কবি আমিনা শহীদ চৌধুরী মান্নার ‘কবিতায় সোনালী জোছনা’র প্রকাশনা

কবিদেরকে সার্বজনীন কবিতা লেখার প্রয়াস চালাতে হবে : অধ্যক্ষ কবি কালাম আজাদ

kobi amena sohid manna pic 2প্রবীন শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ কবি কালাম আজাদ বলেছেন, এদেশে মহিলা কবিদের সংখ্যা খুবই কম। এক্ষেত্রে কবি আমিনা শহীদ চৌধুরী মান্না সহ নতুন লেখকদের সাহিত্যচর্চা আমাদের মনে আশার সঞ্চার করে। আমাদের কবিতার ইতিহাসে নতুন একটি নামের সংযোজন হলো ‘কবিতায় সোনালী জোছনা’। এই বইয়ের লেখিকার সাথে আমার আত্মার আত্মীয়তা এজন্য যে তিনি সার্বজনীন লেখা লেখতে চেষ্টা করেন। অনেক কবিই সার্বজনীন কবিতা লিখতে পারেননা, কবিদেরকে সার্বজনীন কবিতা লেখার প্রয়াস চালাতে হবে। কবি তার হৃদয়ের শব্দ দিয়েই এই বই লিখতে চেষ্ঠা করেছেন। আমরা তার চেষ্ঠাকে সাধুবাদ জানাই।
কবিতা কেন্দ্র, সিলেট-এর উদ্যোগে কবি আমিনা শহীদ চৌধুরী মান্নার প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘কবিতায় সোনালী জোছনা’র প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। গতকাল শনিবার নগরীর দরগাহ গেইটস্থ দেশের অন্যতম প্রাচীন সাহিত্য প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাহিত্য আসর কক্ষে এ প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হয়।
আশির দশকের শক্তিমান কবি মুকুল চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাহিত্য সংসদের জীবন সদস্য কবি মামুন হোসেন বিলালের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবিতা কেন্দ্র, সিলেট-এর সদস্য সচিব কবি নাজমুল আনসারী। সাহিত্য আসরের নিয়মিত লেখক আব্দুল কাদির জীবনের পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রভাষক কবি মামুন সুলতান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট লেখিকা সংঘের সভাপতি কবি লাভলী চৌধুরী, সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক মানিক, মাসিক বিশ্ববাংলা সম্পাদক কবি মুহিত চৌধুরী, দৈনিক সিলেটের ডাক-এর সহকারী সম্পাদক গল্পকার সেলিম আউয়াল, অধ্যক্ষ কবি বাছিত ইবনে হাবিব। এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাহিত্য সংসদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক ছড়াকার এডভোকেট আব্দুস সাদেক লিপন, দৈনিক সিলেটের ডাক-এর সাহিত্য সম্পাদক এডভোকেট কবি আব্দুল মুকিত অপি, কবি সুফিয়া জমির ডেইজী, কবি ইসমত হানিফা চৌধুরী প্রমুখ। কবির কবিতা আবৃত্তি করেন কবি হোসনে আরা কলি, কবি কানিজ আমেনা কুদ্দুছ, কবি তাসলিমা খানম বীথি, কবি সৈয়দ মুক্তদা হামিদ, সৈয়দ কামরুল হাসান, কবি কন্যা তানজিনা মেহজাবিন চৌধুরী প্রমুখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কবি লাভলী চৌধুরী বলেন, লেখালেখি করলে একজন লেখকের যে কতোখানি প্রশান্তি কাজ করে তা শুধুমাত্র একজন লেখকই বলতে পারবেন। কবিতার সুকুমারবৃত্তি আমাদের মনকে অনেক সুন্দর করে। একজন কবির যখন কবিতার বই বের হয় তখন সমাজের প্রতি তার অনেক দায়বদ্ধতা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে কবি আমিনা শহীদ চৌধুরী মান্নারও অনেক কিছু করতে হবে সমাজের জন্য।
