সিলেটে আওয়ামী আইনজীবিদের তান্ডব : বিচারক সাংবাদিক লাঞ্চিত

সিলেটে আদালত পাড়ায় আলোকচিত্রী সাংবাদিক নুরুল ইসলামের আ'লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের হামলার প্রতিবাদে সিলেটে কর্মরত ফটো সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে অবস্থান কর্মসূচী
সিলেটে আদালত পাড়ায় আলোকচিত্রী সাংবাদিক নুরুল ইসলামের আ’লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের হামলার প্রতিবাদে সিলেটে কর্মরত ফটো সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে অবস্থান কর্মসূচী

সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেটে হত্যা মামলায় আওয়ামী আইনজীবিদের জামিন না দেয়ায় লাঞ্চিত হয়েছেন বিচারক ও হাকিম। পেশাগত দায়িত্ব পালনে গিয়ে মার খেয়েছেন এক সাংবাদিক। মঙ্গলবার সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৪র্থ আদালতে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়।
আদালত সূত্র জানায়, সিলেটের কোম্পানিগঞ্জে চাঞ্চল্যকর যুবলীগ নেতা আব্দুল আলী হত্যাকান্ডে দাযের করা মামলায আসামী করা হয় সিলেট জেলা বারের তিন আওয়ামী আইজীবিকে। তারা হলেন এডভোকেট মাহফুজুর রহমান, এডভোকেট আজমল আলী ও এডভোকেট হাবিবুর রহমান ভুট্টু। মঙ্গলবার সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ও আমলী ৪র্থ আদালতে এই তিন আইনজীবির জামিন প্রার্থনা করেন অন্য আইনজীবিরা। বিচারিক হাকিম কুদরত ই খোদা ওই তিন আইনজীবির জামিন নাকচ করেন। জামিন না দেওয়ায় সিলেট জেলা বারের আওয়ামী আইনজীবীরা আদালতের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং বিচারককে এজলাস থেকে নেমে যাওয়ার জন্য বলেন। এসময় বিচারক কোম্পানীগঞ্জের জিআরও এ এসআই সোহেলা বেগমকে দিয়ে এসএমপি পুলিশকে ফোন দিয়ে এজলাস থেকে নেমে যান। পরে আইনজীবীরা সবকটি আদালতের বিচারক ও হাকিমদের এজলাস থেকে নামিয়ে দেন এবং কোর্ট বর্জনের ঘোষনা দিয়ে আদালত কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন।
এসময় আদালতে তালা ঝুলানোর ছবি তুলতে গিয়ে দৈনিক উত্তরপূর্ব’র ফটো সাংবাদিক নুরুল ইসলাম আওয়ামী আইনজীবিদের হাতে চরমভাবে লাঞ্চিত হন। আইনজীবিরা তাকে মারপিট করে তার শরীরে ও চোখে গুরুতর জখম করে তার ক্যামেরা কেড়ে নেন। সহকর্মী সাংবাদিকরা পরে আহত নুরুল ইসলামকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যান।
এদিকে দুপুর ১২টায় সকল আদালতের বিচারক এজলাস থেকে নামলেও বিকাল ৫টা পর্যন্ত আদালতে বিচারিক কোন কার্যক্রম হয়নি। এ ঘটনায় সিলেট আদালতে বিচার কার্য ব্যাহত হয়েছে এবং আদালতপাড়ায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
আইনজীবিদের জামিন না দেয়ায় কোর্ট বর্জনের সত্যতা নিশ্চিত করে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সামিউল হক সাংবাদিকদের জানান, জেলা বারের আইনজীবিদের নিয়ে সমিতির বৈঠক চলছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।
আহত ফটো সাংবাদিক নুর্বল ইসলাম জানান, আইনজীবীরা বিচারকের কক্ষে তালা দিতে গেলে আমি ছবি তোলার চেষ্টা করি। এসময় আমাকে তারা মারধর করেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোর্টের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এডভোকেট মাহফুজের জামিন না দেওয়ায় আইনজীবীরা আদালত বর্জন করেন । ফলে বিচারকরা এজলাস থেকে নেমে যান।’
এ ব্যাপারে সিলেট চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফারুক আহমদ জানান, আদালতে আইনজীবীদের হট্রোগোল শুনেছি তবে এসব কিছু আদালত ও আইনজীবীদের ব্যাপার ।
আদালতে হট্টগুল ও সাংবাদিক আহতের ব্যাপারে বিএনপিপন্থী একাধিক সিনিয়ির আইনজীবী জানান, জামিন দেয়া না দেয়া আদালতের এখতিয়ার। তবে আদালতে হট্টগুল করা ঠিক হয়নি।
এ ব্যাপারে এসএমপি’র কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান জানান,আদালতে জামিন না দেয়া নিয়ে হট্টগুল খবর পেয়ে গিয়েছি । তবে এ সকল কিছু আদালতের ব্যাপার ।
গত বছরের ২৪ অক্টোবর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ নেতা পাথর ব্যবসায়ী আব্দুল আলী খুন হন। এ ঘটনায় ২৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে পুলিশ ইতোপূর্বে ১২ জনকে গ্রেফতার করে। খুনের এ ঘটনার নেপথ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও সিলেট জেলা বারের এডভোকেট মাহফুজুর রহমান, এডভোকেট আজমল আলী ও এডভোকেট হাবিবুর রহমান ভুট্টু ছিলেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। পরে তারা হাইকোর্ট থেকে অন্তবর্তীকালীন জামিন নিয়ে আমলী গত ৩ মার্চ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির হলে আদালত তাদের জামিন নাকচ করে কারাগারে প্রেরন করেন। সোমবার সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চাইলে জেলা জজ জামিনের এখতিয়ার আমলী আদালতের বলে তা নিম্ন আদালতে প্রেরন করেন। মঙ্গলবার নিম্ন আদালতে জামিন নাকচ হওয়ায় এসব ঘটনা ঘটে।