প্রকৃতি কন্যা জাফলং এখন বিবর্ণ : তিন কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা
প্রতিবাদে আজ থেকে ধর্মঘট
দূর্গেশ চন্দ্র সরকার (বাপ্পী), গোয়াইনঘাট থেকেঃ অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য জাফলংকে বলা হয় ‘প্রকৃতি কন্যা’। ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা ঝড়না ধারা, জৈন্তার রাজবাড়ি, খাসিয়া ও পানপুঞ্জি ও জাফলংয়ের স্বচ্ছ পানিতে নুরি পাথরের জলকেলি এক পলক দেখার জন্য প্রতিদিন দেশি-বিদেশী হাজারো পর্যটক এসে থাকেন এখানে। কিন্তু অপরুপ সৌন্দর্য আজ বির্বণ হতে চলেছে প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশার কারণে।
সিলেট-জাফলং মহাসড়কের মামার দোকান-বল্লাঘাট জাফলং কোয়ারি পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য একেবারে অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। ফলে বৃষ্টির এই মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই হাটুজল আর কাঁদা মাটিতে একাকার হয়ে যায়। অথচ তামাবিল শুল্ক স্থলবন্দর দিয়ে ভারত যাতায়াতেরও একমাত্র মাধ্যম সিলেট-তামাবিল মহাসড়কটি।
এশিয়ান এই মহা সড়কটি দেখলে কেউই বিশ্বাস করবেন এখানে একটি সড়ক ছিলো। সড়কের এই বেহাল অবস্থায়ও ঝুকি নিয়ে চলছে যানবাহন চলাচল। ঘটছে দুর্ঘটনাও। কোয়ারি থেকে পাথর বহনকারী ট্রাক কিংবা ভারত থেকে আসা কয়লাবাহী ট্রাক প্রতিদিনই গর্তে আটকা পরছে অথবা উল্টে গিয়ে পুরো সড়কেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পর্যটকরাও আটকা পড়েন অহরহ। ফলে চরম দুর্ভোগের নাম এখন এই মহাসড়টি। আর এ কারণে জাফলংয়ে পর্যটকদের আগমন আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।
স্থানীয় যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে মারাতœক দুর্ভোগ। এ অবস্থায় স্থানীয় বেশ কয়েকটি সংগঠন শনিবার থেকে এই সড়কে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। পাথর পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্ট সব কয়টি যানবাহন আজ শনিবার থেকে ধর্মঘট পালন করবে বলে শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, জাফলংয়ের পাথর দিয়ে সারাদেশে নির্মিত হচ্ছে ইমারত। কিন্তু, গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি সংস্কারের পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে সড়কটির এমন দশা যে, এখান দিয়ে যান চলাচলের কোন জো নেই। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় বিভিন্ন ধরণের যানবাহন নষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা। বেহাল রাস্তার কারণে প্রকৃতিকন্যা জাফলং বর্তমানে পর্যটক বিমুখ হয়ে পরেছে। তাই, শুক্রবারের মধ্যে সংশ্লি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ সিলেট তামাবিল মহা সড়কের মামার বাজার এলাকার রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে শনিবার থেকে জাফলংয়ের পাথর ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট সকল প্রকার কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হবে বলে জানান তারা।
জানা গেছে, সিলেট তামাবিল মহাসড়কের মামার বাজার এলাকার মোহাম্মদপুর থেকে বল্লাঘাট ও জাফলং সড়ক সংস্কারের দাবিতে সম্প্রতি জাফলং পাথর ব্যবসায়ী সমিতি, জাফলং ষ্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতি, জাফলং ট্রাক মালিক সমিতি, জাফলং ট্রাক চালক সমিতি ও জাফলং বল্লাঘাট পাথর উত্তোলন সরবরাহকারি শ্রমিক সমিতি ও স্থানীয় বিভিন্ন ব্যাবসায়ী সমিতির উদ্যোগে এক যৌথ প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, এসব সমিতির কর্মসূচির প্রতি জাফলং মটর মালিক গ্র“পও সমর্থন দিয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সিলেট-এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী খুরশেদ আলম জানান, রাস্তাটির মামার দোকান অংশের বেহাল দশা সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল। এ নিয়ে সম্প্রতি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায়ও আলোচনা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাফলং একটি বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। কিন্তু, মামার দোকান এলাকায় সড়কের ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় প্রথমেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে। তিনি বলেন, মহাসড়কটি সংস্কারের একটি প্রকল্প তারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।