‘নিজ অপকর্ম ঢাকতেই মোল্লারগাঁওবাসীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার’
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ নিজ অপকর্ম থেকে রেহাই পেতে এবং গ্রামবাসীকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এলাকায় চিহ্নিত দুস্কৃতিকারী সাজ্জাদ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে মিথ্যা, কাল্পনিক ও উদ্দেশ্যমুলক তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সিলেট সদর উপজেলার মোল্লারগাঁও গ্রামবাসী। শনিবার মোল্লারগাঁওয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান- গ্রামের মৃত মনোহর আলী ওরফে মনই মিয়ার উত্তরাধিকারীদের ওই পরিবারটি খুবই খারাপ প্রকৃতির। যাদের কাজই হলো সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। এমন দুষ্টু একটি পরিবারের কাল্পনিক কিছু বানোয়াট অভিযোগের ভিত্তিতে ঐতিহ্যবাহী মোল্লারগাঁওয়ের প্রায় সাড়ে ৩শ’ পরিবারকে কলুসিত করা হয়েছে। কয়েকটি গণমাধ্যমে ‘মোল্লারগাঁওয়ে মোড়লদের দাপট, ৫ বছর ধরে একঘরে এক পরিবার’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ভিন্নমত পোষন করে এর প্রতিবাদ জানিয়ে গ্রামবাসী বলেন- নিজেদের অপকর্মের কারণে সাজ্জাদের পরিবার পঞ্চায়েত থেকে দূরে সরে আছে। বার বার ডাকার পরও তারা পঞ্চায়েতের ডাকে সাড়া দেয়নি।
কারণ হিসেবে তারা জানান, মোল্লারগাঁও গ্রামের মৃত ছমদ আলীর পুত্র তোতা মিয়া ও বারিক মিয়ার বৈধ মালিকানাধীন ১০ শতক ভূমি নিয়ে কান্দিগাঁও গ্রামের মৃত এশাদ আলীর পুত্র নুর মিয়ার সাথে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে সাজ্জাদ ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বারিক মিয়ার কাছে। দাবি অনুযায়ী টাকা না দেওয়ায় সাজ্জাদ ৪/৫ বছর পূর্বে বারিক মিয়ার বৈধ ভূমি কান্দিগাঁও গ্রামের নুর মিয়াকে দখল করিয়ে দেয়। এখনো সেই ভূমি নুর মিয়া ও তার লোকজন জোরপূর্বক ভোগদখল করছেন। অসহায় বারিক মিয়া মোল্লারগাঁও পঞ্চায়েতের শরণাপন্ন হয়ে নিজের বৈধ ভূমি সাজ্জাদ দ্বারা জোরপূর্বক বেদখল হওয়ার কথা জানিয়ে বিচারপ্রার্থী হলে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সাজ্জাদকে ডাকা হলে সে এতে সাড়া না দিয়ে উল্টো পঞ্চায়েতের কেউ নয় বলে জানায়।
কারণ এর আগেও সাজ্জাদ ও তার লোকজন গ্রামের ওয়াজ মাহফিলসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে প্রবীণ মুরব্বীদের সাথে অসদাচরণ করে। এসবের কারণে হঠাৎ করে তারা গ্রামের মসজিদে যাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং পার্শ্ববর্তী কান্দিগাঁওয়ের মসজিদে যাওয়া শুরু করে।
২০১০ সালের নভেম্বর মাসে কিছু দুস্কৃতিকারীকে নিয়ে নিজ বাড়ির সামন দিয়ে যাওয়া মোল্লারগাঁও-কাজিরগাঁও রাস্তার মধ্যখানে পাকা খুটি বসিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সাজ্জাদ। যা উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অবগত আছেন।
এমনকি মোল্লারগাঁও গ্রামের জলিল মিয়া ১২টি টেলাগাড়িতে করে রড-সিমেন্ট নিয়ে তার শশুড় মনির মিয়ার বাড়িতে যাওয়ার প্রাক্কালে সেগুলো আটকিয়ে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে সাজ্জাদ।
এসব বিষয় ছাড়াও বিরোধপূর্ণ ভূমি নিয়ে সাজ্জাদ গং এবং মোল্লারগাঁও গ্রামের লোকজনের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। আহত হন দু’পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক। সাজ্জাদ গংরা গ্রামের ২০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো অর্ধশতাধিক মানুষকে আসামী করে মামলা দায়ের করে।
এখানেই সে থেমে থাকেনি। আদৌ সাজ্জাদের বাড়ির সামনে পিডিবির বিদ্যুতের খুটি বসানোর পরও তার টানতে দিচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে তারা আরো জানান- একাধিকবার দেশের বিশিষ্ট সালিশানরা বসে বিষয়টির সূরাহার চেষ্টা করেও সাজ্জাদের কারণে তা পারেন নি।
যাদের মধ্যে ছিলেন- অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, মকবুল হোসেন মখল, সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ, জিহাদ আহমদ, শাহাবুদ্দীন মেম্বারসহ আরো অনেকে। সালিশানরা তাকে বারিক মিয়ার ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বললে সে কৌশলে তাদের কাছ থেকে সরে যায়। অতচ নির্লজ্জভাবে নিজাম চেয়ারম্যানের মতো একজন সৎ নিষ্টাবান সফল চেয়ারম্যানের নামে মিথ্যা অপবাদ তুলেছে। জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একটি মহল এই কাজটি করেছে বলে তারা জানান।
গ্রামে কোন মোড়ল নেই জানিয়ে গ্রামবাসী বলেন- সংবাদে মোড়ল হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তারা যুব সংগঠক। বয়সে তরুণ। সাজ্জাদও তরুণ। যে কারণে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে সাজ্জাদ তাদের নাম জড়িয়েছে। তাছাড়া মসজিদে নামাজ পড়া, বিয়ে কিংবা যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠান, এমনকি জানাজায় যেতে মানা এবং আইন করে জরিমানাসহ যে সব অভিযোগ সংবাদে তুলে ধরা হয়েছে তা সত্য নয়। উদ্দেশ্যমুলকভাবেই সংবাদ মাধ্যমে এসব বিভ্রান্তিকর তথ্যের যোগান দেওয়া হয়েছে।
এমন জঘন্যতম কাজ সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে প্রতিবন্ধকতার সামিল হিসেবে উল্লেখ করে তারা বলেন- আইনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা অটুট রেখে সকলের সমঅধিকার নিয়েই গ্রামের বাসিন্দারা বসবাস করছে। তাই প্রকৃত ঘটনা সবার সামনে উন্মোচন করে মোল্লারগাঁওয়ের সুন্দর পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখার আহ্বান জানিয়ে গ্রামবাসী, অসহায় বারিক মিয়ার বৈধ ভূমিটি উদ্ধার এবং সাজ্জাদ ও তার পরিবারের সদস্যদের সমাজবিরোধী কর্মকান্ডের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- গ্রামের বিশিষ্ট মুরব্বী হাজী আব্দুল মন্নান, হাজী আতাউর রহমান, আজম আলী, আলা উদ্দিন, সায়েস্তা মিয়া, মনফর আলী, হাজী আসলাম আলী, মসজিদের মোতায়াল্লী ছগির মিয়া, তৈয়ব উল্যা, শাহাব উদ্দিন, তোতা মিয়া, রহিম উল্যা, ছনাই মিয়া, সাব উদ্দিন, কয়েছ আহমদ, নুরুল আলম, সানুর আলী, মনফর আলী, লালু মিয়া, শমসের আলী প্রমুখ। গ্রামবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মো, জামাল আহমদ।