আজিজুল হক মানিক বলেন, ‘কবিতায় সোনালী জোছনা’ নামকরণটি খুবই চমৎকার। তার কবিতায় দেশপ্রেম ও সাহিত্যের প্রতি প্রেম তা বুঝা যায়। তার অধিকাংশ কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে একটি আদর্শ কাজ করেছে। সেই আদর্শটি হলো চিরন্তন কালজয়ী আদর্শ ইসলাম। আমরা তার ‘কবিতায় সোনালী জোছনা’ পড়লে তার আলোতে আলোকিত হবো।
গল্পকার সেলিম আউয়াল বলেন, কবি আমিনা শহীদ চৌধুরী মান্না দিনের পর দিন কত কষ্ট করে কত সুন্দর কবিতা লিখেছেন তারই প্রতিফলন এই চমৎকার বই ‘কবিতায় সোনালী জোছনা’। এই কবির মাঝে অসম্ভব আবেগ কাজ করে। তিনি খুব সুন্দর কল্পনা করতে পারেন।
কবি মুহিত চৌধুরী বলেন, আমার সহোদরা কবি আমিনা শহীদ চৌধুরী মান্না। সে প্রচন্ড পরিশ্রম ও সাধনা করে কবিতা লেখার প্রয়াস চালিয়েছে। আমার বিশ্বাস কবিতার বইটি প্রকাশ হওয়ার মাধ্যমে তার উত্তরণ হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মুকুল চৌধুরী বলেন, কবি আমিনা শহিদ চৌধুরী মান্না তার কবিতার বই বের করে অনেকখানি সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি কী লিখেছেন তার কোন তোয়াক্কা না করেই তিনি এই বই বের করেছেন। তার এই সাহসী ভুমিকাকে আমাদেরকে স্বাগত জানাতে হবে। সিলেটের সাহিত্যের আত্মা হচ্ছে এই কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ। এই সাহিত্য সংসদ থেকেই কবি আমিনা শহিদ চৌধুরীর লেখালেখির উত্তরণ।
স্বাগত বক্তব্যে কবি নাজমুল আনসারী বলেন, কবি আমিনা শহীদ চৌধুরী মান্নার প্রথম কাব্য গ্রন্থটি কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের বইমেলাকে সামনে রেখে প্রকাশিত হয়েছিলো। এই কবির সাহিত্যচর্চার স্ফুরণ ঘটে সাহিত্য সংসদের সাপ্তাহিক সাহিত্য আসর থেকে। তার কবিতার শক্তিমত্তা, ভাব ও ছন্দে নিজস্বতা রয়েছে। দিন দিন তার লেখার ক্ষেত্রে উত্তোরণ ঘটেছে। সেই উত্তোরণের প্রথম প্রয়াস এই কবিতার বই।
অধ্যক্ষ কবি বাছিত ইবনে হাবিব বলেন, দীর্ঘ ৫-৬ বছর তিনি সাহিত্য আসরে সরব পদচারণা করেছেন। প্রতি বৃহস্পতিবার তিনি কবিতা নিয়ে আমাদের সাহিত্য আসরে ছুটে আসেন। তার চেতনা ও বোধকে তিনি ধর্ম বিশ্বাস দিয়ে অনুবাদ করেছেন। দেশপ্রেমেরও অসম্ভব সুন্দর উদাহরণ তার কবিতার ভেতর পাওয়া যায়। আমরা তার এ প্রয়াসকে অন্তর থেকে সাধুবাদ জানাই।
এডভোকেট কবি আব্দুল মুকিত অপি বলেন, কবি আমিনা শহিদ চৌধুরী মান্নার সবকটি কবিতা আমি পড়েছি। তিনি যা মনে প্রাণে বিশ্বাস ও লালন করেন তা সম্পূর্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে তার কবিতায়। সাহিত্যিকরা তাদের পদচিহ্ন মহাকালে রেখে যাওয়ার জন্য সাহিত্য চর্চা করেন। এক্ষেত্রে কবি তার মনের দুঃখবোধ ও আনন্দ বেদনার মালা গেথে কবিতার মাধ্যমে মহাকালের জন্য রেখে যাওয়ার প্রয়াস দেখিয়েছেন।
অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কবি আমিনা শহিদ চৌধুরী মান্না বলেন, আজ আমার নিজের জন্য খুব আনন্দের দিন। কেন জানি আজকে আমার কাছে এই দিনটিকে ঈদের মতো মনে হচ্ছে। আমার এই প্রথম বইটি আমার প্রথম সন্তানের মতো। বই আমার কাছে একটি আনন্দের নাম। একটি ভালো বই মানুষকে উৎফুল্ল করে। আমার বই যদি কাউকে বিন্দু মাত্র আনন্দ দিতে পারে তবেই আমার লেখার স্বার্থকতা। বিজ্ঞপ্তি