সিলেটে ভুল চিকিৎসার অভিযোগে দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা

wrong tratment by doctorsসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ ভুল চিকিৎসার অভিযোগে দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সিলেটে মামলা হয়েছে। চিকিৎসকরা হলেন, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (সিওমেক) সার্জারি অধ্যাপক ডা. ডি.এ হাসান ও জালালাবাদ রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আবেদ হুসাইন।
২৮ নভেম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে মামলাটি (সিআর নং-৯৯৮/১৪) দায়ের করেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার উপজেলার মোগলাবাজার থানার কুচাই ইউনিয়নের আব্দুর রউফ। আদালতের বিচারক শাহেদুল করিম অভিযোগ গ্রহণ করে ওসমানী মেডিকেল কলেজের (সিওমেক) অধ্যক্ষকে আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযোগে আব্দুর রউফ উল্লেখ করেন, গত ৮ জুন পেটের ব্যথাজনিত কারণে সিওমেক-এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মো. ঈসমাইল পাটোয়ারীর ব্যক্তিগত চেম্বারে গেলে তিনি ঔষধ ও এক্সরে পরীক্ষার পরামর্শ দেন।
১০ জুন পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হিস্ট্রোপলজি রিপোর্ট করানো হয়। ওখানে কর্মরত প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. আবেদ হুসাইন রিপোর্টে ‘কোলন-এডিনোকার্সিনমা’ উল্লেখ করেন। রিপোর্টটি দেখে ওপর ডা. রফিকুস সালেহীন রোগীর ক্যান্সার হয়েছে এবং অপারেশনে লক্ষাধিক টাকা খরচ হবে বলে জানিয়ে দেন।
অসচ্ছলতার কারলে আব্দুর রউফ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মামলার ১নং বিবাদী সার্জারি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডি.এ হাসানের কাছে যান। রিপোর্ট দেখে এই চিকিৎসক দ্রুত প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়ে বলেন, সরকারি হাসপাতালে ভাল চিকিৎসা হয় না।
ডিএ হাসানের পরামর্শ অনুযায়ী গত ২০ জুন সিলেট নগরীর মধুশহীদ ১০ নং ভবনে অবস্থিত আরোগ্য পলি ক্লিনিকে ভর্তি হন আব্দুর রউফ। ওই চিকিৎসক হাসপাতালের সার্ভিস চার্জ ও ওষুধসামগ্রী ছাড়া শুধু অপারেশনের জন্য ১০ হাজার টাকা নেন।
২৪ জুন রোগের কোনো ধরণের পরীক্ষা ছাড়াই ডা. ডিএ হাসানসহ চিকিৎসকরা আব্দুর রউফের পেটে অস্ত্রোপচার করেন। কিন্তু অস্ত্রোপচারকালে ডা. ডি.এ হাসান রোগীর স্বজনদের অনুতপ্ত হয়ে বলেন, রোগীর পেটে কোনো ধরনের ক্যান্সারের লক্ষণ (টিউমার) পাননি।
প্যাথলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আবেদ হুসাইনের রিপোর্ট অনুযায়ী ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ না পেয়ে ডি.এ হাসান অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়াই রোগীর পেটের মধ্যে একটি রগ ‘অ্যাপেনডিক্স’র কেটে ফেলেন। কেটে ফেলা অংশ পরীক্ষার জন্য নগরীর ট্রাস্ট মেডিকেল সার্ভিস নামক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু এতে কোনো ক্যান্সারের লক্ষণ নেই বলে রিপোর্ট দেন একই প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. আবেদ হোসাইন।
শঙ্কিত স্বজনরা আব্দুর রউফকে নিয়ে যান ঢাকাস্থ গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে। সেখানে বিশেজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আলী রোগীর সব চিকিৎসা রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে ঢাকায় ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার জন্য পাঠান। সেখানে ডা. আর এন রবিন পরীক্ষার পর (মাইল্ড ফ্যাটি চ্যাঞ্জ ইন লিভার) সমস্যা উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেন। ট্রাস্ট মেডিকেলের থেকে রোগীর পুনঃপরীক্ষা করানো হলে অভিযোগের ৫ নং স্বাক্ষী প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ কামাল প্রতিবেদনে কোনো ক্ষতিকারক টিউমার পাননি বলে উল্লেখ করেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মুমিনুর রহমান টিটু বলেন, চিকিৎসকের উচিত ছিল অস্ত্রোপচারের আগে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়। এক রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে তারা অপারেশন করেছেন। এটা মোটেও উচিত হয়নি।
এ ব্যাপারে ডা. ডিএ হাসান বলেন, অস্ত্রোপচারকালে রিপোর্ট অনুযায়ী যথাস্থানে টিউমার না পেয়ে নিজের দায়বোধ থেকে রোগীর অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপ করেন। পুনরায় রোগীর ক্লোনোস্কপি করিয়ে অপারেশন করার আশ্বাস দেন তিনি। অপারেশন যখন করেছি তাই রোগীর পরবর্তী সমস্যার কথা চিন্তা করে ‘অ্যাপেন্ডিস’ রগ কেটে দেন তিনি।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি স্কয়ারসহ বিভিন্ন হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রোগীর সুস্থতার জন্য তিনি নিজেও টাকা খরচ করতে চান। রোগীকে নিজের স্বজন মনে করে সেবা দেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, রিপোর্টে সঠিক স্থান নির্ণয়ে ব্যতয় ঘটনায় এমনটি হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. আবেদ হুসাইন বলেন, কলোনস্কপির মাধ্যমে নিয়ে আসা ছোট ছোট মাংসপিণ্ড পরীক্ষার পর রোগীর টিউমারের অস্তিত্ব মিলেছে। অস্ত্রোপচার করে টিউমার না পেলেও টিউমারটি কোলনের ভেতরেও থাকতে পারে।
তাছাড়া ডা. কামালের দেওয়া রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, রিপোর্টই এ ধরণের টিউমার ক্যান্সারের অস্তিত্ব বহন করে। আর টিউমার ভেতরেও থাকতে পারে। চিকিৎসা বিদ্যার নিয়মের বাইরে বা ব্যক্তিগত অভিপ্রায় থেকে কিছুই করিনি।
ভুক্তভোগী মামলার বাদী আব্দুর রউফ বলেন, ‘রোগ নির্ণয় না করেই চিকিৎসকরা আমার অপারেশন করেছেন। আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ার পাশাপাশি শারীরিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েছি।’
মামলায় স্বাক্ষী হিসেবে ঢাকা ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক, দুই আত্মীয় ও স্ত্রীর নাম উল্লেখ করেন তিনি।