পোল্ট্রি হ্যাচারীর বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ ॥ রোগাক্রান্ত কমলগঞ্জের স্থানীয়রা
বিশ্বজিৎ রায়, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের চৈত্রঘাট এলাকায় পোল্ট্রি হ্যাচারীর বিষাক্ত বর্জ্যরে দুর্গন্ধে রোগান্ত শিশুসহ স্থানীয় লোকজন। দূষিত হয়ে উঠছে অত্র এলাকার পরিবেশ। হ্যাচারীর অনুমতি নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ব্রয়লার মুরগী উৎপাদনের ফলে লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র খামারী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিনে চৈত্রঘাট এলাকা পরিদর্শন করে স্থানীয় লোকদের অভিযোগে এ চিত্র পাওয়া যায়।
সরজমিন গেলে স্থানীয় গ্রামের শরীফ আহমদ, সিতাংশু দত্ত, আজির উদ্দিন জানান, চৈত্রঘাট এলাকায় ধলাই নদীর তীরে পোল্ট্রি হ্যাচারীর জন্য কর্তৃপক্ষ তাদের ক্রয়কৃত চার একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমির সাথে আরও প্রায় ৫ থেকে ৮ একর নদী তীরবর্তী সরকারি খাসভূমিসহ ও জনসাধারনের চলাচলের ১৮ থেকে ২৫ ফুট প্রস্থ রাস্তা দখল করে বাউন্ডারী দেয়ালের ভেতরে পোল্ট্রি হ্যাচারী স্থাপন করা হয়েছে। একটি প্রভাবশালী মহলের সহযোগীতায় অবৈধভাবে পোল্ট্রি হ্যাচারী স্থাপনের প্রতিবাদে এলাকাবাসী প্রতিবাদ জানালেও তাতে কোন কর্ণপাত করা হয়নি। ‘সি.পি. বাংলাদেশ লিঃ’ নাম ধারণ করে ওই পোল্ট্রি হ্যাচারীতে গত দেড় মাস ধরে ব্রয়লার মোরগ উৎপাদন শুরু করলে হ্যাচারী বিষাক্ত বর্জ্যরে প্রচন্ড দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। চৈত্রঘাটে অনিবালা দত্ত বলেন, এই হ্যাচারী বর্জ্যরে দুর্গন্ধে তাদের বসবাস করা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁর ছোট বাচ্চা অসুস্থ্য হয়ে পড়লে চিকিৎসা করানোর পরও সমস্যা দেখা দেয়ায় তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়েছেন। মলয় ভৌমিক বলেন, এই খামার চালুর পর থেকেই তাঁর গর্ভবর্তী স্ত্রীর পাতলা পায়খানা, সর্দি, কাশি ও শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিয়েছে। গ্রামের শরীফ আহমদ, সিতাংশু দত্ত, আজির উদ্দিন আরও বলেন, এই হ্যাচারীর প্রচন্ড দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে মানুষ যাতায়াত করতেও নাকে চেপে ধরতে হয়। ছোট শিশুরা অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। আব্দুল জলিলের ৩ বছর বয়সি সন্তান সোনিয়া ও ৫ বছর বয়সি ফজলের ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। গ্রামের মিহির লাল দেব তার অসুস্থ্য বাচ্চাকে নিয়ে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চলে গেছেন। এছাড়াও নছির মিয়ার দুই শিশু অসুস্থ্য হয়ে উঠছে। মহেষ ভৈৗমিক, সুমিত্তা বেগম, শিবু দত্ত বলেন, বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা ও সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। বিপুল পাল, অমর চান, শ্যামা পদ দেব, বীরেন্দ্র দেব সহ এলাকার ক্ষুদ্র খামারীরা অভিযোগ করেন, পোল্ট্রি হ্যাচারীর অনুমতি নিয়ে তারা অনৈতিকভাবে বাণিজ্যিক ব্রয়লার মুরগী উৎপাদন শুরু করেছে। ফলে তারা ক্ষুদ্র খামারীরা পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
সি,পি বাংলাদেশ লিঃ এর এ ধরনের আগ্রাসী তৎপরতার প্রতিবাদে মৌলভীবাজার পোল্ট্রি বিজনেস এসোশিয়েশন এর পক্ষ থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তারা এর প্রতিবাদে ২২ জুন মৌলভীবাজারে মানববন্ধন পালন করবেন। মুন্সিবাজার ইউনিয়ন ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চৈত্রঘাট মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানের হ্যাচারী নির্মিত স্থানের শুধুমাত্র ১১৪ নম্বর দাগে ২ একর ২৪ শতক ভূমিই রয়েছে ডিসি খতিয়ানের। সরেজমিনে দেখা যায়, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের যৌথ মালিকানায় স্থাপিত পোল্ট্রি হ্যাচারীর বিষাক্ত বর্জ্যরে বায়ু দূষণসহ এলাকাবাসী নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। রাস্তা দিয়েও যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে না। প্রচন্ড দুর্গন্ধে নাকে কাপড় ঢেকে পথচারীরা যাতায়াত করছেন। চৈত্রঘাট এলাকায় প্রায় আড়াই শতাধিক বাড়িঘরের চার সহ¯্রাধিক লোক বসবাস করছেন। প্রত্যেকেই এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। অভিযোগ বিষয়ে পোল্ট্রি হ্যাচারীর কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে সাংবাদিক পরিচয় জানার পর গেটের ভিতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি। তবে কয়েক মাস পূর্বে স্থানীয় এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের কেয়ার টেকার সাহেদ আহমদ জানান, বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে ভূমি ক্রয় করে থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের যৌথ মালিকানায় হ্যাচারী নির্মিত হয়েছে। এখানে কোন সরকারী খাস জমি নেই। এখানে কোন পরিবেশ দূষন ঘটছে না বলে তিনি দাবি করেন।
কমলগঞ্জ ইউএনও জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর কাছে দেয়া অভিযোগের একটি অনুলিপি পেয়েছেন। অভিযোগ বিষয়ে খতিয়ে দেখবেন।