জন্ম থেকেই জ্বলছে না নগরীর ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি !
ইয়াহইয়া মারুফঃ দেশের অন্যান্য নগর-মহানগরে অনেক উন্নয়ন হলেও পিছিয়ে সিলেট। নগরীতে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতিই এর উদাহরণ। দ্বিতীয় লন্ডন বলে সারাদেশে যে নগরীর পরিচিতি সেই নগরীতে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি নেই তা ভাবতে অবাক লাগে! এই ডিজিটাইলাজেশনের যুগে এসেও সিলেটের রাজপথে দেখা মেলেনা কোনো ট্রাফিক সিগন্যাল বাতির। এখনো সনাতন পদ্ধতিতে নগরীর মোড়ে মোড়ে চলছে হাত নেড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কাজ। নগরীতে প্রতিনিয়তই যানজটের কবলে পড়া মানুষের একটাই প্রশ্ন ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি জ্বলবে কবে? আর কতো বছর গেলে সিলেটবাসী দেখবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের লাল সবুজ সিগন্যাল বাতি?
জানা যায়, দীর্ঘ ১৮ বছর আগে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সিলেট পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড়ে ৬টি ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হলেও তা আজ প্রায়ই বিলুপ্তির পথে। লাগানোর একবছরের মাথায় নষ্ট হয়ে যাওয়া বাতিগুলো পরবর্তীতে আর কোনো সরকারের আমলেই আলোকিত হয়নি। সিলেট ১ আসনের এমপি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ছিল আলোকিত সিলেট গড়ার। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অনেক কিছুই করেছেন কিন্তু মহাজোট সরকারের দুই মেয়াদে ৬বছরে মাথায় পা রাখলেও আলোকিত হয়নি সিলেট নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা।
দীর্ঘ ১৮ বছর আগে তৎকালীন সিলেট পৌরসভার উদ্যোগে সিলেট শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হয়। পরর্বতীতে আধুনিক সিগন্যাল বাতি লাগানো হলেও এখন তার স্মৃতিটুকুও অবশিষ্ট নেই বললেই চলে। প্রায় সবক’টি পয়েন্টেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাতি ও স্টিলের স্থাপনা। আর অনেকটা এ কারণেই সিলেট মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রায় ভেঙ্গে পড়ছে। প্রতিদিনই সাধারণ মানুষদের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে যানজটের কবলে পড়ে। হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। ত্রিশ লাখ টাকা ব্যয়ে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি স্থাপন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সিলেট শহরের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে তৎকালিন পৌরসভার উদ্যোগে মাঝারি শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় লাগানো হয় বাতিগুলো।
মূল নগরীর প্রবেশপথ সুরমা মার্কেট পয়েন্ট, রিকাবীবাজার, চৌহাট্টা, নয়াসড়ক, নাইওরপুল, আম্বরখানা পয়েন্টে বসানো হয়েছিলো ট্রাফিক সিগন্যাল বাতিগুলো। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) বাতি লাগানোর কাজ তদারকি করেছিল। লাগানোর একবছরের মাথায়ই অকেজো হয়ে পড়ে বাতিগুলো। ওইসময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উঠে দুর্নীতির অভিযোগ। দেশে নির্মিত সামগ্রী বিদেশী বলে ধোঁকা দেয়ার অভিযোগ উঠে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পায় দুর্নীতি দমন ব্যুরো। এ তদন্তেও ভাটা পড়েছে। তাই আজও আলোর মুখ দেখেনি সিলেট নগরীর ট্রাফিক সিগন্যাল বাতিগুলো। ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগে দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও নগরী ট্রাফিক ব্যবস্থা যতোটা উন্নত হচ্ছে ততোটাই যেনো পিছিয়ে পড়ছে সিলেটের ট্রাফিক ব্যবস্থা।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল আনাম মিন্টু বলেন, দ্বিতীয় লন্ডন বলে সারাদেশে যে নগরীর সুনাম বা কদর সেই নগরীতে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি নেই তা ভাবতে অবাক লাগে। তিনি অবিলম্বে সিলেট নগরীর গুরত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি চালু করার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে আহবান জানান। তবে বিষয়টি নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন ও মহানগর ট্রাফিক পুলিশ একে ওপরের দায়ভার বলে চালিয়ে যাচ্ছেন।
মহানগর ট্রাফিক পুলিশ বলছে, এটা সিলেট সিটি করপোরেশনের কাজ। কয়টা আছে না আছে এবং মেরামত করবে কিনা, এটা তাদের ব্যাপার। আর সিলেট সিটি করপোরেশন বলছে, ট্রাফিক পুলিশ বললে মেরামত করে দেওয়া হবে।
অপরদিকে, সরকার দেশকে ডিজিটাল করার জন্য করলেও বাংলাদেশের শহরগুলোতে নাকি ডিজিটাল সিগন্যাল বাতি জ্বালিয়ে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনে করে যানজট নিরেসনের মত সড়ক নেই বলে মন্তব্য করে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) নিকুলিন চাকমা বলেন, বিষয়টি সিলেট সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। তা ছাড়া রাজধানীতে ডিজিটাল সিগন্যাল বাতি জ্বালিয়ে কর্তৃপক্ষ যানজট নিরসনে ব্যর্থ হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, ট্রাফিক বিভাগ সিলেট সিটি করপোরেশনকে অবগত করলে সবগুলো ট্রাফিক সিগন্যাল মেরামত করে দেওয়া হবে।