আমিরাতের পথে ঘাটে : আমিরাতকে জানার আয়না
আব্দুল আজিজ সেলিম: ভ্রমণ সাহিত্য আজকাল আগের চেয়েও বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। মিডিয়ার কল্যাণে তথা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভিনদেশী দূর আকাশের তারাও যেন পাশের আঙিনার জোনাকি লাগে। তাই ইদানিং ভ্রমণ সাহিত্যের পাঠকসংখ্যা অনেক। পাঠকের চাহিদা মিঠাতে আরব আমিরাতের দুবাই প্রবাসি দুজন সাংবাদিক ও লেখক চেষ্ঠা করেছেন বিশ্বের সবচে’ আকর্ষণীয় পর্যটন নগরী আমিরাতকে বাঙলাভাষী পাঠকদের জানাতে। আর এ ক্ষেত্রে পুরোদমে সফল এ দু তরুণ লেখক। একজন আমিরাত বাংলা জনপ্রিয় মাসিক মুকুল সম্পাদক শহিদ বুদ্ধিজীববি পদকে ভূষিত ছড়াকার লুৎফুর রহমান আরেকজন আমিরাত প্রবাসি নিরলস সাংবাদিক কামরুল হাসান জনি। দুজনই জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো, যুগান্তর ও কালের কণ্ঠের পরবাস পাতায় নানা সময়ে লিখে চলেছেন দুহাতে। তাদের লিখায় কথনো ফুটে ওঠে হতভাগা প্রবাসীর কষ্টযাপন আবার কখনো ওঠে আসে মরুর বুকে একটি লাল সবুজের আশার ফুলও। কাজের অবসরে তারা যখন আরব আমিরাতের ৭টি প্রদেশে ঘুরে ফিরেছেন তা কীবোর্ড চেপে কালো বর্ণগুলোকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন সকলের কাছ। আর আমিরাতে না আসা মানুষের কাছে তা হয়ে ওঠেছে রোমাঞ্চকর তথ্য।
একুশে বইমেলা ২০১৫ তে প্রকাশিত হয়েছে মনকাড়া ৪রঙা আর শৈল্পিক দৃষ্টিনন্দিত প্রচ্ছদের বইটি। প্রচ্ছদে একজন পর্যটকের নিপুণ হাতে বিশ্বের সর্বোচ্চ দালান দুবাইয়ের বুর্জ আল খলিফার ছবি গাড়ির লুকিং গ্লাসে ধারণ করেছেন লেখক লুৎফুর রহমান। বইটি প্রকাশ করেছেন ঢাকার জলছাপ প্রকাশন এর লোকমান আহম্মদ আপন। আর এমন আয়হীন আয়ের পথে আর্থিক ব্যয় করেছেন মানে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন বাংলাদেশ সোস্যাল ক্লাব, দুবাই। এটি তাদের প্রথম প্রয়াস। ক্লাবটি আমিরাতে বাংলাভাষী লেখকদের বই প্রতি বইমেলায় অন্তত একটি করে হলেও প্রকাশ করবে এমনটি জানিয়েছেন দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এ বইটির মোড়ক উন্মোচনে। এমন সুন্দর মানসিকতাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
এবার আসি বইয়ের অন্তর বিভাগে। বইটির ভুমিকা লিখেছেন ট্যুুরিজম ডেভেলপার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিডাব) চেয়ারম্যান দেশের বিশিষ্ট ভ্রমণ ব্যক্তিত্ব মো. জামিউল আহমেদ। তাঁর গুরুগম্ভীর মুনশিয়ানা ধারার ভূমিকা বইটির ওজন বাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁর সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আমিও বলি বরীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে ভ্রমণ সাহিত্য যুগে যুগে নানা রূপ ধারণ করেছে। মুজতবা আলী রসরূপে নিয়ে এসেছেন