কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে

BNP-Khaleda-zia 13-03-2015সুরমা টাইমস ডেস্কঃ আওয়ামী লীগ সঙ্কট নিরসনে কোনো উদ্যোগ ও আন্তরিকতা দেখায়নি। তারা বিএনপির সাত দফা প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বিএনপির দাবি বিবেচনায় না নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে বাধ্য করেছে।
শুক্রবার বিকেল পৌনে ৫টায় গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলে চলমান আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেছেন, ‘একটা যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছা পর্যন্ত এ আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে এবং সংবিধান রক্ষার স্বার্থে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করা হচ্ছে বলে শেখ হাসিনা যে কথা বলেছিলেন, তাতে আস্থা রাখা যে চরম ভুল ছিল তা দেশবাসী পরবর্তীতে বুঝতে পেরেছে। তাদের কথায় আন্দোলন প্রত্যাহার করার পরই এ অবৈধ সরকার যৌথ বাহিনী নামিয়ে নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার, হত্যা, হয়রানি করেছে। আমরা এক বছর অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।’
খালেদা জিয়ার বলেন, ‘একটি শান্তিময়, সুখী-সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক স্বদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য এ দেশের বীর সন্তানেরা জীবন দিয়েছিলেন। অপরিমেয় ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত সেই দেশ আজ গভীর সঙ্কটে। এ সঙ্কট রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক। আর এ সঙ্কটের স্রষ্টা আওয়ামী লীগ এবং আরো সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে শেখ হাসিনা। জনগণের সম্মতি ছাড়া কারসাজির মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে সেই ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার উদগ্র বাসনা আজ সমগ্র জাতিকে এক চরম অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে।’
খালেদা বলেন, ‘অনেক বিবাদ-বিসম্বাদের পর বাংলাদেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল এই মর্মে একমত হয়েছিল যে, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে এখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তারই আলোকে জাতীয় সংসদে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান আমরা প্রজাতন্ত্রের সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করেছিলাম। এই ব্যবস্থার অধীনে কয়েকটি নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’র মধ্য দিয়ে যে-কোনো পদ্ধতিই সংশোধিত ও পরিশোধিত হতে পারে। প্রয়োগের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় পরিলক্ষিত ত্রুটি-বিচ্যুতিও ঐক্যমতের ভিত্তিতেই সংশোধনের সুযোগ ছিল এবং উচিৎ ছিল সেটাই করা। আওয়ামী লীগ তা না করে একতরফা সিদ্ধান্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। তারা দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধান করে। এ লক্ষ্যে তারা সংবিধানের যে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করেছে তাতে শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও স্বাভাবিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের সব পথই প্রায় রুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো সুযোগই রাখা হয়নি। সঙ্কটের মূল উৎস সেখানেই।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘এই মহাবিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনীর আওতায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এক নির্লজ্জ প্রহসনের মধ্য দিয়ে তারা গণতন্ত্রের নাম-নিশানাও মুছে দিয়েছে। এই প্রহসনের অংশ হিসেবে অপকৌশলের মাধ্যমে তারা ভোট ছাড়াই সংসদের ১৫৩টি অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করে। এই ঘৃণ্য কারসাজির মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বহীন একটি অবৈধ ও স্বেচ্ছাচারী সরকার জগদ্দল পাথরের মতো জাতির কাঁধে চেপে বসেছে। জবাবদিহিতাহীন এ সরকারের দেশ পরিচালনার কোনো নৈতিক অধিকার, ভিত্তি ও এখতিয়ার নেই। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে এমন ন্যক্কারজনক জালিয়াতি করার পর গণতন্ত্র কিংবা জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলার কোনো নৈতিক অধিকারও তাদের নেই।’
উল্লেখ্য, টানা হরতাল-অবরোধ চলাকালে সারা দেশে সহিংসতার মধ্যে দুই মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর সংবাদ গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন খালেদা জিয়া। ৫২ দিন আগে সর্বশেষ গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন তিনি।