অনন্ত হত্যাকান্ড : সকল ব্লগার হত্যার স্বরূপ উন্মোচন সিলেট থেকেই
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ পূবালী ব্যাংক’র জাউয়াবাজার শাখার কর্মকর্তা, ব্লগার ও লেখক অনন্ত বিজয় দাশের (৩২) হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে ধীর কৌশলে এগোচ্ছে পুলিশ। খুনিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঘটনা ঘটিয়েছে, এবং আগে থেকেই অনন্তকে টার্গেট করে রেখেছিল এমন ধারণায় পুলিশের সমন্বিত তদন্ত শুরু হয়েছে। দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে ঢাকা থেকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার কর্মস্থলের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে পুলিশ। পূবালী ব্যাংক জাউয়া বাজার শাখা থেকে গত প্রায় ছয় মাসের সিসি ক্যামেরার সকল ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। এগুলো পরখ করে খুনিদের কোনো চেনা-পর্বের সন্ধান পেলে সেই পথ দিয়ে খুনি শনাক্ত করতে চায় পুলিশ। সমন্বিত তদন্তে সুফল মেললে একই সঙ্গে আলোচিত সকল ব্লগার হত্যার স্বরূপ উন্মোচন সিলেট থেকেই হতে পারে এ রকম এক উৎসাহ পুলিশের তদন্তে কাজ করছে।
গত মঙ্গলবার সিলেট নগরীর সুবিদবাজার এলাকায় দিনদুপুরে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে অনন্ত বিজয় দাশকে। সকাল ৯টায় সুবিদবাজারস্থ দস্তীদারদিঘীর পাড় (নূরানী দিঘিরপাড়) এলাকায় তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাৎক্ষণিক অনন্তকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থলেই অনন্তের মৃত্যু হয়েছে ধারণা করা হয়। সুবিদবাজার নূরানী ১৩/১২ নম্বর বাসার রবীন্দ্র কুমার দাশের ছেলে অনন্ত ২ ভাই ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। মুক্তমনা বগে লেখালেখির পাশাপাশি যুক্তি নামের একটি বিজ্ঞানভিত্তিক ছোট কাগজের সম্পাদক ছিলেন অনন্ত। পাশাপাশি পূবালী ব্যাংক জাউয়া বাজার শাখার সহকারী উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তদন্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) ফয়সল মাহমুদ জানান, অনন্ত হত্যা একটি বর্বরোচিত ও জঘন্য হত্যাকান্ড। ওই হত্যাকান্ডের ক্লু উদঘাটন ও ঘাতকদের গ্রেপ্তার করতে মহানগর পুলিশের যতটুকু সাধ্য রয়েছে সবটুকু দিয়েই চেষ্টা করা হচ্ছে। হত্যার হেতু বুঝা গেছে, এখন অপরাধীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে সব ধরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, ওই হত্যাকান্ডে শুধু সিলেট মহানগর পুলিশের নয়, ঢাকার সাপোর্টও যুক্ত করা হয়েছে। তাই বলা যায়, পুলিশ ওই হত্যাকান্ডের আসামি গ্রেপ্তার ও মূল রহস্য উদঘাটনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার সকালে অনন্ত বিজয় দাশকে ৪ ঘাতক হত্যা করার পরই হত্যার আলামত সংগ্রহ করে পুলিশ ও সিআইডি। প্রথম থেকেই পুলিশ ধারণা করে আসছে অনন্ত হত্যা কোনো সাধারণ হত্যাকান্ড নয়। যারা হত্যায় অংশ নেয় তারা সকলেই প্রফেশনাল কিলার এবং ট্রেনিং প্রাপ্ত। তাই হত্যার আলামত সংগ্রহের পরপরই সিলেট নগর পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে ক্লু উদঘাটনে মাঠে নামে মহানগর পুলিশের একটি বিশেষ টিম। ওই টিমের পাশাপাশি পৃথকভাবে কাজ করছে নগর বিশেষ শাখা (সিএসবি) ও মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
ওই ৩টিম প্রাথমিকভাবে হত্যার আদামত, স্বাক্ষীদের দেয়া তথ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রযুক্তির বিষয়কে মাথায় নিয়ে কাজের পাশাপাশি অনন্ত যে সকলস্থানে জীবিত অবস্থায় অবস্থান করতেন সেইসব স্থানের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করছে। ওইসব ফুটেজ থেকে কেউ আলাদাভাবে অনন্তকে অনুসরণ করতো কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। আর ২ দিন পরই শুরু হবে প্রযুক্তিগত তদন্ত। প্রযুক্তির সকল অনুসন্ধানী তথ্য ২ দিনের মধ্যেই পুলিশের হাতে পৌছবে। পাশাপাশি আনছারুলাহ বাংলাটিমের ৮৪ জনের নামের তালিকার সূত্র ধরেও তদন্ত কাজ চলছে। রাজিব হায়দার, খুন হওয়া লেখক অভিজিৎ রায়ের সাথে ওই তালিকায় নাম ছিলো মুক্তমনা লেখক অনন্ত বিজয়ের নামও। ঢাকায় অভিজিৎ হত্যার পর সিলেটে গ্রেপ্তার হওয়া ফারাবির কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া তালিকাতেও অনন্তের নাম ছিল বলে জানায় পুলিশের একটি সূত্র। অপরদিকে, হত্যার ‘দায় স্বীকার করে টুইট করা হলেও এখনো আইপি অ্যাড্রেস শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ বলছে, আইপি অ্যাড্রেস শনাক্ত না করতে পারলেও আসামিদের গ্রেপ্তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।