হাই কমান্ড চাইলে দেশের স্বার্থে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন করবো
নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে সাদেক হোসেন খোকা
নিউইয়র্ক থেকে এনা: দলের হাই কমান্ড চাইলে দেশের স্বার্থে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। গত ২৩ মার্চ সন্ধ্যায় ( নিউইয়র্ক সময়) জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় বিএনপির ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সাদেক হোসেন খোকা এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিভক্ত বিএনপির সকল অংশের নেতৃবৃন্দ। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ স¤্রাট, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি গিয়াস আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি শরাফত হোসেন বাবু, সাবেক সহ সভাপতি আলহাজ্ব সোলায়মান ভূইয়া, সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসীম ভূইয়া, বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ আহমেদ, সিটি বিএনপির সভাপতি মাওলানা অলিউল্যাহ আতিকুর রহমান প্রমুখ।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদকে অবিলম্বে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সাদেক হোসেন খোকা প্রথমে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। লিখিত বক্তব্য শেষে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার শারীরিক অবস্থা আপনারা জানেন। আমি চাইবো নির্বাচন না করতে। কিন্তু দলের হাই কর্মান্ড যদি চায় দেশের স্বার্থে এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের স্বার্থে আমি নির্বাচন করবো। দলতো এখনো সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিলে এবং আমাকে নির্বাচন করতে বলা হলে আমি অবশ্যই নির্বাচন করবো এবং নির্বাচনে পূর্বে অবশ্যই বাংলাদেশে যাবো।
লিখিত বক্তব্যে সাদেক হোসেন খোকা বলেন, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের মাসে আজ আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি স্বাধীনতার ঘোষক, রণাঙ্গাণের লড়াকু অধিনায়ক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ সকল বীর শহীদের, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা দেশ পেয়েছি। যদিও আজ স্বাধীনতা দিবসের লগ্নেই আমরা অত্যন্ত ভরাক্রান্ত হৃদয়ে লক্ষ্য করছি যে, ব্যক্তি বিশেষ ও মহল বিশেষের সীমাহীন ক্ষমতালিপ্সা লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের স্বপ্ন সম্পূর্ণরূপে ধুলিস্যাত করে দিচ্ছে। এই দানবীয় তৎপরতায় আমি বা আমরা মুক্তিযোদ্ধারা নীরবে সয়ে যেতে পারি না।
তিনি আরো বলেন, দেশের বর্তমান অনির্বাচিত- অবৈধ সরকারে আন্দোলন- লড়াইরত জনগণের ন্যায্য দাবি মেনে দ্রুত একটি সত্যিকারের নির্বাচন দেয়ার পরিবর্তে উল্টো দেশবাসীর উপর একনায়কতান্ত্রিক জুলুম, নিপীড়ন তথা ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাত্রা দিন দিন বাড়িয়েই চলেছে। একদিকে সরকারের নিয়োজিত সন্ত্রাসী ও গোয়েন্দা এজেন্টদের দিয়ে যাত্রীবাহী যানবাহনে পেট্রোল বোমা মেরে দেশবাসীর ন্যায্য আন্দোলনকে সন্ত্রাসী তৎপরতা হিসাবে চিহ্নিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে এবং কথিক বন্দুক যুদ্ধের নামে নিরীহ জনসাধারণকে হত্যার পৈশাচিক উন্মাদনায় মেতে উঠেছে সরকার।
তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদকে সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গত ১০ মার্চ রাতের বেলায় পুলিশি টহলের পাশাপাশি, স্থানীয় বাসিন্দাদের সোসাইটি কর্তৃক নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীর সামনে তাকে ধরে নিয়ে যায়। ওই বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষী ও অন্যান্য কর্মচারি এবং আশেপাশের মানুষ তা দেখেছে। তাকে ধরে নিয়ে যাবার মুহূর্তে ঐ বাড়ি এবং আশেপাশের এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক গাড়ি অবস্থান নেয়। যা দেশের মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া সালাউদ্দিনকে তুলে নিয়ে যাবার ৩ দিন পূর্বে তার ৩জন গাড়ি চালক ও একজন কর্মচারিকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সুতরাং সালাউদ্দিনকে যে সরকারি বাহিনীই তুলে নিয়ে গিয়েছে এ নিয়ে কোন সন্দেহ বা ন্যূনতম সংশয়ের কোন অবকাশ নেই। তারপরেও সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। সালাউদ্দিনকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে উক্তি করেছেন তা অবৈধ সরকারের ভয়ঙ্কর পৈশাচিক চরিত্রের নগ্ন প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই না। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে যদি তথ্য থাকে যে, বেগম খালেদা জিয়া তাকে গার্বেজ করেছেন, তাহলে তিনি ব্যবস্থা নেননি কেন? ইতিপূর্বে ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ অনেককেই গুম করা হয়েছে এবং তাদের নিয়েও ঠাট্টা করা হয়েছে। ১৯৭২ সালেও একই কায়দায় আওয়ামী লীগ সরকার ভিন্ন মতালম্বী নাগরিকদের রক্ষী বাহিনী দিয়ে তুলে গুম, খুন চালিয়ে ছিলো। আজ আমরা সেই পুরানো চিত্র দেখতে পাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত গুম বা নিরুদ্দেশ করে দেয়ার ঘটনা ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় ঘটিয়ে শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার একদিকে আন্তর্জাাতিক অঙ্গন থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে অন্যদিকে দেশের মানুষের মনে সীমাহীন আতংক ও ভীতি ছড়িয়ে চলমান আন্দোলনকে ব্যর্থ করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু আমার নিশ্চিতভাবেই বিশ্বাস করি যে, বর্তমান অবৈধ সরকারের সকল রকম হিং¯্র কৌশলকে ব্যর্থ করে দিয়ে জনগণের এই ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন অচিরেই সফল হবে এবং এই খুনি- অত্যাচারি ও লুটেরা শাসকগোষ্ঠি পালিয়ে বাঁচার পথও খুঁজে পাবে না। সংবাদ সম্মেলনে তিনি সালাউদ্দিন আহমদকে অবিলম্বে তার পরিবারের কাছে সুস্থভাবে ফেরত দেয়ার দাবি জানান। তা নাহলে এর জন্য যারা জড়িত আগামীতে তাদের প্রত্যেকেই বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।