ছাতকে হাতুড়ে ডাক্তারের অপচিকিৎসায় মহিলার মৃত্যু
মিজানুর রহমান ফজলু, ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
ছাতকের পল্লীতে হাতুড়ে ডাক্তারের অপচিকিৎসায় এক গর্ভবতী মহিলার মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। ঘটনাটি উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের দশঘর গ্রামে ঘটেছে। জানাযায়, ২২মার্চ রাত প্রায় সোয়া ১০টায় দিকে দশঘর গ্রামের ছাদিক মিয়ার স্ত্রী হেনা বেগম (২২) একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। এসময় একজন গ্রাম্য প্রশিক্ষিত দাত্রী প্রসব কালে হেনা বেগমকে সহায়তা করেন। প্রসবের পর হেনা চা-পান করেন ও তার সন্তানকে কোলে নিয়ে আদর করেন। এর প্রায় আধা ঘন্টা পর দশঘর রাজ্জাকিয়া দাখিল মাদাসার সহ-সুপার ও দশঘর গ্রামের নিরাময় ফার্মেসীর মালিক মাওলানা আবদুল হান্নান এখানে এসে হেনা বেগমের শরীরে একের পর এক ইনজেকশন পুশ করতে থাকেন। এতে হেনা বেগম শোর চিৎকার করতে থাকলে এক পর্যায়ে হাতুড়ে ডাক্তার রুগীর মাথায় প্রচুর পরিমানে পানি ঢালার নির্দেশ দেন। এরপরও হেনা বেগমের শারিরীক অবনতি ঘটলে রাত দেড়টার দিকে তার স্বামী ছাদিক মিয়া অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাবার পথে টুকেরবাজার এলাকায় পৌছলে তার মৃত্যু ঘটে। ২৩মার্চ ময়না তদন্ত ছাড়াই তার লাশ দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে একটি মহল ব্যাপক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। হাতুড়ে ডাক্তার মাওলানা আবদুল হান্নান প্রথমে গর্ভবতী মহিলার চিকিৎসা দেয়ার কথা অস্বীকার করলেও পরে হেনা বেগমকে চিকিৎসা দেয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, প্রসবের আধাঘন্টা পর তিনি চিকিৎসা প্রদান করেন। হেনা বেগমের শরীরে পুশকৃত বিভিন্ন ওষুধের খোসা দেখে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন এসব ওষুধ প্রান সংহারী। এসব ওষুধের মধ্যে একটি স্যালাইন ছাড়া বাকি সবগুলো ইনজেকশন একই সাথে পুশ করা হয়েছে। এ কারণে হেনার মৃত্যু হতে পারে। হেনাকে যে সকল ওষুধ দেয়া হয়েছে এদের মধ্যে কয়েকটি ওষুধের নাম পাওয়া গেছে। এগুলো হলো, (Lactoridc) (Visceral) (Anodyne Pluse) (Lindex) (Vergon) (Calcium jayson))। এভাবে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে হাতুড়ে ডাক্তারদের অপতৎপরতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতায় এ পরিস্থিতিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহল ধারনা করছেন। এ ব্যাপারে ছাতক থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) হারুন অর রশিদ চৌধুরীর সাথে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার জানা নেই এবং কোন অভিযোগও আসেনি। দশঘর মাদরাসার সুপার মাওলানা মুশাহিদ আলী জানান, চিকিৎসক মাওলানা আবদুল হান্নান তিনি মাদরাসার সহ-সুপার। সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের ডাক্তার আবদুল হাই মনসুর বলেন, তিনি ওষুধ দেখেছেন, সন্তান প্রসবের পরে এসব ইনজেকশন পূশ করার কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়টি তদন্ত করতে আজ বুধবার উর্ধতন চিকিৎসক দশঘর গ্রামে যাবে বলে তিনি জানান।