কিশোরী শ্যালিকাকে নিয়ে দুলাভাই উধাও , অতঃপর সপ্তাহখানিক পরে…
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ কিশোরী শ্যালিকাকে নিয়ে দুলাভাইয়ের উধাও হয়ে যাওয়া। এরপর সপ্তাহ খানেক আত্মগোপন। ঘটনা জানাজানি হলে বিব্রতকর অবস্থা শ্বশুর-শাশুড়ির। পরে জামাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে করা হয় অভিযোগ। আদালত স্থানীয় চেয়ারম্যানকে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেন।
কিন্তু চেয়ারম্যান তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার বদলে হাতে তুলে নেন আইন। পরিষদেই বসান আদালত। চলে নিজস্ব স্টাইলের বিচার। সেই বিচারের রায়ের নমুনাটা এরকম-
অর্ধশত লোকজনের উপস্থিতিতে শ্যালিকা-দুলাভাইকে বেত্রাঘাত করা। দুজনকে মাটি থেকে থুথু চেটে খেতে বাধ্য করা। বাড়তি শাস্তি হিসেবে দুলাভাইয়ের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা। এরপরের শাস্তিতে আরো চমক! দড়ি দিয়ে দুলাভাইয়ের বিশেষ অঙ্গে ইট বেঁধে পুরো শালিস ঘর ঘুরানো।
অভিনব এ বিচারের ঘটনা ঘটেছে গত ২৯ মার্চ সকালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদে। নয়দিন আগে ঘটনা ঘটলেও কেউ মুখ খোলেননি। মঙ্গলবার গণমাধ্যম কর্মীরা বিষয়টি জানতে পারেন।
নির্যাতনের শিকার কিশোরী ওই শ্যালিকা কলাপাড়ার লতাচাপলী ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের হারুন তালুকদারের মেয়ে।
কয়েক মাস আগে খাজুরা গ্রামের হারুন তালুকদারের অপ্রাপ্ত বয়স্কা কিশোরী মেয়েকে ভুয়া জন্ম সনদে তার চাচাত ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পরে সাংসারিক নানা বিষয় নিয়ে উভয় পরিবারে সমস্যা সৃষ্টি হয়। শ্যালিকার অশান্তির সুযোগ নেয় দুলাভাই মিজানুর রহমান। পরে কিশোরীকে ফুসলিয়ে নিয়ে যান বরগুনা জেলার পাথরঘাটা এলাকায়। সেখানে সপ্তাহ খানেক আত্মগোপন করে থাকেন।
মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে যাওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে কিশোরীর বাবা বাধ্য হয়ে জামাই মিজানুরের বিরুদ্ধে উপজেলা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ করেন। বিজ্ঞ আদালত লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন।
গত ২৯ মার্চ সকালের দিকে শ্যালিকা-দুলাভাইয়ের ব্যাপারে লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে শালিস বৈঠকের আয়োজন করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আবু ছাইদ ফকির। বৈঠকে উপস্থিত হন ইউপি সদস্য সোহরাব হোসেন ও সাবেক সংরক্ষিত মাহিলা সদস্য মিনারা বেগম ছাড়াও আশেপাশের এলাকায় অর্ধশতাধিক লোকজন উপস্থিত হয়।
দুলাভাইয়ের বাড়তি শাস্তি দুলাভাইয়ের বাড়তি শাস্তি
দুই পক্ষের শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে কিশোরীকে ২০টি ও দুলাভাইকে ৩০টি বেত্রাঘাত করা হয়। মাটি থেকে থু থু চেটে খেতে বাধ্য করা হয়। বাড়তি শাস্তি হিসেবে মিজানুরের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ও তার পুরুষাঙ্গে ইট বেঁধে হলরুমে ঘুরানো হয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা জানান, ঘটনা নয়দিন আগে ঘটলেও উপযুক্ত প্রমাণ ছিল না। মঙ্গলবার ওই শালিসের একটি ভিডিও প্রকাশ পায়। এরপরেই পুরো এলাকায় জানাজানি হয়। আদালতের নির্দেশ অবজ্ঞা করে এ ধরনের অমানবিক শাস্তির দেয়ার ঘটনায় পুরো এলাকায় আলোচনার ঝড় উঠেছে।
জানতে চাইলে লতাচাপলী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু ছাইদ ফকির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মেয়ের বাবা আদালতে মামলা করেছেন। আদালত এ বিষয়ে আমাকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। কিন্তু উভয় পক্ষ ফয়সালা করার জন্য আমাকে অনুরোধ করে। শলিস বৈঠকের সময় সকলের মতামত নিয়েই বিচার করেছি।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, বছর পাঁচেক আগে ওই কিশোরীর বড় বোনকে বিয়ে করেন মিজানুর রহমান। তাদের সংসারে তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সূত্র : বাংলামেইল