কলকাতায় গণধর্ষণের শিকার সুজেট জর্ডন মারা গেছেন
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ গণধর্ষণের শিকার হওয়ার প্রায় একবছর পরে নিজের পরিচয় প্রকাশ করার পর ভারতে ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন মিজ. জর্ডন। কলকাতার পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণের শিকার সুজেট জর্ডন আজ ভোররাতে মারা গেছেন। তিনি ম্যানেনজো-এনসেফেলাইটিসে আক্রান্ত হয়ে গত তিনদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। চল্লিশ বছর বয়সী সুজেটের মা আর দুই মেয়ে রয়েছেন।
মিডিয়ায় আসা বহুল আলোচিত গণধর্ষণের শিকার হওয়ার প্রায় একবছর পরে নিজের পরিচয় প্রকাশ করার পর থেকে ভারতে ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন মিজ. জর্ডন। ভারতে ধর্ষিতা বা যৌননিগ্রহের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় প্রকাশের ওপরে আইনী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কলকাতায় অন্য একটি ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন সুজেট জর্ডন।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি জানিয়েছিলেন, “আমার নাম সুজেট জর্ডন। আমি পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণের শিকার – এই পরিচয়ে বাঁচতে চাই না। আমি তো কোনও অন্যায় করি নি, কেন লুকিয়ে থাকব? যারা ধর্ষণ করেছিল, তাদের মুখ লুকিয়ে থাকার কথা, আমার নয়।“
মধ্য কলকাতার পার্ক স্ট্রিট এলাকার একটি নাইট ক্লাব থেকে বেরনোর পরে তাঁকে একটি চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণ করেছিল পাঁচ যুবক।
পরে ভোররাতে তাঁকে গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়। ধর্ষণ ও যৌন হেনস্থার শিকার মহিলাদের একটি হেল্পলাইনে কাজ করতে শুরু করেছিলেন সুজেট। পুলিশ প্রথমে ধর্ষণের অভিযোগও নিতে চায় নি।
কিন্তু খবরটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় চাপে পড়ে পুলিশকে ধর্ষণের মামলা শুরু করতে হয়। ওই ধর্ষণকে ‘সাজানো ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। তাঁর মন্ত্রীপরিষদের এক সদস্য – যিনি এখন দুর্নীতির অভিযোগে জেলে রয়েছেন – তিনি তির্যক মন্তব্য করে প্রশ্ন তুলেছিলেন, “এক মধ্যবয়সী মহিলা অত রাতে পার্ক স্ট্রিটের পানশালায় কী করতে গিয়েছিলেন?”
পুলিশ এখনও মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারে নি, অন্যদিকে মামলাটিও খুব ধীরগতিতে চলছিল। ঘটনার পরে দীর্ঘদিন কাউন্সেলিং আর ধ্যানের মতো বিভিন্ন পদ্ধতিতে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেন সুজেট।ওই সময়ে মিজ. জর্ডনকে কাউন্সেলিং করতেন যিনি, সেই শান্তশ্রী চৌধুরী বিবিসিকে জানিয়েছেন, “সুজেট আমার পরিবারের সদস্যের মতোই ছিল। এভাবে চলে যাবে ভাবতে পারি নি।“
স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সময়ে শান্তশ্রী চৌধুরী পরিচালিত ধর্ষণ ও যৌন হেনস্থার শিকার হওয়া মহিলাদের একটি হেল্পলাইনে কাজও করতে শুরু করেছিলেন সুজেট। এছাড়াও বিভিন্ন স্কুলের বাচ্চা আর অভিভাবকদের সামনে নিজের লড়াইয়ের কথাও তুলে ধরতে আরম্ভ করেছিলেন সুজেট। ফেসবুকে খুব এ্যাক্টিভ ছিলেন সুজেট।
আজ সকালে তাঁর মারা যাওয়ার খবরে ফেসবুক বন্ধুরা মন্তব্য করতে শুরু করেছেন। অদিতি রায় নামে সুজেটের এক বন্ধু লিখেছেন, “একজন লড়াকুর মৃত্যু হয় না”।