যে চলচ্চিত্রের জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করেছি
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সৌন্দর্য, সপ্রতিভ অভিনয় ক্ষমতা আর পরিশ্রম— এ তিনটি গুণকে সম্বল করে মিডিয়ায় এসেছিলেন জাকিয়া বারী মম। সুন্দরী প্রতিযোগিতা থেকে উঠে আসা এ তারকা এখন টেলিভিশনের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী। চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ৮ বছর আগে। তবে সিরিয়াসলি নিয়েছেন সম্প্রতি। সে ধারাবাহিকতায় ১০ জুলাই মুক্তি পাচ্ছে মম অভিনীত তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘ছুঁয়ে দিলে মন’।
শিহাব শাহীন পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে মমর সঙ্গে জুটি গড়েছেন আরিফিন শুভ। অভিনয় ও ব্যক্তিজীবনের গল্প শুনতে সম্প্রতি তার মুখোমুখি হয়েছিলেন দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক পাভেল রহমান। সেই আলাপাচারিতার কিছু অংশ তুলে ধরা হল—
‘ছুঁয়ে দিলে মন’ প্রসঙ্গে বলুন?
বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রের সব উপাদান সিনেমাটিতে রয়েছে। গান, নাচ, অভিনয় আর একটা চমৎকার প্রেমের গল্প। সব মিলিয়ে দর্শকের ভাল লাগার মতো একটা চলচ্চিত্র ‘ছুঁয়ে দিলে মন’। দর্শকের মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো করেই শিহাব শাহীন পরিচালনা করেছেন। বাকিটুকু দর্শক হলে এসে দেখে বলবেন। আমি শুধু বলব, বাংলাদেশের সমকালীন চলচ্চিত্রে ভিন্নমাত্রা যোগ করবে ‘ছুঁয়ে দিলে মন’।
আপনার আগের চলচ্চিত্র দু’টির তুলনায় এটির বিশেষত্ব কী?
প্রত্যেকটা চলচ্চিত্রই তো আলাদা। ভিন্ন গল্প, ভিন্ন নির্মাণ। আগের চলচ্চিত্রগুলোর এক ধরনের বৈশিষ্ট্য ছিল। এ ছবিটার গল্প আলাদা, নির্মাণ আলাদা। সব কিছু মিলিয়ে আগেরগুলোর সঙ্গে এই ছবিটিকে মেলানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে আমি বলব, একদমই অন্যরকম একটি প্রেমের গল্প দেখতে পাবেন দর্শক। চমৎকার কিছু লোকেশন দেখতে পাবেন। শিহাব শাহীন নাটক নির্মাতা থেকে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছেন। ফলে তার জন্যও এটা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ।
এই চ্যালেঞ্জের জায়গাটা যদি আরেকটু বলেন?
এটা নির্মাতার মুখ থেকে শুনলেই ভাল হতো। আমি বলব, ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ আমার জন্যও চ্যালেঞ্জ। আমি সিনেমায় নিয়মিত অভিনয় করতে চাই। এই ছবিটি দর্শক কিভাবে নেয় তার ওপর অনেকটা নির্ভর করছে ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা। আমি চেষ্টা করেছি ভাল কিছু করতে। দর্শক যেন অভিনয় দেখেই মুগ্ধ হয়। আমাদের পুরো টিমের সেই চেষ্টা ছিল। মঞ্চ ও টিভি নাটকে অনেকবার অভিনয় করলেও চলচ্চিত্রের জার্নিতে আমি নতুন। তাই সব ধরনের চেষ্টা করেছি। এই চলচ্চিত্রটির জন্য অনেক কিছু ত্যাগও করেছি।
কী ধরনের ত্যাগ?
এই সিনেমাটি করার সময় যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছি নিজেকে সিনেমার মেজাজে রাখার। অনেকগুলো টিভি নাটকের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি। ভাবনা ও চর্চার জায়গায় ‘ছুয়ে দিলে মন’ ছিল। নিজের অভিনয় জায়গাটা কীভাবে সমৃদ্ধ করা যায়। এটা নিয়ে পরিশ্রম করেছি। আমাদের স্বপ্নের একটা কাজ ‘ছুঁয়ে দিলে মন’। দর্শকের কাছে প্রত্যাশা থাকবে তারা যেন হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখেন।
টিভি নাটকের অনেক শিল্পীই চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে বলেন, আর টিভি নাটকে অভিনয় করব না। আপনার ক্ষেত্রেও কি এমন হবে?
