থাইল্যান্ডের জঙ্গলে ৫শ অভিবাসীর লাশ!

thai jungle graveসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ খুরামিয়া ৯৫ হাজার বাট (স্থানীয় মুদ্রা) মুক্তিপণের বিনিময়ে ভাইপো খাজিমকে উদ্ধার করেছে। তাকে থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী এক ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছিল।
খুরামিয়া আদরের ভাইপো খাজিমকে উদ্ধার করেছে ঠিকই, কিন্তু জীবিত নয় মৃত। থাইল্যান্ডের সাদাও জেলার সংখলা জঙ্গলে গণকবর থেকে উদ্ধার হওয়া ২৬টি লাশের মধ্যে খাজিম একজন।
ভাগ্যের জোরে মৃত্যুকূপ থেকে পালিয়ে আসা এক অভিবাসী জানান, মানব পাচারকারী আরুনওয়া এবং তার সহযোগীদের মারধরের কারণে খাজিমের মৃত্যু হয়েছে।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক জঙ্গল থেকে পালিয়ে আসা জীবিত ওই ব্যক্তি বলেন, শুধুমাত্র থাই-মালয়েশিয়া সীমান্ত সংলগ্ন ক্যাম্পগুলোতে ৫শ’র বেশি অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেঁচে যাওয়া অভিবাসীদের বরাত দিয়ে সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। এরা সকলেই মানব পাচার এবং অপরহরণের শিকার।
সূত্র আরও জানায়, ‘ওই সব ক্যাম্পগুলোতে এখনো কয়েক হাজার রোহিঙ্গা প্রতিশ্রুত চাকুরি অথবা মুক্তিপণের অপেক্ষায় রয়েছে।’
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে প্রায় ছয় মাস আগে মালয়েশিয়ায় ভালো চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ফাঁদে ফেলা হয় বলে জানায় বেঁচে যাওয়া ওই অভিবাসী।
খাজিমের সঙ্গে একই ক্যাম্পে ছিলেন তিনি এবং ওই ক্যাম্পে আরও ৭০০-৮০০ অভিবাসীকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল।
বেঁচে যাওয়া ওই ব্যক্তি জানায়, ‘আমার মা জমি বিক্রি করে মুক্তিপণের বিনিময়ে আমাকে ছাড়িয়ে এনেছে। এজন্যে আমি এখনো জীবিত আছি।’
এদিকে খুরামিয়া বলেন আরুনওয়া যখন আমার সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ করে এবং মুক্তিপণ চায়, আমি তখনই তাকে ৯৫হাজার বাট দিতে রাজি হই।
কাঁদতে কাঁদতে খুরামিয়া বলেন, ‘কিন্তু আমি ওই অর্থ পাঠানোর পর আরুনওয়ার পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। এর প্রায় ১৫দিন পর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আরও এক লাখ ২০ হাজার বাট চাওয়া হয়।’
এরপর খুরামিয়া সাফ জানিয়ে দেন, তিনি আর অর্থ দিতে পারবেন না এবং থাই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পরিকল্পনা করেন।
খুরামিয়া অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়েরের আগেই আরুনওয়া এবং তার সহযোগীরা খাজিমকে হত্যা করে।
পরবর্তীতে প্রত্যক্ষদর্শীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আরুনওয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তিনি এখন পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। তদন্তের এক পর্যায়ে জানা যায়, সাদাও জেলায় এমন বহু অনাবিষ্কৃত গণকবর রয়েছে।
জীবিত ওই ব্যক্তি জানায়, শুধুমাত্র তিনি যে ক্যাম্প ছিলেন ওই ক্যাম্পে তার সামনে ১৭-২০ ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। গুলি করে অথবা নির্যাতন চালিয়ে এসব ব্যক্তিদের হত্যা করা হতো। যেসব বন্দিদের স্বজনরা মুক্তিপণ দিতে পারতো না তাদের ওপর চলত অমানবিক নির্যাতন।
এদিকে গতকাল পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গণকবর থেকে উদ্ধার করা বেশিরভাগ মরদেহই হাড় ছাড়া আর কিছু মেলেনি। মাত্র ছয়টি লাশ পচনশীল অবস্থান মিলেছে।
তবে পুলিশ জানায়, ‘বেশিরভাগ লাশেই কোনো আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। সুতরাং আমরা ধারণা করছি বেশিরভাগের মৃত্যুই হয়েছে রোগ এবং অপুষ্টিতে। তবে এমন অবস্থায় আসলে মৃতদেহগুলো যে রোহিঙ্গাদেরই এটি স্পষ্ট নয়। তবে এটা স্পষ্ট যে মৃহদেহগুলো এশিয়ার নাগরিকদের।’
গণকবর থেকে উদ্ধার করে মৃতদেহগুলো নিয়মমাফিক উত্তর দিকে মাথা দিয়ে ধর্মীয় রীতিতেই পুনরায় কবর দেয়া হচ্ছে বলে থাই পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
পুলিশের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল প্রাউথ থ্রাভনশ্রীরি বলেন, ‘দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রাওথ চ্যান-ও-চা এবং উপ প্রধানমন্ত্রী প্রাউই ওংগসুওয়ান এসব অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে।’
এরইমধ্যে থাইল্যান্ডের উপ পুলিশ কমিশনারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে জঙ্গলে যাবে বলেও জানায় পুলিশের মুখপাত্র।
খাজিমের মামলার প্রত্যক্ষদর্শী এবং ফিরে আসা জীবিত ওই ব্যক্তি জানান, বাঙ চি এবং ফরিদা নামে এক দম্পতি ওই ক্যাম্পের মালিক এবং তারাই খাজিম এবং ওই ব্যক্তিকে বন্দি করে রেখেছিলেন। তারা ওই ক্যাম্পে এসে বন্দিদের সংখ্যা এবং মুক্তিপণের পরিমাণ হিসাব করে দেখতো।’
এদিকে তাক প্রদেশের পুলিশ মিয়ানমারের দুই নারীকে খুঁজছে। এদের বিরুদ্ধে লোকেদের ফাঁদে ফেলে থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলের এলাকাতে নিয়ে আসার অভিযোগ রয়েছে।