সে কি আসবে না আর?
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ নৈরাশ্যবাদীরা চট করে বলেই ফেলেন আর আসবেন না, চিরতরেই হারিয়ে গেছেন তিনি। দিনে দিনে এমন লোকের সংখ্যা কেবলই বেড়ে চলেছে। তাই মাঠে আর জোরেশোরে সুর উঠে না তার সন্ধান দাবিতে। তিন বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিলেন ইলিয়াস আলী। খোঁজ মেলেনি আর। এখন কেউ জোরেসোরে তার খোঁজও চাইছে না। দল ব্যস্ত নতুন আরেক ‘নিখোঁজ কাণ্ডে’র রহস্য সন্ধানে। ইলিয়াস আলীর মতো হঠাৎ করেই ‘নিখোঁজ’ হয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদও। ১০ মার্চ থেকে তারও খোঁজ মিলছে না। নতুন এ ক্ষত হয়তো ভুলিয়ে দিয়েছে তিন বছরের পুরনো ক্ষতকে।
তিন বছর। দিন গুনলে, হাজারেরও বেশি, ১ হাজার ৯৫ দিন। হাজার দিনের পরে তবে কি মলিন হতে চলেছে বিএনপির ‘নিখোঁজ’ সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্মৃতি। দিনের শেষে ছায়া যেমন মিলিয়ে যায়, তিন বছর অপেক্ষার পর ইলিয়াস আলীও কি অতীত হওয়ার পথে। ইতোমধ্যে তার নতুন পরিচয় হয়েছে সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হিসেবে। অথচ হারিয়ে যাওয়ার পরও দু’ বছর পর্যন্ত তার পরিচয় ছিলো জেলা সভাপতি হিসেবেই। কানাঘুঁষা আছে সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও তার জায়গায় শিগগিরই বসতে পারেন অন্য কেউ। এটাই নিয়ম কারো জন্য কোনো কিছু শূন্য পড়ে থাকে না। সময়ের পথ চলায় শূন্য জায়গায় আসে নতুন মুখ। যেমন রাজনীতিতে কখনও সক্রিয় না থাকলেও এখন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনাও পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ। সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সদস্য লুনার মাঝে এখন অনেকেই ইলিয়াস আলীর ছায়া খুঁজে ফিরেন। লুনাও তাদের ভরসা হতে চান।
ইলিয়াসের সন্ধান দাবিতে মাঠে নীরব হয়ে পড়েছেন তার অনুসারীরাও। হয়তো মেনে নিয়েছেন ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে’-পেছন ফিরে তাকানোর সময় নেই আর। ইলিয়াস আলী’কে ফিরিয়ে আনতে মাঠ কাঁপানো সৈনিকদের কণ্ঠে সে দৃঢ়তা আর নেই। ইলিয়াস আলীকে বাদ দিয়ে যখন জেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিলো তখন তারা চুপটি করেই মেনে নিয়েছিলেন। প্রতিবাদী হননি। কেউ বলেননি, থাক না শীর্ষ পদটি ইলিয়াস আলীর জন্যই। মুখে না বললেও তারা হয়তো মেনে নিয়েছেন ঐ চেয়ারে বসতে আর কোনোদিন ফিরে আসবেন না ইলিয়াস আলী।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্য রাতে বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেননি ইলিয়াস আলী। সময়ের পথচলায় অন্যদের স্মৃতিতে ইলিয়াস আলী হয়তো কেবলই ধূসর হতে থাকবেন। শুধু কিছু হৃদয়ে ঝড় তুলবেন সময়ে সময়ে। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা রাজনীতির মাঠে নিজেকে যতই ব্যস্ত রাখুন না কেনো, কাজের ভিড়ে একটু অবসর যখন তার সামনে দাঁড়াবে তখন হৃদয়ের কোণে নিশ্চিত ব্যথা হয়ে বাজবেন ইলিয়াস আলী। ব্যস্ততার ভিড়েও তার হৃদয়ের ঘরে যখন তখন হামলে পড়বে পুরনো দিনের স্মৃতি। বিষণ্ন দুপুরে স্বামীর স্মৃতিতে ঠিকই চোখ ছলছলে হয়ে উঠবে। বিশেষ কোনো রাতে দু’ চোখের পাতাকে এক হতে দেবে না ফেলে আসা রঙিন দিনের ছবি। কিংবা কোন কিছুই কি সান্ত্বনা দিতে পারবে ইলিয়াস আলীর পুত্র কন্যাদের। বাবাকে ভালোভাবে বুঝে উঠার আগে হারিয়ে ফেলার দুঃখ কি কোন মন্ত্রে কি ভুলিয়ে দেওয়া যাবে? অথবা যে মায়ের বুক থেকে হঠাৎ করেই হারিয়ে গেলেন ইলিয়াস আলী তার কাছে কি কারো কোনো জবাব দেওয়ার আছে? যার যায় সেই জানে!
তারা ভুলেও ভাববেন না, ইলিয়াস আলী আর ফিরে আসবেন না। দুয়ারে কেউ কড়া নাড়লে এখনও তার কেঁপে উঠেন। তবে কি ফিরে এলেন… (মূল প্রবন্ধঃ রিয়েল টাইমস)