সিলেটে ইফতারি সামগ্রীতে রাসায়নিক রং, মচমচে করতে পোড়া মবিল
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেটের ইফতারি মানেই বাহারি আয়োজন এই ঐতিহ্য আজকের নই অনেক আগের। এই বাহারি আয়োজনে সাথে থাকে বিভিন্ন রেস্তোরায় তৈরি ইফতারি। এর মধ্যে অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁয় তৈরি ইফতারি সামগ্রিতে ক্রেতাদের কাছে আকর্ষণ বাড়াতে ব্যবহৃত হচ্ছে রাসায়নিক রং এবং তেলে ভাজা পিয়াজু, চপ, বেগুণি মচমচে করতে পোড়া মবিল ব্যবহারের তথ্য পাওয়া গেছে।
সারাদিন রোজা রেখে সিলেটের প্রত্যেকটি বাসা-বাড়িতে ইফতারিতে ভিন্ন কিংবা নতুন কিছুর আয়োজন করে থাকেন। আর এই ঘরের আয়োজনের সাথে বিভিন্ন রেস্তোরায় তৈরি ইফতারি সাথে নিয়ে থাকেন অনেকেই। এসব ইফতারি সামগ্রি স্বাস্থ্য সম্মত কিনা এটি অনেক সময় ভেবে দেখননা রোজাদাররা। এতেই বাধে বিপত্তি অনেক সময় এসব বাজারে কিংবা বিভিন্ন রেস্তোরয়া তৈরি অস্বাস্থ্যকর ইফতারি খেয়ে নানা সমস্যা দেখা দেয় আবার এর থেকে মারত্মক রোগ বাধার আশংকাও থেকে যায়। এসব রাসায়নিক মিশিয়ে ও পোড়া মবিলে বানানো খাবার বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। নগরীর বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, সোবহানীঘাট, মীরাবাজার, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, কাজীবাজার, কালীঘাট, আম্বরখানা, শাহী ঈদগাহ, সুবিদবাজার, পাঠানটোলা, কদমতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় খোলাবাজারে এসব ইফতারসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। এসব এলাকায় কারিগরেরা প্রকাশ্যে রাসায়নিক মিশিয়ে জিলাপি, পেঁয়াজু, বেগুনি, বড়াসহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করছেন।
ভেজাল রোধ করতে সিলেট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান রমজানের প্রথম দিন নগরীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওই দিনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রকাশ্যে রং মিশিয়ে ইফতারসামগ্রী তৈরি করছিলেন। তাঁদের আটকের পর নিজেদের দোষ স্বীকার করে ভবিষ্যতে এমনটি করবেন না বলে উপস্থিত সাধারণ মানুষ, ক্রেতা ও পথচারীদের সামনে কথা দিলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। একই কাজের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, তাই এসব ব্যবসায়ীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ইফতারি তৈরির কাজে নিয়োজিত নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার ও কদমতলী এলাকার বেশ কয়েকজন জানান, জিলাপি ও পেঁয়াজু তৈরির উপকরণ ময়দা, ডালের গুঁড়ায়, বেগুনি তৈরির বেসন, চপ, বড়াসহ ময়দাজাত বিভিন্ন সামগ্রীতে বাসন্তী রং ব্যবহার করা হয়। এতে খাবারে ঔজ্জ্বল্য বাড়ে। এ ছাড়া প্রস্তুত করা খাবার মচমচে, তাজা ও কড়কড়ে রাখতে তেলের সঙ্গে পোড়া মবিল মেশানো হয়।
জিন্দাবাজার এলাকার ফুটপাতে স্থাপিত একটি ভ্রাম্যমাণ ইফতারি দোকানের কারিগরের সাথে আলাপকালে জানাগেছে, ইফতারসামগ্রী তাজা রাখতে সব কারিগর তেলে পোড়া মবিল মিশায়। বাসন্তী রং না দিলে জিলাপি দেখতে সুন্দর লাগে না। তাই অনেকে এগুলো কিনতে চায় না। সবাই রং মিশায়, তাই আমিও মিশাই।’
সিলেটের সিভিল সার্জন মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বাসন্তী রং খুবই নিম্নমানের রাসায়নিক। এটি খাবারে ব্যবহৃত হলে পেটের পীড়া থেকে শুরু করে ক্যানসার, জন্ডিস ও কিডনি-সংক্রান্ত ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। এর বাইরে পোড়া মবিল দিয়ে তৈরি করা ইফতারসামগ্রী খেলে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।’
সিলেটের কয়েকটি হোটেল-রেস্তোরাঁর বাবুর্চিদের সাথে আলাপকালে জানাগেছে, বাসন্তী রং ও মিষ্টিজাত সামগ্রীতে ব্যবহৃত রাসায়নিক নগরীর মহাজনপট্টি, কালীঘাট ও বন্দরবাজার এলাকার বিভিন্ন দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজান মাসে বাসন্তী রঙের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায় বলে মহাজনপট্টি এলাকার বেশ কিছু বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আম্বরখানা এলাকার এক বিক্রেতা জানান, জিলাপি তৈরিতে বাসন্তী রং (শস্যফুলি) এবং বিভিন্ন ধরনের তেলে ভাজা খাদ্য মচমচে রাখতে পোড়া মবিল ব্যবহার করা হয়। বছরের পর বছর ধরে এমনটা হয়ে আসছে। বুধবার বিকেল ৪টার দিকে নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় ইফতারসামগ্রী কিনতে আসা রিপন আহমদ জানান, ‘বাজারের ইফতারসামগ্রী দেখতে সুন্দর এবং আকর্ষণীয় সুস্বাদু সে জন্য প্রায়ই ক্রয় করে থাকি। তবে স্বাস্থ্যকর হবে কিনা সে বিষয়ে কখনো ভাবিনি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রমজানের প্রথম দিন থেকেই জেলা প্রশাসন প্রায় সব কটি এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। ইফতার ও মিষ্টিজাত সামগ্রীতে বাসন্তী রং কিংবা পোড়া মবিল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধেও শিগগির জোরেশোরে অভিযান চালানো হবে।’