যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে চীন প্রস্তুত

chinise shipসুরমা টাইমস ডেস্কঃ চীনা সেনাবাহিনীর যুদ্ধ-সক্ষমতা নিয়ে বতাসে দুটো কথা চালু রয়েছে। প্রথমত, বেইজিং দ্রুগগতিতে তাদের সামরিক শক্তি বাড়িয়ে চলেছে। অভ্যন্তরীণ-আঞ্চলিক যে কোনো সংকট দমন এমনকি আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে তারা পরাজিত করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, চীন আসলে একটা কাগুজে ড্রাগন। যত গর্জে ততে বর্ষে না। বৈশ্বিক কোনো সংঘাতে নিজেদের জড়ানোর মতো সাহস নেই।
সোমবার রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, চীনের সামরিক সক্ষমতার ব্যাপারে উপরোক্ত দুটো কথাই একই সঙ্গে সত্য। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৫ সংস্করণের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘বেইজিংয়ের সামরিক লক্ষ্য- বিশ্বশক্তি হিসেবে চীনের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় চূড়ান্তভাবে আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা। সামরিক দিক দিয়ে চীন বিশ্ব পরাশক্তি নয় এবং এখন তারা সেটা হতেও চায় না।
কিন্তু এর অর্থ এই না যে, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এ দেশ শক্তিশালী দেশগুলোর জন্য কোনো হুমকি নয়। আসলে মুখে যাই বলা হোক, চীনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্নই রয়েছে।
বিশেষ করে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বেইজিংয়ের সম্প্রসারণবাদী মনোভাব ও বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী চীনের বিস্ময়কর অর্থনৈতিক উত্থানে ওয়াশিংটন রীতিমতো ভ্যাবাচেকা খাচ্ছে।
এটা সত্য যে, আন্তর্জাতিক যুদ্ধক্ষেত্রে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে পাল্লা দিতে চীন অক্ষম। সমর বিশেষজ্ঞ, সামরিক নীতিকৌশল ও আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রে দেশটির অভাব রয়েছে। চীনা বাহিনীর সাম্প্র্রতিক কোনো যুদ্ধের অভিজ্ঞতাও নেই।
ফলে তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ ধাঁচ বাস্তবতা বিবর্জিত। বেইজিংয়ের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর যেসব নতুন অস্ত্র রয়েছে, তার অধিকাংশের নকশা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের কাছ থেকে চীনা হ্যাকারদের চুরি করে নেয়া। তাই এগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে ঠিক কীভাবে কাজ করবে সে ব্যপারে তারা ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে।
কিন্তু এগুলো কোনো ব্যাপার না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বব্যাপী সেনা মোতায়েন করে যুদ্ধফ্রন্ট খোলার ইচ্ছে চীনের নেই। বেইজিংয়ের প্রস্তুতি কেবল এর সীমান্তবর্তী অঞ্চল বিশেষ করে সমুদ্র সীমানায়। আর এ কাজটি চীনের অনভিজ্ঞ বাহিনীর জন্যও খুব সহজ। তবে বেইজিংয়ের নিজের এলাকায় যুদ্ধ করতে এলে ওয়াশিংটনের শোচনীয় পরাজয় হবে।
চীনের বর্তমান সামরিক অগ্রগতিতে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে অতীত ইতিহাস। ১৯৩০ ও ১৯৪০ এর দশকে জাপানের নির্মম আগ্রাসনের পর তার সামরিক কৌশলে পরিবর্তন এসেছে। ১৯৮০’র দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বেইজিংয়ের ভয় ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন স্থল আক্রমণ করতে পারে।
১৯৮৫ সালের পর সেই ভয় কেটে গেলে পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তের পরিবর্তে দক্ষিণাঞ্চলীয় সমুদ্র নিরাপত্তায় নজর দেয় চীন। ৩০ বছর পর এখন বেইজিং স্বমহিমায় শক্তিমান।
জেট বিমানবহরের দিক দিয়ে চীন বিশ্ব দ্বিতীয়। যুক্তরাষ্ট্রের ২৮০০ জেট বিমানের বিপরীতে চীনের ১৫০০ বিমান রয়েছে। যুদ্ধজাহাজের দিক দিয়েও দ্বিতীয় অবস্থানে বেইজিং (৩০০)। ওয়াশিংটনের রয়েছে ৫০০ যুদ্ধজাহাজ।
যুক্তরাষ্ট্র সংখ্যার দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও বিশ্বব্যাপী তাদের অনেক যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান মোতায়েন রয়েছে। সঙ্গত কারণেই যুক্তরাষ্ট্র তার সব শক্তি একই স্থানে নিয়োগ করতে পারবে না। এই সুফলটাই পাবে চীন।
এখন বেইজিংয়ের প্রতিরক্ষা নীতি হচ্ছে আক্রমণের শিকার হলেই কেবল তারা যুদ্ধে যাবে। আর ওয়াশিংটন দেয়ালে পিঠ না ঠেকা পর্যন্ত চীনে হামলার সাহস করবে না।