একটি জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। গণধর্ষণ কালে প্রচন্ড ঝড় ও বৃষ্টি থাকায় কেউ ঘর থেকে বের না হওয়ায় ঐ কিশোরীকে পালাক্রমে গণ ধর্ষণ করার এক পর্যায়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে সংঙাহীন হয়ে পড়ে। প্রায় এক থেকে পৌণে এক ঘন্টা পর বৃষ্টি থেমে গেলে বুরঙ্গাছড়া গ্রামের মহিবুর সহ একাধিক গ্রামবাসী রক্তার্থ অবস্থায় কিশোরীকে উদ্যার করে এপারে মুহিবুরের বাড়িতে নিয়ে আসে। খবর পেয়ে টেকেরঘাট বিওপির বিজিবির একটি টহল দল ও এফএস সদস্যরা বুরুঙ্গা ছড়া মুহিবুরের বাড়িতে উপস্থিত হলে পরে ওপার থেকে কিশোরীর বাবা-মা ছুটে আসলে গ্রামবাসীর সামনে নরপিশাচ ধর্ষণকারী ও লোমহর্ষক গণ ধর্ষণের বর্ণনা করে ঐ কিশোরী। এ খবর সীমান্তের ওপারে ছড়িয়ে পড়লে শিলং ৭৩ বিএসএফ’র বড়ছড়া কোম্পানী হেডকোয়ার্টারের একটি টহল দলও এসে জিরো লাইনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। দুপুরের পর পরই বিজিবি-বিএসএফর উপস্থিতিতে ধর্ষিতা কিশোরীকে তার মা-বাবা ও ওপারের মুসলিম বস্থিও লোকজনের সহায়তায় কাঁধে করে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এপারের গ্রামবাসী ও বড়ছড়া টেকেরঘাট সীমান্তের সড়কে দাড়িয়ে থাকা একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভাঙ্গারঘাট কোয়ারীর ওপারে পাহাড়ের বস্থিতে ঐ কিশোরীকে নিয়ে যাওয়ার পর বিকেলে পৌণে ৫টার দিকে বিএসএফের গাড়িতে করে মুমুর্ষ উন্নত চিকিৎসা ও ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য ঐ কিশোরীকে ভারতের রাণীগড় হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ-৮ বর্ডারগার্ড ব্যাটালিয়ন বিজিবির উপ-অধিনায়ক ও অপারেশনাল অফিসার মেজর মো. কামরুজ্জামান খাঁনের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বললেন জানান, আপাতত বিজিবির ও বিএসএফের উপস্থিতিতে ঐ কিশোরীকে তার মা-বাবার মাধ্যমে ভারতে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে বিএসএফের মাধ্যমে যদি লিখিত ভাবে বিজিবির নিকট ধর্ষণ কিংবা যে কোন ধরণের ঘটনাই ঘটে থাকুক না কেন ঘটনার সাথে জড়িতদের ব্যাপারে বিজিবির পক্ষ থেকে আইনগত সহায়তা দেয়া হবে।