বিচারকের যে কথা শুনে হাসলেন খালেদা জিয়া
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ খালেদা জিয়া আবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হলে বিচারক হিসেবে যেন তাঁকে রাখা হয়, সে ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদ্দার। আজ বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষীকে জেরার সময় একপর্যায়ে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘খালেদা জিয়া আবার প্রধানমন্ত্রী হলে বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রসিকিউটর হিসেবে মোশাররফ হোসেন কাজলকে বহাল রাখা হবে।’
বিচারক আবু আহমেদ জমাদ্দার বলেন, ‘আমাকেও যেন বিচারক হিসেবে রাখা হয়। আমি ওই সময়ের বিরোধীপক্ষের মামলা পরিচালনা করতে চাই।’
কথোপকথনের এ পর্যায়ে খালেদা জিয়াকে হাসতে দেখা যায়। তবে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এরপর আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বিচারককে বলেন, ‘আপনি তো তখন হাইকোর্টের সিনিয়র বিচারপতি থাকবেন।’ এ সময় বিচারক বলেন, ‘আমার সিনিয়র বিচারপতি হওয়ার প্রয়োজন নেই। নিম্ন আদালতে থেকেই আমি বিচার পরিচালনা করতে চাই।’
অবশ্য এর আগে শুনানি চলাকালে খালেদা জিয়ার মামলার রায় দেওয়া হলে বিচারক আবু আহমেদ জমাদ্দারকে উচ্চ আদালতে প্রমোশন দেওয়া হবে বলে অভিযোগ তোলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
মামলার পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী, আজ বৃস্পতিবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত হন। তার আগে সাড়ে ১০টায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার সাক্ষীকে জেরা ও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সময় আবেদন করেন। একই সঙ্গে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের বিষয়ে হাইকোর্টে বিচারাধীন থাকায় মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের শুনানি জন্য সময় আবেদন করা হয়।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু ওই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের বিষয়ে হাইকোর্টে আবেদন রয়েছে। ওটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ মামলা শুরু করা যাচ্ছে না।’
শুনানির একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের বয়স ৮২ বছর। তিনি আদালত অঙ্গনের একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি যদি কোনো বিষয়ে আবেদন করেন, বিজ্ঞ আদালত সেটি বিবেচনায় নিতে পারেন।’
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘বিচার করতে আদালতে বসেছি। মামলা কার্যক্রম শুরু না করলে বিচার হবে কীভাবে। এ মামলার প্রধান আসামি দেশের একজন সম্মানিত ব্যক্তি। উনি আদালতে আসতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাঁচ হাজার সদস্যকে ব্যস্ত থাকতে হয়। এত কষ্ট করে আদালতে আসার পর যদি বিচার শুরু না হয়, তাহলে এসে সময় নষ্ট করার কী দরকার?’
আদালতের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সারা দেশে ২৮ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। এ মামলা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের এত মাথাব্যথা কেন? রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আপনি বিচারক, আপনার ওপর হয়তো চাপ রয়েছে এ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য। কিন্তু ন্যায়বিচারের স্বার্থে সময় দেওয়া প্রয়োজন, জনগণ যাতে বুঝতে পারে এ মামলার বিচার দৃশ্যমান। এবং আদালত যথেষ্ট সহানুভূতি দেখিয়েছেন। আদালতে কোন বিচারক বসেছে তা বিষয় নয়, ওই চেয়ারে যিনি বসেন তাঁকে সম্মান দেখিয়ে আইনজীবীরা মামলা পরিচালনা করেন।’
পরে আদালত বলেন, ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা কার্যক্রম শুরু করেন, অন্যথায় বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্তই আমি আদালতে সবার শুধু কথা শুনতে থাকব।’
মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ নিয়ে দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত ২৩ জুলাই তারিখ নির্ধারণ করেন।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুদক।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
অন্যদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় আরো একটি মামলা করে দুদক।
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।