আমি নিজেকে আসলে একজন অভিনেত্রী হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। অভিনয় গুণেই মানুষের হৃদয়ে জায়গা পেতে চাই। সেটা টিভি নাটক, চলচ্চিত্র যে মাধ্যমই হোক এটা নিয়ে আমি ভাবি না। আমি শুধু ভাবতে চাই যে, সেখানে অভিনয়ের সুযোগ আছে কিনা? অভিনয় করতে গিয়ে কোন মাধ্যমে কাজ করব, সেটা সময়ই নির্ধারণ করে দিবে।
বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রে কি নিয়মিত হবেন?
সব চলচ্চিত্রের পেছনেই একটা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য থাকে। ফলে সব চলচ্চিত্রই কোনো না কোনোভাবে বাণিজ্যিক ধারার। আমি অভিনয় করতে চাই। কোন ধারার চলচ্চিত্র সেটা নিয়ে ভাবতে চাই না। আমি দেখব সিনেমার গল্প, নির্মাণ। এগুলো যদি আমার ভাবনার সঙ্গে মিলে যায় তবে অভিনয় করব। ভাল মানের কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চাই। যেন দর্শক হৃদয় দিয়ে মনে রাখে।
‘ছুঁয়ে দিলে মন’-এ আরিফিন শুভর সঙ্গে জুটি গড়েছেন।
নির্মাতার মনে হয়েছে এখানে আরিফিন শুভ ও আমাকে ভাল লাগবে। তাই নিয়েছে। চেষ্টা করেছি ভাল লাগার মতো কাজ করতে। দর্শক ভিন্ন রকম লুকে দেখতে পাবেন আমাদের। শুভ প্রসঙ্গে বলব, এ দেশের চলচ্চিত্রে যে ক’জন অভিনেতা ভাল কাজ করছে, তাদের মধ্যে আরিফিন শুভ অন্যতম। সিনেমার হিরো হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবকিছুই শুভর মধ্যে আছে। সে নাচ, গান, ফাইট, অভিনয় সবকিছুতেই খুব ভাল। তার সঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে আমার কাজটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। জুটি হিসেবে এখন দর্শক কিভাবে গ্রহণ করবেন সেটা দেখার জন্যই অপেক্ষা করছি।
ফেসবুকে তো সিনেমাটি নিয়ে খুবই প্রচারণা চালাচ্ছেন?
হ্যাঁ, এটি আমার একটা স্বপ্নের কাজ। আমি বলব, দর্শক সিনেমাটি হলে গিয়ে দেখুক। সবার কাছ থেকে মন্তব্য শুনতে চাই। এরই মধ্যে অনেকেই ফেসবুকের ইনবক্সে ছবিটি নিয়ে প্রশংসা করছেন। ছবিটির ট্রেলার গানের দৃশ্য দেখেই অনেকে মুগ্ধ হয়েছেন। ট্রেলারে এমন সাড়া পাব ভাবিনি। আশা করছি এই সিনেমাটি সবার ভাল লাগবে।
আপনার অন্য ব্যস্ততার কথা যদি জানান?
এখন তো ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ নিয়েই ব্যস্ত আছি। ছবিটির প্রচারণার কিছু কাজ করতে হচ্ছে। আমি খুবই এক্সাইটেড সিনেমাটি নিয়ে। এই সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর নতুন কাজ শুরু করব।
আপনি তো নাট্যতত্ত্বে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।
নাটক নিয়ে পড়াশুনা করতে গিয়ে আমার চিন্তার জায়গাটা বিস্তৃত হয়েছে। আর পড়াশুনা তো শেষ হয় না। এখনো পড়ছি। নিয়মিতভাবেই নাটকের বিভিন্ন লেখা পড়ি। অন্যান্য বিষয়গুলোও পড়া হয়। আরও পড়াশুনা করার ইচ্ছে আছে। পাশাপাশি অভিনয় নিয়েই থাকব।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ। দ্য রিপোর্ট পরিবারের জন্য শুভ কামনা।
একনজরে জাকিয়া বারী মম : ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছেন অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম। বাবা মুজিবুল বারী, স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সাহিত্য একাডেমি’র সঙ্গে যুক্ত, পাশাপাশি কবিতা লেখার চর্চা করেন। আর মা শিক্ষকতা করতেন একটি বেসরকারি কলেজে। বাবা-মায়ের উৎসাহে ছোটবেলায় মম শুরু করেন নাচ শেখা। সাহিত্য একাডেমিসহ শহরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। পরবর্তী সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর সেই স্বপ্ন আরও বিস্তৃত হয়। ২০০৬ সালে অর্জন করেন চ্যানেল আই লাক্স সুপারস্টার খেতাব। প্রথমবারের মতো অভিনয় করেন তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ চলচ্চিত্রে। এতে অভিনয়ের সুবাদে অর্জন সেরা অভিনেত্রীর ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০০৭’। পাশাপাশি সমানতালে চালিয়ে যান টিভি নাটকের অভিনয়।