বড় হওয়ার গল্প শোনালেন বিচারপতি ওয়াহাব মিয়া
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ পকেটে পয়সা থাকতো না, হেঁটে হেঁটে বাসায় গিয়েছি। কত রাত না খেয়ে থেকেছি। আর এই পরিশ্রমের ফলেই আজ এই অবস্থানে আসতে পেরেছি। এভাবেই নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গল্প শোনালেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্হাব মিয়া।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আইন শিক্ষা বিষয়ক এক কর্মশালায় তরুণ আইনজীবীদের উৎসাহিত করতে নিজের জীবনের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গল্প বলেন এই বিচারপতি।
সুপ্রিমকোর্টে জুনিয়র আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সময়ের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিচারপতি টি এইচ খানের জুনিয়র হিসেবে কাজ শুরু করি। সেই সকালে চেম্বারে এসে রাত ১১-১২টা পযর্ন্ত কাজ করেছি। পকেটে পয়সা থাকতো না তাই তাই কাজ শেষে করে হেটে বাসায় গিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ইয়াং বয়সে বিয়ে করেছিলাম, রাজধানীর মুগদাতে বাসায় বউ থাকত। বাসায় পৌঁছতে রাত ১/২টা বেজে যেত। আবার সকাল ৮টার মধ্যে চেম্বারে চলে আসতে হত। জীবনে এই পরিশ্রমের ফলেই আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছি।’
আইনজীবীদের সততার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে সুনামধন্য এই বিচারপতি বলেন, ‘আমি ২৫ বছরের কর্মজীবনে ২৫টি মিথ্যা কথাও বলিনি।’
প্রবল আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা নিয়ে কাজ শুরু করলে জীবনে সফল হওয়া যায় বলে এ সময় মন্তব্য করেন তিনি। ওয়াহাব মিয়া তরুণ আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ‘মানুষ আইনজীবীদের কাছে আসে উদ্ধার পাওয়ার জন্য, বিপদে পড়ার জন্য নয়। তাই ক্লায়েন্টদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। কারণ তারা আইনজীবীদের এক অর্থে অন্নদাতা।’
তিনি বলেন, ‘একজন ডাক্তার ভুল করলে একজন রোগী মারা যায়। কিন্তু একজন আইনজীবী ভুল করলে অনেক সময় পুরো পরিবার শেষ হয়ে যায়।’
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী জে আই খান পান্নার সভাপতিত্বে কর্মশালায় আইন কমিশনের সদস্য ড. এম শাহ আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ডীন ড. বোরহান উদ্দিন খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ডীন অধ্যাপক সরকার আলী আক্কাস, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বক্তব্য রাখেন। সেন্টার ফর রাইটস অ্যান্ড গর্ভানেন্স নামে একটি সংগঠন এ কর্মশালার আয়োজন করেন।
উল্লেখ্য, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিঞা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা এবং কামারুজ্জামানের আপিলের রায়সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় দিয়েছেন।
বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহাব মিঞার জন্ম ১৯৫১ সালের ১১ নভেম্বর। বাবার নাম মরহুম আব্দুস সাত্তার মিঞা। মায়ের নাম মরহুমা সৈয়দা তাহেরা বেগম।
পড়ালেখা শেষ করে আব্দুল ওয়াহাব মিঞা ১৯৭৪ সালে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে জেলা জজ আদালতে পেশা-জীবন শুরু করেন। এরপর তিনি ১৯৭৬ ও ১৯৮২ সালে সুপ্রিমকোর্টর হাইককোর্ট ও আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৯৯ সালে তিনি আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ৯৯ সালেই তিনি সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০০১ সালে তিনি বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
২০১১ সালে তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হন। বর্তমানে তিনি আপিল বিভাগের একজন জেষ্ঠ্য বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা দেশের বাইরে অবস্থান করায় ২২ মার্চ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন মো. আব্দুল ওয়াহাব মিঞা।