মৃত্যুর আগে কামারুজ্জামানের উইল

Kamaruzzaman Familyসুরমা টাইমস ডেস্কঃ ২০১০ সালের ১৩ জুলাই গ্রেফতার হওয়ার আগেই মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের মুখে থাকা জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা ও পরিচালনার অসিয়ত (উইল) করে গেছেন। সোমবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সর্বশেষ দেখায় সেই অসিয়তনামা বহাল রেখেছেন বলে জানিয়েছেন তার বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী। আরও জানালেন, দণ্ড কার্যকরের সময় বিদেশেই অবস্থান করবেন কামারুজ্জামানের দুই ছেলে।
হাসান ইকবাল জানান, তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ঢাকার মিরপুরে সাংবাদিক আবাসিক পল্লীতে একটি ছয়তলা বাড়ি, শেরপুর শহরে একটি বাড়ি, শেরপুর ও গাজীপুরে জমি এবং কামারুজ্জানের উত্তরাধিকারসূত্রে শেরপুরের গ্রামের বাড়িতে পাওয়া জমি ও বাড়ি রয়েছে। ঢাকা ও শেরপুর শহরের বাড়ি থেকে তারা ভাড়া পান। এর বাইরে কিছু জমানো টাকা আছে। তবে কোনও ব্যবসা-বাণিজ্য নেই বলে দাবি করেন হাসান ইকবাল।
কামারুজ্জামানের পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেরা হলেন- হাসান ইকবাল, হাসান ইকরাম, হাসান জামান, হাসান ইমাম এবং আহমেদ হাসান। আর মেয়ে সবার ছোট আতিয়া নূর। কামারুজ্জামানের স্ত্রীর নাম নূরুন্নাহার।
প্রথম তিন ছেলে বিয়ে করেছেন। দুই ছেলে দেশের বাইরে। হাসান ইকরাম সুইডেনে হিউম্যান রাইটস-এর ওপর পড়াশোনা করছেন। আর হাসান জামান টেলিকমিউনিকেশনের ওপর পড়াশোনা শেষ করে মালয়েশিয়াতেই চাকরি করছেন। বাবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সময় দেশে থাকছেন না তারা।
বড় ছেলে হাসান ইকবাল বন্ধ হয়ে যাওয়া দিগন্ত টেলিভিশনের রিসার্চ ডাইরেক্টর পদে কর্মরত ছিলেন। দেশে থাকা আরও দুই ছেলে হাসান ইমাম এবং আহমেদ হাসান চাকরি করেন। কামারুজ্জামানের মেয়ে আতিয়া নূর মনিপুর স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। স্ত্রী নূরুন্নাহার লেখালেখি করেন।
কামারুজ্জামানের অসিয়ত অনুযায়ী, তার দণ্ড কার্যকর হওয়ার পর স্ত্রী নূরুন্নাহার পরিবারের অভিভাবক হবেন। আর মেয়ে আতিয়া নূর সাবালক ও বিয়ে হওয়ার আগপর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই থাকবেন। তার পড়াশোনা এবং বিয়ের খরচ তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকেই বহন করা হবে।
পরিবারের সদস্যদের যতদিন সম্ভব একই বাড়িতে থাকতে বলেছেন কামারুজ্জামান। এ কারণে তার প্রবাসী দুই ছেলেসহ তিন ছেলের স্ত্রীরা ঢাকার মিরপুরের বাসাতেই থাকেন। নূরুন্নাহার যখন মনে করবেন সম্পত্তি ভাগবাটোয়ারা করে দেবেন। ভাগ-বাটোয়ারা হবে ইসলামি পারিবারিক আইন অনুযায়ী। দায় দেনা যা আছে তাও শোধ করতে বলেছেন তার সম্পদ থেকে।
হাসান ইকবাল জানান, ‘বাবা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন গ্রেফতার হবেন এবং আর ছাড়া পাবেন না। এমনকি সর্বোচ্চ দণ্ডের ব্যাপারেও বুঝতে পেরেছিলেন। এ কারণে গ্রেফতার হওয়ার আগেই অসিয়ত করে যান।’
তিনি আরও জানান, ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালের ৯ মে তার বাবা কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়ার পর তার প্রবাসী দুই ভাই হাসান ইকরাম ও হাসান জামান মোট দুবার দেশে এসেছিলেন। কিন্তু এবার দণ্ড কার্যকরের সময় কেন আসছেন না জানতে চাইলে হাসান ইকবাল বলেন, ‘আমরাতো আছি, তারা এসে কী করবেন?’
তিনি বলেন, সর্বশেষ দেখায় কামারুজ্জামান বলেছেন, ‘যারা আমাকে ফাঁসি দিচ্ছে তাদেরও বিচার হবে। নতুন প্রজন্ম জবাব দেবে।’