ভ্রমণ সাহিত্য আর তা মাধ্যমিক লেভেলের পাঠ্যপুস্তকেও আছে। তবে আজকাল ভ্রমণ কাহিনী স্রেফ ভ্রমণের গল্প নয় বরং ইতিহাস ও প্রামান্য দলিল হয়ে ওঠেছে। আর এ ক্ষেত্রে লুৎফুর ও জনিও তাদের সব লেখায় এ ধারাটি অব্যাহত রাখার চেষ্টা করেছেন। আমি বইটি পড়ে দেখলাম স্রেফ ভ্রমণ কাহিনী নয় বরং তারা ভ্রমেণর ষোলকলা পূরণে যেন নিপুণ কারিগর। তাদের একেটি লেখায় পাঠক যেন ভ্রমণ করে আসবেন মরুর দেশ আরব আমিরাত। একেজনের ১১টি রেখায় তারা যেখানেই গিয়েছেন ওই জায়গার ঐতিহাসিক দলিলসহ বাংলাদেশীরা ওই জায়গায় কেমন আছেন বা বাংলাদেশে এমন জায়গার কেমন কদর তা ফুটিয়ে তুলেছেন। বইটি দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগ-লুৎফুর রহমান। সূচিবদ্ধ হয়েছে লুৎফুর রহমানের- আমিরাতের পথে ঘাটে, আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় যেখানে, আল আইন জাবেল হাফিত: সুউচ্চ পাহাড়ের উপর থেকে, দুবাইয়ের পথে-প্রান্তরে, গহীন সমুদ্রে কিংবা জীব বৈচিত্রের কাছাকাছি, মীরাক্কেল গার্ডেন দুবাই: ফুলের সমুদ্র থেকে,মরুভুমে এক চিলতে অরণ্য, মরুভুমির উদ্যান দুবাই হাত্তা, নীল জোছনায় পাম জুমরোয়, আরব সাগরের তীর থেকে, আরবীদের আপন সংস্কৃতিপ্রেম। কামরুল হাসান জনি;র ভাগে সূচিবদ্ধ হয়েছে-জলশুন্য মরুর বুকে দলবদ্ধ উটের চুটেচলা, জুম্মা মার্কেট: পাহাড়ের বুকে পর্যটকের হাট, আব্বাস সাবেরী ও তাঁর শিল্পকর্মের পাশে কিছুক্ষণ, মরুরদেশে চিড়িয়া, আমিরাতের প্রাচীনতম মাটির মসজিদ আল বিদিয়া, পাহাড়ঘেরা ফুজিরায় “চড়ুইভাতি’, ম্যাডাম কোন ভদ্রমহিলা নয়!, চালকবিহীন দুবাইমেট্টো, শেখ জায়েদ মসজিদে, দুব্ইয়ের সাফা পার্কে বাঙালিয়ানা, দুবাই ওয়াফি সিটি, প্রাচীন মিশরের পুরোকীর্তির নিদর্শন।
মোট একশ’ পৃষ্টার এ বইতে ৮ পৃষ্ঠা করা হয়েছে ছবির জন্য রঙিন। বিশ্বের পর্যটকদের চিন্তা এখন এমনই আমিরাতকে দেখেননি মানে বিশ্বটাই দেখা হয়নি আপনার। এ চিন্তা মাথায় রেখে বোধহয় লেখকদ্বয় আমিরাতের পর্যটনের দর্শনীয় স্থানের ছবি সেথানে গ্রন্থবদ্ধ করেছেন। ভ্রমণের এবইটি উৎসর্গ করা হয়ে দুজন ক্যাডেটকে। দুজনই সফল। একজন দেশে আরেকজন পরবাসে। উৎসর্গ পাতায় লেখা হয়েছে- শাকুর মজিদ, ভ্রমন যাদুকর। দুনিয়া দেখা এবং দেখানো যাঁর কাজ। নওশের আলী, প্রবাসে, বাংলাদেশকে তুলে ধরা যাঁর নেশা। লেখকরা বয়সে তরুণ হলেও মেধা ও প্রজ্ঞায় যথেষ্ট পরিশীলিত তার প্রমাণ মেলবে বইয়ের প্রতি পাতায়। অবশ্য বইতে কিছু মুদ্রণজনিত ত্রুটি রয়েছে। সেটিংয়ের বেলায় এ ত্রুটি গুলো কিছুটা দৃষ্টিকটু লাগে। বইটির মুল্য রাখা হয়েছে ২৫০ টাকা। রকমারি ডটকম থেকেওঅনলাইনে কেনা যাচ্ছে বইটি। বইটির বহুল প্রচার কামনা করি। আমিরাতকে নিয়ে কেউ লিখতে গেলে এ বইটি রেফারেন্স বুক হিসেবে কাজ করবে এটা আমার বিশ্বাস।
লেখক: কবি ও সংগঠক, দুবাই।